অধিনায়কত্বের চাপ, শিরোপা ধরে রাখার মিশন। এই দুই চাপ নিয়েই এবারের বিপিএল শুরু করেছিলেন লিটন দাস। শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি। দল জিতেছে, কিন্তু হাসেনি তাঁর ব্যাট। প্রশ্ন তাই উঠেছিল, লিটন কি তবে নেতৃত্বের চাপে নুয়ে পড়ছেন? রাউন্ড রবিন লিগেই লিটন সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তবে নামটা যখন লিটন, তখন বুঝি প্রত্যাশাটা একটু বেশিই থাকে।
কোয়ালিফায়ারের বড় ম্যাচে এবার সেই প্রত্যাশাটাই পূরণ করলেন এ ব্যাটার। পূরণ নয়, বলাই বাহুল্য ছাপিয়ে গেলেন। নিশামের তাণ্ডবে প্রথম ইনিংস শেষে যখন রংপুর শিবিরে হাসি ফুটেছে, ব্যাটিংয়ে নেমে সেই হাসিই ক্রমে বিষণ্নতায় রূপান্তর করেছিলেন লিটন দাস। কারণ তাঁর ৮৩ রানের ইনিংসেই যে ম্লান হয়েছে রংপুরের ফাইনাল যাত্রা।
লক্ষ্যটা মোটেই হাতের নাগালে ছিল না। বরং বড় ম্যাচের উত্তেজনায় ১৮৬ রানের লক্ষ্যটাই ছিল পাহাড়সম। তবে ইনিংস জুড়ে লিটন ছিলেন বলেই পাহাড়সম সেই সংগ্রহের চাপে পিষ্ট হয়নি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শুরুটা অবশ্য রয়েশয়েই শুরু করেছিলেন। প্রথম বাউন্ডারি বের করতে সময় নিয়েছিলেন ১১ টা বল।
এরপর অবশ্য খুব আক্রমণাত্বক অ্যাপ্রোচে যাননি। বরং ইনিংস বিল্ড আপের মাধ্যমে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রয়েশয়ে ব্যাটিং করলেও নিয়মিত বিরতিতে চার-ছক্কা ঠিকই মেরেছেন। তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটি গড়েছেন। হৃদয় ফিফটি পাওয়ার যাত্রায় দারুণ সঙ্গ দেন। এরপর তবে যখন দল সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে, লিটনও ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন তখনই। ইনিংসের ১৩ম ওভারে জিমি নিশামের টানা ২ বলে চার হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত অর্ধশতকের গণ্ডি টপকান লিটনও।
এরপর হৃদয় ফিরে গেলেও কুমিল্লা রানগতি থামতে দেননি এ ওপেনার। উল্টো ফিফটি পূরণের পর ব্যাট হাতে আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেন লিটন। আবু হায়দার রনি থেকে শুরু করে মোহাম্মদ নবী কিংবা শেখ মেহেদী, কেউই লিটনের তাণ্ডবের সামনে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। লিটন অবশ্য শেষ পর্যন্ত নিজেও অপরাজিত থাকতে পারেননি। ৯ চার আর ৪ ছক্কায় ৫৭ বলে ৮৩ রান করে আউট হন তিনি। তবে ততক্ষণে ফাইনালের সুবাতাস পেয়ে গেছে কুমিল্লা।
কোয়ালিফায়ারের আগে নিজেই নিজের লক্ষ্য জানিয়েছিলেন, নামের পাশে অন্তত ৪০০ রান রেখে টুর্নামেন্ট শেষ করতে চান লিটন। ৮৩ রানের এ ইনিংসে এরই মধ্যে ৩৭৫ রান করে ফেলেছেন এ ব্যাটার। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় চলে এসেছেন চার নম্বরে। অথচ টুর্নামেন্টের শুরুতে রীতিমত হারিয়ে খুজছিলেন তিনি। তবে শুরুর ব্যর্থতা ভুলে ফিরলেন মোক্ষম সময়েই। হয়ে উঠলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ফাইনালের ওঠার পথযাত্রার নায়ক। এটাকে ‘লিটন থিংস’ বলে খুব একটা ভুল বলা হবে কি?