রাজত্বহীন ‘রোমান’ সম্রাট

জাভি-ইনিয়েস্তারা আর্জেন্টিনায় থাকলে লিওনেল মেসির জাতীয় দলের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতে পারত, কথাটার সঙ্গে দ্বিমত করা কঠিন। মেসির জন্য যোগ্য সঙ্গী খুঁজতে গলদঘর্ম হয়েছেন সেই ম্যারাডোনা থেকে সাবেয়া হয়ে সাম্পাওলি থেকে আজকের স্ক্যালোনি পর্যন্ত সবাই। কিন্তু আর্জেন্টিনার সবসময় একজন জাভি-ইনিয়েস্তাকেই খুঁজতে হয়েছে কেন?

২০০৮ সালের পর জাতীয় দলের হয়ে তিনি খেললে হয়তো নতুন কাউকে আর খুঁজতেই হত না আর্জেন্টিনার। জাভি-ইনিয়েস্তা হাইপোথিসিস প্রতিষ্ঠার বহু আগেই যিনি মেসির সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন। মেসির জন্য তিনি ছিলেন বটবৃক্ষের ছায়ার মতো।

হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে – মাঝমাঠটা একাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। বলের সাথে তাঁর আজন্ম সম্পর্ক। দেখে মনে হত বুটজোড়ায় ফুটবল আকর্ষী চুম্বক লাগিয়েছেন তিনি। যার আবিষ্কারও তাঁর হাতে! আর অদ্ভুতভাবে জন্মদিনটাও মেসির সাথে একই দিনে। ‘নতুন ম্যারাডোনা’ তালিকায় ছিলেন তিনিও। ম্যারাডোনার সাথে যদিও তাঁর খেলার ধরণে বিস্তর ফারাক। পার্থক্য মেসির সাথেও। কিন্তু মেসিকে অর্থবহ করে তোলার সবটুকু গুণ ছিল তাঁর মাঝে।

ক্ল্যাসিক নাম্বার টেনদের দিন ফুরিয়ে গেছে এখন ফুটবলে। রিকেলমে ছিলেন এই ধারার শেষ কয়েকজন প্রতিনিধির একজন। আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের মূলত: শেষ ‘রোমান’ সম্রাট। ছিলেন প্লে মেকার। দশ নম্বর জার্সিকে মহিমান্বিত করেছিলেন যতজন ফুটবলার, তাঁদের মধ্যে হয়তো একজন। টিকিটাকার পুনর্জন্মের বহু আগে থেকেই মাঝমাঠের পাসিং ফুটবলটা রপ্ত করেছিলেন রিকুয়েলমে।

মাঠে খুব বেশি দৌড়াতেন না ঠিকই। কিন্তু বল যেখানে, রিকুয়েলমেকেও পাওয়া যেত সেখানে। আক্ষরিক অর্থে ডিফেন্স চেরা পাস দিতে পারতেন মাঠের যে কোনো প্রান্ত থেকে। গতি, শক্তি, অফুরান প্রাণশক্তি- আধুনিক ফুটবলের এই তিন অপরিহার্য উপাদানের কোনোটিই ছিল না রিকেলমের। কিন্তু ছিল অসম্ভব দূরদর্শীতা। বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা আর গোল করানোর প্রবল নেশা।

১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন কোচ একবার বলেছিলেন, ‘ফুটবল খেলার জন্য আবার দৌড়াতে জানতে হয় কবে থেকে!’ সিজার লুই মেনোত্তির সেই কথাটা বোধহয় মনে প্রাণে মানতেন রিকুয়েলমেও। রীতিমত অংক কষেই যেন একেকটি পাস দিতেন। সময়ের সাথে বদলেছে ফুটবল। কিন্তু পুরোনো মরচে পড়া খেলার ধরণই তাঁর পছন্দ ছিল। সাথে অল্প চোরা গতি মিশিয়ে নিজের খেলাকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্যতম সেরাদের দলে। প্লে-মেকার, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, ডিপ লাইং মিডফিল্ডার- যে কোনো পজিশনেই মানিয়ে নিতে পারতেন। খেলতেন মন উজাড় করে, মাথা খাটিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে।

