বলা হয় জীবনে খারাপ সময় না আসলে সেটা কোনো জীবনই না। খারাপ সময়কে কাটিয়ে সফলতার মঞ্চে উঠে আসার চেয়ে বড় এডভেঞ্চার আর কি হতে পারে? সফল ব্যক্তির জীবনেও উত্থান-পতন আছে, খারাপ সময় আসে। তবে ধৈর্য্য আর সাধনা দিয়ে সেটিকে মুছে ফেলে সফলতা অর্জনের চেয়ে বোধহয় রোমাঞ্চকর কিছু নেই।
তবে বিরাটের খারাপ সময়টা যেনো কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশ্বসেরা তারকাখ্যাতি অর্জন করা সেই বিরাট কোহলি যেনো কোথায় হারিয়ে গেছেন! একের পর এক রেকর্ডে নাম লেখানো সেই বিরাট এখন অনেকটাই নিষ্প্রভ। সেঞ্চুরি খরা, বিতর্ক-সমালোচনা সব মিলিয়ে লম্বা সময় ধরেই ব্যাকফুটে ভারতের এই তারকা!
বছর দুয়েকের বেশি সময় ধরে দেখা নেই সেঞ্চুরির। দুই বছর আগেও শচীন টেন্ডুলকারের একশো সেঞ্চুরি ছিলো হুমকির মুখে। ভাবা হচ্ছিলো শচীনের এই রেকর্ড ভেঙে ফেলবেন বিরাট। এরপরই বছর দু’য়ের বেশি সেঞ্চুরিহীন বিরাট। নামটা বিরাট কোহলি বলেই সেঞ্চুরি খরা নিয়ে এতো আলোচনা-সমালোচনা!
গেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শেষেই সরে দাঁড়ান রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব থেকে। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই ইঙ্গিত দেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন তিনি। বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ান বিরাট। কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে চান!
এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ শেষেই ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় বিরাটকে! টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হার, র্যাঙ্কিংয়ে নিজের অবনতি, অধিনায়কত্ব হারানো – সব মিলিয়ে বেশ খারাপ সময়ই পার করছিলেন বিরাট। ব্যাট হাতেও ছিলেন না সেরা রিদমে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলার আগে সবার প্রত্যাশা ছিলো এবার হয়তো দেখা যাবে চিরচেনা বিরাটকে।
তবে তা হয়নি! বরং নিজের শততম টেস্টেও ফিরতে হয়েছে ব্যর্থ হাতে। খারাপ সময়টা যেনো পিছু ছাড়ছে না এই তারকার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন মাত্র ১৩ রান!
আর এর মধ্যে দিয়ে গেলো পাঁচ বছরে প্রথমবার টেস্টে ব্যাটিং গড় পঞ্চাশের নিচে নামলো বিরাটের! তিন ফরম্যাটেই কমপক্ষে এক হাজার রান করা ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র বিরাট কোহলির তিন ফরম্যাটের ব্যাটিং গড় ছিলো পঞ্চাশের বেশি!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৬ রান করার পর বিরাটের বর্তমান ব্যাটিং গড় ৪৯.৯৫! মাত্র ৭ রানের জন্য পঞ্চাশের নিচে আসে বিরাটে টেস্ট ব্যাটিং গড়! ৫০ এর কোটায় গড় রাখতে হলে দ্বিতীয় টেস্টে বিরাটকে করতে হতো ৪৩ রান, সেখানে তিনি করেছেন দুই ইনিংসে মোটে ৩৬ রান। মাত্র সাত রানের জন্য যেনো অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছেন বিরাট!
ব্যাঙ্গালুরুতে গোলাপি বলের টেস্টে দুই ইনিংসেই স্পিনারের বিপক্ষে আউট হন বিরাট। দুই ইনিংসেই একই ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে আউট হওয়ায় বিরাটের উপর চটেছেন সাবেক কিংবদন্তি ভারতীয় তারকা ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার। তাঁর মতে, ‘এই ধরনের শট খেলা বন্ধ না করলে তিনি বার বার এভাবেই আউট হবেন। পেছনের পায়ে না খেলে সামনের পায়ে খেলার পরামর্শ দেন সুনিল।
তিন ফরম্যাটে এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পঞ্চাশের বেশি ব্যাটিং গড় একমাত্র নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়ের। যদিও তিনি খেলেছেন মোটে ৩০ ম্যাচ! ব্যাঙ্গালুরু টেস্টের আগে একশো টেস্টে বিরাটের ব্যাটিং গড় ছিলো ৫০.৩৫! দেশের হয়ে ব্যাট করতে নেমে তিন ফরম্যাটে কখনোই বিরাটের গড় পঞ্চাশের নিচে নামেনি!
গেলো ১৮ টেস্টে সেঞ্চুরিহীন বিরাট ১০১ টেস্টে ৪৯.৯৬ গড়ে করেছেন ৮০৪৩ রান। অপরদিকে ২৬০ ওয়ানডেতে ৫৮.০৭ ও টি-টোয়েন্টিতে ৯৭ ম্যাচে ব্যাটিং গড় ৫১.৫!