সেঞ্চুরির দোরগড়ায় থাকা অবস্থায় একজন ব্যাটার সাধারণত কী করে থাকেন? সিংহভাগ ক্ষেত্রে তিন অঙ্কের ঐ ম্যাজিকাল ফিগারের দিকেই চোখ থাকে ব্যাটারদের। এমন সময়ে সাধারণত আত্মকেন্দ্রিক ক্রিকেটই খেলে থাকেন তাঁরা।
তবে অ্যাশেজের এজবাস্টন টেস্টে ইংল্যান্ডের জো রুট সেঞ্চুরি করেছেন একদম আগ্রাসী ভঙ্গিতে। সেঞ্চুরির আগে দুটি ছয় মেরেছিলেন। দুটিই রিভার্স স্কুপে। একটি প্যাট কামিন্সকে, আরেকটি স্কট বোল্যান্ডকে।
৩০তম টেস্ট সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করার পথে ইংলিশ এ ব্যাটার যেন জানান দিলেন, লাল বলের ক্রিকেটটা ঠিক এভাবেই খেলতে হয়। যেখানে থাকবে আক্রমণাত্মক ও ফলকেন্দ্রিক খেলার অ্যাপ্রোচ।
বেন স্টোকস-ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যুগলবন্দীতে নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেট। ‘বাজবল’ ক্রিকেট। যেখানে ঝুঁকি আছে প্রবল, কিন্তু সাহসী ক্রিকেটের মঞ্চায়নে যে কোনো দলকে ধসিয়ে দেওয়ার সম্ভাব্যতাও রয়েছে।
‘বাজবল’ নামক এ অধ্যায়ে এই অধিক ঝুঁকি নিয়েই শেষ দুই বছরে লাল বলের ক্রিকেটে অদ্ভুত এক তৃপ্ততা পেয়েছে ইংল্যান্ড। সেই ধারাবাহিকতায় এবার অ্যাশেজে বাজবলের ধারা অব্যাহত রেখেছিল ইংল্যান্ড।
২০২১ অ্যাশেজে ৪-০ তে সিরিজ হেরেছিল ইংল্যান্ড। ঘরের মাটিতে তাই এবার বহু বছর বাদে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের দিকে চোখ ইংলিশদের। আর সে যাত্রায় শুরুটা ভালই করেছিল বেন স্টোকসের দল।
জ্যাক ক্রাওলির আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু। তবে ক্রাওলির অমন দারুণ শুরুর পরও এজবাস্টন টেস্টের প্রথম সেশনটা ঠিক ইংল্যান্ডের ছিল না। রান এগিয়েছে বিদ্যুৎ গতিতে। কিন্তু উইকেট পতনও হয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। প্রথম সেশনেই নেই ৩ উইকেট!
মধ্যাহ্ন বিরতির পর ইংল্যান্ড হারায় আরো দুটি উইকেট; হ্যারি ব্রুক ও স্টোকসের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট। ইংল্যান্ডের ইনিংসে তখন নেই অর্ধেক উইকেট।
এমতাবস্থায় দলকে টেনে তোলেন জো রুট। চাপের মুহূর্তেও খেললেন ইতিবাচক আর আক্রমণাত্বক ক্রিকেট। সঙ্গে পেলেন জনি বেয়ারস্টোকে। দুজনেই ছুঁলেন পঞ্চাশের মাইলফলক।
তবে বেয়ারস্টো ৭৮ বলে ৭৮ রান তুলে লায়নের বলে স্টাম্পিং হলে থেমে যায় ১২১ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি মিস করলেও রুট ঠিকই তুলে নেন ব্যক্তিগত শতক। ১৪৫ বলে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩০তম সেঞ্চুরি।
এর মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ বছর পর সেঞ্চুরি পান এ ব্যাটার। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্টে নটিংহাম টেস্টে অজিদের বিপক্ষে তিন অঙ্কের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
সেঞ্চুরি পূরণ করার পর এজবাস্টনের গ্যালারিতে চার ছক্কায় রীতিমত নাচন তুলেছিলেন ইংলিশ এ ব্যাটার। ইংল্যান্ডের সেরা টেস্ট ব্যাটার যে নিজেও বাজবলে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন, সেটিরই একটি প্রামাণ্য চিত্রের চিত্রায়ণ হয় এজবাস্টনে।
শুধু প্রথম ইনিংসে নয়, রুট দ্বিতীয় ইনিংসেও খেলেছেন আক্রমণাত্মক ইনিংস। ৫৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। যার মধ্যে ৫ চার আর এক ছয়ে বাউন্ডারি থেকেই তুলেছেন ২৬ রান।
মজার ব্যাপার হলো, এজবাস্টন টেস্টের চতুর্থ দিনে রুট যখন ব্যাটে নামছেন তখন ইংল্যান্ড ২৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধুঁকছে। এমন সময়ে উইকেটে এসে প্রথম ৭ টি বলের মধ্যে তিনটিতে ‘রিভার্স স্কুপ’ শট মারেন। প্রথমবার কোনো রান না পেলেও পরের দুটি বলে ১০ রান করেন এ ইংলিশ ব্যাটার।
প্যাট কামিন্সের বলে প্রথমে রিভার্স স্কুপ মারার চেষ্টা করেছিলেন। তবে বলটা অফস্টাম্পের কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় ব্যাটে বলে আর সংযোগ ঘটাতে পারেননি রুট।
তবে প্রথম বার না পারলেও পরের ওভারেই ইংলিশ এ ব্যাটার পেয়ে যান মোমেন্টাম। বোল্যান্ডের করা ওভারে তৃতীয় বলে রিভার্স স্কুপের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির মাথার উপর দিয়ে মারেন ছক্কা।
যদিও পুরোপুরি ব্যাটে-বলে সংযোগ হয়নি সে শটটি। তবে পরের বলটাতে একেবারে নিখুঁত টাইমিংয়ে রিভার্স স্কুপ করেন। আগের বলে ৬ তুলে নেওয়া রুট এ যাত্রায় পান চারের দেখা।
টেস্ট ক্রিকেটে ধ্রুপদী ব্যাটার বলেই বিবেচিত হন জো রুট। তবে ইংল্যান্ডের বাজবল ক্রিকেট ঘরানায় নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন এ ইংলিশ ব্যাটার। একটা জানান দিচ্ছেন, বাজবল ক্রিকেটের ক্রিকেটের তিনিও একজন স্বপ্নসারথী।