২০০২ এর মতো ২০০৬ বিশ্বকাপেও গ্রুপ অফ ডেথে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু এবার আর অঘটন নয়। নান্দনিক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে একের পর এক ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল আলবিসেলেস্তেরা। পুরো দলটাকে এক সুতোয় গেঁথেছিলেন হোসে পেকারম্যান। আর সেই দলের প্রাণভোমরা ছিলেন রিকুলমে। গোল করার চেয়ে গোল করাতে বেশি ভালোবাসতেন। আর সেজন্যই পরিসংখ্যান কখনোই রিকেলমের আসল জাত চেনাতে পারে না।

শেষ আটে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক জার্মানি। রবার্তো আয়ালার গোলে এগিয়েও যায় আর্জেন্টিনা। গোলের উৎস সেই হুয়ান রিকেলমেই। আয়ালা তাই গোলের পর দুই হাত উঁচিয়ে রিকুয়েলমের অবদানটাই স্বীকার করেছিলেন। পুরো দলটাই তো কৃতজ্ঞ ওই একজনের ওপর!

৭২ মিনিটে বদলী হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন রিকুয়েলমে। ততক্ষণ পর্যন্ত মাঝমাঠের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে ম্যাচে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনাই। রিকুয়েলমেকে উঠিয়ে নেওয়ার পর যা হওয়ার তাই হল! বল ও মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাকি সময়ে গোল হজম করে বসলো আর্জেন্টিনা। শেষে টাইব্রেকারে হেরে হতাশায় শেষ হল আর্জেন্টিনার আরও এক বিশ্বকাপ মিশন। ম্যাচ শেষে পেকারম্যানের ওই সিদ্ধান্তের ওপরই সব দোষ চাপিয়ে হতাশা উগরে দিলেন রিকেলমে।

রিকুয়েলমের পুরো ক্যারিয়ারটাই এরকমই আক্ষেপের সুরে গাঁথা। ছোট ছোট আফসোস আর অগুনতি ভুলে ভরা। খামখেয়ালি জিনিয়াসরা বোধহয় এমনই হন।

২০০১ সাল। বুয়েনস আইরেসে ম্যারাডোনার সম্মানে আয়োজন করা হয়েছে এক প্রীতি ম্যাচ। লা বোম্বোনেরার স্ট্যান্ডে উপস্থিত আর্জেন্টিনার তখনকার কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। সেদিন ভরা গ্যালারির দুয়োধ্বনি শুনে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল আর্জেন্টাইন কোচকে। রিকেলমেকে অবজ্ঞা করে দলে না নেওয়ার জন্য। এরপর ২০০২ বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর ছাঁটাই হন বিয়েলসা।

এর অনেক বছর পর ম্যারাডোনা দলের কোচ হয়ে যখন আসলেন তখন আবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলেন। দল থেকে শুরুতেই বাদ পড়লেন রিকেলমে। দু’জনের ফুটবল দর্শন নাকি এক বিন্দুতে মেলে না। আর এদিকে নিজের ফুটবলীয় চিন্তা-চেতনার সাথে বিন্দুমাত্র আপোস করবেন না রিকেলমে। সে হোক না দেবতাতুল্য ম্যারাডোনা! দারুণ ফর্মে থাকা রিকুয়েলমে তাই একপ্রকার জেদ ও রাগের বশেই বাধ্য হয়ে অবসর নিয়ে ফেললেন জাতীয় দল থেকে। এরপরের ওই বিশ্বকাপের গল্পটা তো সবারই জানা।

আর্জেন্টিনার দশ নম্বর জার্সির চাপ ক’জন সামলাতে পারে? রিকুয়েলমে পেরেছিলেন। অথচ ঈশ্বরের কাছ থেকে ধারে পাওয়া অমন প্রতিভা নিয়ে রিকেলেমে খেলেছেন মোটে একটি বিশ্বকাপ। সাফল্য বলতে ২০০৮ এর জেতা অলিম্পিকের সোনা। আর দলকে নেতৃত্ব দেওয়া। রিকুয়েলমের মতো ফুটবলারের উচ্চতার কাছে যা অতি নগন্য। পুরো কেরিয়ারটাই এমন অসংখ্য আফসোস আর ‘যদি’, ‘কিন্তুতে’ ভরপুর রোমানের। তার চেয়েও বেশি দীর্ঘশ্বাস আর্জেন্টাইন ও সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীদের মনে। খোদ রিভারপ্লেট সমর্থকেরাও আফসোস করেন আর বলেন ‘ইশ, যদি রিকেলমে এখন থাকত…’

