‘মেরা নাম জয়ন্ত যাদব হ্যায়, ভুলে তো নেহি না!’ – সৌরভ গাঙ্গুলির মতো করে একথা বোধহয় বলতেই পারেন জয়ন্ত যাদব। নামটা চেনা চেনা ঠেকছে? ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরে কান পাতলে নামটা অবশ্যই চেনা ঠেকবে।
আরো একটা ইংল্যান্ড সিরিজ আসতে চললো ঘরের মাঠে, গত ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে হওয়া ইংল্যান্ড সিরিজের একপ্রকার আবিষ্কারই ছিলেন এই জয়ন্ত যাদব। স্বয়ং কপিল দেবের রাজ্য হরিয়ানার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অক্লান্ত ও দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে যাঁর ডাক এসেছিলো সেবার জাতীয় দলে।
খুব ছোটবেলাতেই এক বিমান দুর্ঘটনায় নিজের মা কে হারানো জয়ন্ত অবশ্য দুই হাত ভরে সেই সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন, যেমনি করে তাঁর দ্বিতীয় মা জ্যোতি যাদব দুই হাত ভরে আগলে মানুষ করেছেন জয়ন্তকে আর প্রানপণ লড়ে গেছেন ছেলে যাতে ক্রিকেটার হন।
সেই ইংল্যান্ড সিরিজে কি করেছিলেন জয়ন্ত যাদব? বোলিং অলরাউন্ডার হিসাবে সুযোগ পেয়েছিলেন সেবার, ডান হাতি ব্যাটিংয়ে তিনটি টেস্টে প্রায় ৭৪ গড়ে করেছিলেন ২২১ রান আর বল হাতে অফ স্পিনে নয়টা উইকেট। প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে নয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শতরান করেছিলেন, সাথে আরেকটা হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসও ছিল।
মুম্বাইয়ের খ্যাতনামা ওয়াঙখেড়েতে বিরাট কোহলির সাথে অষ্টম উইকেটে রেকর্ড পার্টনারশিপেও ছিলেন জয়ন্ত। এত কিছুর পরেও পরবর্তী অস্ট্রেলিয়া সিরিজে আর মাত্র একটি টেস্টে সুযোগ পেলেন এবং সেটিই তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়ে রইলো এখনো অবধি। এরপর অজস্ৰ ম্যাচ ও সিরিজ খেলেছেন ভারতীয় দল, এমনকি ঘরের মাঠের সিরিজের জন্যও কখনো বিবেচিত হলো না জয়ন্তর নামটা।
আরো একটা ইংল্যান্ড সিরিজ দুয়ারে চলে এলো, অস্ট্রেলিয়া সফরে সবার দুরন্ত পারফরমেন্স এর পরে মনে হয়না জয়ন্তর নামটা দল নির্বাচনী সভায় উঠেছিল বলে, কিন্তু উঠতে অবশ্যই পারতো, নিদেনপক্ষে অক্ষর প্যাটেলের জায়গায় তিনি আসতেই পারতেন। জ্যোতি যাদব তো তাঁর সাথে বিমাতৃসুলভ আচরণ কোনোদিন করেননি, ভারতীয় ক্রিকেট কী করলো না তাঁর সাথে বিমাতৃসুলভ আচরণ?
নাকি হরিয়ানা থেকে আসছেন বলে বেশ কিছু মুম্বাই, দিল্লীর খেলোয়াড়দের মতো বারংবার সুযোগ পাওয়া তাঁর কপালেই নেই? কোচ, অধিনায়ক ও কি কোনোদিন ব্যাক করেছেন জয়ন্তকে? উত্তর হয়ত পাওয়া যাবেনা, তাই জয়ন্তরা বরং লোকচক্ষুর আড়ালে হাসি মুখে ওই লাহলিতে রঞ্জি ট্রফিতেই পারফর্ম করে যান, কে জানে কখন আবার সুযোগ আসে। তাহলে সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকা যাক।