রিকুয়েলমের ফুটবলে হাতেখড়ি আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে। এগারো ভাইবোনের ভেতর সবচেয়ে বড় রিকেলমে অবশ্য চাইলে নিজের ঘরেই গড়ে তুলতে পারতেন একটা দল। বাবা ছিলেন শহরের গ্যাং মেম্বারদের একজন। মা ডাকতেন রোমান নামে। বড় ছেলের সাথে সময়টা তাই একটু বেশিই কাটত মিসেস রোমান সিনিয়রের। পরিবারের দায়িত্বটাও কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল অল্প বয়সেই। ডানপিটে হওয়াটা যেন কপালেই লেখা ছিল রিকুয়েলমের।

১৯ বছর বয়সে যোগ দেন বোকা জুনিয়র্সে। এই ক্লাবেই পার করেছেন খেলোয়াড়ি জীবনের সিংহভাগ। বোকায় খেলেছেন দু’দফায়। প্রথম দফায় ছিলেন বোকার উঠতি তারকাদের একজন। পরেরবার এসেছিলেন তারকা হয়ে। বোকাতে জিতেছেন সম্ভাব্য সব শিরোপাই। তবু রিকেলমের অর্জনের খাতাটা ফাঁকাই! আর এর দায়টা রিকেলমের ওই একরোখা ভাবের ওপরই বর্তায়।

২০০২ বিশ্বকাপে বিয়েলসা ভুল করেছিলেন দলের কাণ্ডারি চিনতে। কিন্তু বার্সেলোনা তো পাকা জহুরি। সেবারই আর্জেন্টিনা রিকেলমেকে তুলে নিয়ে আসলো কাতালুনিয়ায়।

রিকুয়েলমের বার্সায় যোগ দেওয়াকে ঘিরে ন্যু ক্যাম্পে উন্মাদনার একটুও কমতি ছিল না। ইন্টারনেটের যুগটাও তখন শুরু হচ্ছে একটু একটু করে। তাই লাতিন আমেরিকান ফুটবলারের অপরিসীম মেধা আর নিখুঁত পাসিংয়ের কথা অজানা ছিল না বার্সা সমর্থকদের। রিকুয়েলমের বার্সায় যোগ দেওয়াটা ছিল তাই অনেকটা স্বপ্নের মতোই।

কিন্তু সেই স্বপ্ন দু:স্বপ্নে পরিণত হতে সময় নিলো মাত্র এক বছর। মরসুমের শুরু থেকেই তখনকার বার্সা কোচ লুই ফান হালের কাছে তিনি হয়ে উঠলেন ‘অপ্রয়োজনীয়’! তার ফর্মেশনে নাকি রিকুয়েলমের কোনো জায়গা নেই। স্পষ্ট করেই বলতেন ডাচ কোচ।

ইউরোপে পাড়ি জমিয়ে প্রথম বছরেই ব্যর্থ। এরপর লিয়েনে পাড়ি জমালেন স্পেনেরই আরেক ক্লাব, ভিয়ারিয়ালে। এল মাদ্রিগায় রিকুয়েলমেকে রাখা হলো তার মন মতোই। ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনিও দল গড়লেন রিকেলমেকে ঘিরে। কোচের সাথে মতের অমিল হত বটে, কিন্তু এড়িয়ে যেতেন পেলেগ্রিনি। আধুনিক ফুটবলের হাড়ভাঙা ট্রেনিংয়ে বড্ড আপত্তি ছিল রিকুয়েলমের। তাঁকে ছাড়াই চলত ভিয়ারিয়ালের অনুশীলন। রিকুয়েলমের যোগ দেওয়া না দেওয়া নির্ভর করতো একান্তই তাঁর নিজের ওপর। চাইলেই আর্জেন্টিনা পাড়ি জমাতে পারতেন নিজের মায়ের কাছে। যে কোনো সময়। ক্লাবও এড়িয়ে যেত এই বিষয়গুলো।

পেলেগ্রিনি রিকুয়েলমেকে চিনতেন আর্জেন্টিনার ক্লাব সান লরেঞ্জোর কোচ থাকার সময় থেকেই। তিনি জানতেন রিকেলমেকে সামলাতে হলে তাঁকে ছাড় দিতেই হবে। রিকেলমেকে রিকেলমের মতো করে ভালবাসলেই একমাত্র বের করে আনা যাবে তাঁর সেরাটা।

রিকুয়েলমেও কিন্তু নিরাশ করলেন না, প্রতিদান দিতে শুরু করলেন। দু’বছরের মধ্যেই ভিয়ারিয়ালকে নিয়ে গেলেন একেবারে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে। সেই দলে রিকেলমে সহ ছিলেন ডিয়েগো ফোরলানও। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে চূড়ান্ত হতাশ সময় কাটিয়ে ভিয়ারিয়ালে এসে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছিলেন এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারও।

আর সেজন্যই নিজের সাফল্যের পুরো অংশের কৃতিত্বটা এখনও রিকেলমেকেই উৎসর্গ করেন তিনি। ‘রিকুয়েলমে ফুটবল মাঠের শিল্পী, একজন স্ট্রাইকারের স্বপ্ন’- দশ নম্বর জার্সিধারী রোমান সম্রাটের মাহাত্ম্যই ছিল এমন। দলের বাকিদের কাজটা জলের মতো সহজ করে দিতেন তিনি।

কিন্তু গল্পটা যখন রিকেলমের, সেখানে আফসোস থাকবে না তা কী করে হয়! ফুটবল বিধাতা একেকজন ফুটবলারের জন্য আলাদা করে সাজিয়ে রাখেন একেকটা গল্প। রিকেলমের জন্য লিখে রেখেছিলেন যেন কেবলই আক্ষেপের গল্প। সেমিফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করে দলকে নিয়ে যেতে পারেননি ফাইনালে, যেখানে অপেক্ষা করছিল রিকেলমের সাবেক ক্লাব বার্সেলোনা। ‘সব ফুটবল গ্রেটই পেনাল্টি মিস করেন’- ফুটবলের এই প্রবাদবাক্য টাকেই আরেকবার সত্যি করেছিলেন রোমান।

২০০৬ বিশ্বকাপের পর কিন্তু এবার সত্যিই ধৈর্য্য ফুরোলো পেলেগ্রিনিরও। কোচের সাথে ধীরে ধীরে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে একসময় ক্লাব ছাড়তে বাধ্যই হলেন রিকেলমে। ইউরোপের নামকরা সব ক্লাব প্রস্তাব নিয়ে হাজিরও ছিল তাঁকে পেতে। কিন্তু রিকুয়েলমে এবার ইউরোপকে বিদায় বললেন।

অসুস্থ মায়ের সেবা করতে বাড়ির বড় ছেলের মতো ফিরে গেলেন আর্জেন্টিনায়, বোকা জুনিয়র্সে। ২০১৫ সালে ফুটবলকে বিদায় বলার আগে আরেকবার ফিরলেন আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে। শৈশবের ক্লাব তখন দ্বিতীয়স্তরের দল। রিকেলমে টেনে তুলে আনলেন প্রথম স্তরে, অ্যাপারচুরায়। এবার সত্যিই যেন দায়িত্ব ফুরোলো রিকুয়েলমের। বয়সটাও ততোদিনে হয়ে গেছে ৩৭। আরেকটা জীবন সহজ বানিয়ে দেওয়াই তো তাঁর কাজ। দায়িত্ব পালন শেষ, তিনিও বুটজোড়া তুলে রাখলেন।

বিদায় বেলায় তাঁকে নিয়ে পাতার পর পাতা লেখা হয়নি কোথাও। পরিসংখ্যান ছেপে একবারের জন্য ফিরেও দেখা হয়নি তার ক্যারিয়ারকে। আক্ষেপের গল্প যে সাধারণের মুখে রোচে না। মোটা দাগের সাফল্যের গল্প পড়তে চায় লোকে। রিকুয়েলমের গল্পে যে সেসব একদমই নেই।

পরিসংখ্যানের মাপকাঠি দিয়ে তো তাকে বিচার করার জো নেই। ফুটবল তো অনেকেই খেলেন। ফুটবলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন সবাই। কিন্তু ফুটবলকে সুন্দর করতে পারেন হাতে গোনা কয়েকজন। ফুটবলের রঙ বাহারে তুলির আঁচড় দেওয়ার ক্ষমতাই বা থাকে ক’জনের? হাতে গোনা কয়েকজনই পেরেছিলেন বা পারছেন বা আগামীতে পারবেন। হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে ছিলেন সেই তাঁদেরই একজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link