বিজয়গাঁথার কাণ্ডারি

বাংলাদেশ তবু ছেড়েছে। ক্যাচ ছেড়েছে। সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের ওপেনার সিদরা আমিন অন্তত চারবার বেঁচে গেছেন। আগের ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশ দারুণ ফিল্ডিং করেছে। আজকে গড়বড়! তবে হ্যাঁ, ক্যাচ ছাড়লেও ওরা হাল ছাড়েনি। ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে, নিগার সুলতানা বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে দুই লেগ স্পিনার রুমানা ও ফাহিমাকে কাজে লাগিয়েছেন, শেষ দিকের স্নায়ুর চাপকে জয় করেছে দল এবং শেষ পর্যন্ত লেগে থেকে প্রত্যাশিত জয় নিয়েই মেতে উঠেছে আনন্দ নৃত্যে!

৩০ ওভার যখন পেরিয়ে গেছে, পাকিস্তান উইকেট হারিয়েছে স্রেফ একটি। বাংলাদেশের কিপার চিৎকার করে বলছিলেন, ‘সহজে ছেড়ে দিও না, লেগে থাকো…’

বাংলাদেশ তবু ছেড়েছে। ক্যাচ ছেড়েছে। সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের ওপেনার সিদরা আমিন অন্তত চারবার বেঁচে গেছেন। আগের ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশ দারুণ ফিল্ডিং করেছে। আজকে গড়বড়!

তবে হ্যাঁ, ক্যাচ ছাড়লেও ওরা হাল ছাড়েনি। ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে, নিগার সুলতানা বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে দুই লেগ স্পিনার রুমানা ও ফাহিমাকে কাজে লাগিয়েছেন, শেষ দিকের স্নায়ুর চাপকে জয় করেছে দল এবং শেষ পর্যন্ত লেগে থেকে প্রত্যাশিত জয় নিয়েই মেতে উঠেছে আনন্দ নৃত্যে!

প্রত্যাশিত জয়, কারণ বিশ্বকাপে এই ম্যাচটিকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশি আশা ছিল। আমি নিজেও কালকে লিখেছিলাম, ‘বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আসল ম্যাচই এটি।’ তবে সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দেওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবসময় হয় না, আশাভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয় বারবার। এবার অন্তত হয়নি। প্রথম বিশ্বকাপ অভিযানে বাংলাদেশের প্রথম জয় পাকিস্তানকে হারিয়েই।

শক্তি-সামর্থ্যে দুই দল কাছাকাছি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি জয়ও পাকিস্তানের বিপক্ষেই। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চ, প্রত্যাশার চাপ মিলিয়েই হয়তো আজকে খুব কম্পোজড পারফরম্যান্স দিতে পারেনি মেয়েরা। তবে ওই যে, হাল ছাড়া যাবে না, এই মন্ত্রে আর একটি তাড়নায় এসেছে জয়।

কি সেই তাড়না? প্রতিপক্ষ যে পাকিস্তান! ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে ও পরে প্রেস কনফারেন্সে প্লেয়ার অব দা ম্যাচ ফাহিমা খাতুন বারবারই বললেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাড়তি একটা রোমাঞ্চ ও তাগিদ থাকে তাদের, তীব্র ক্ষুধা থাকে…
এই ম্যাচটি তাই জিততেই হতো।

পাকিস্তানকে এই নিয়ে টানা তিন ওয়ানডেতে হারাল বাংলাদেশ। তিনটিই দেশের বাইরে- লাহোর, হারারে ও হ্যামিল্টন। জয় সবসময় দলীয় প্রচেষ্টাতেই আসে। তবু আলাদা করে কয়েকজনের কথা বলতেই হয়।

  • ফারজানা হক পিংকি

বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন ৫২, বিশ্বকাপে দেশের প্রথম ফিফটি। এবার আরেকটু এগিয়ে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ৭১ রানের ইনিংস। তার নবম ওয়ানডে ফিফটি।

  • শারমিন আক্তার সুপ্তা

আগের ম্যাচে একাদশে রাখা হয়নি তাকে। বৃষ্টিতে সেদিন ম্যাচের ওভার কমে আসে। শারমিন রান তুলতে একটু সময় নেন অনেক সময়, ২৭ ওভারের ম্যাচে তাকে বাইরে রাখা হয়েছিল। আজকে ৬ চারে ৪৪ রানের ইনিংসে তিনি দেখালেন, দ্রুত রানও তুলতে পারেন। নিজের জন্মদিনে পেলেন পাকিস্তান বধের স্বাদ।

  • নিগার সুলতানা জ্যোতি

মাঠের ভেতরে-বাইরে দারুণ নেতৃত্ব দিয়ে ছাপ রাখছিলেন। কিন্তু প্রয়োজন ছিল তার ব্যাটে রান। আজকে সেই দাবি বেশ কিছুটা মেটালেন। ফিফটি পাওয়া হয়নি ৪৬ রানে আউট হওয়ায়, তবে ফারজানার সঙ্গে তার ৯৬ রানের জুটিই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয় রেকর্ড রানের পথে।

অধিনায়কত্ব বরাবরেরর মতোই ছিল ভালো। পাকিস্তান ভালো শুরু করেছে, ৩৭ ওভারে স্রেফ এক উইকেট পড়েছে, বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ভুল হয়েছে কিছু। তবু মাঠে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ মরে যায়নি। মেয়েরা প্রচুর কথা বলেছে, সক্রিয় ছিল। সেটির কৃতিত্ব অধিনায়কের তো প্রাপ্যই। আর শেষ কয়েক ওভারে দারুণ সব বোলিং পরিবর্তন তো ছিলই।

  • ফাহিমা খাতুন

প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে ছিলেন না। হ্যামিল্টনের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আক্রমণত্মক অপশন হিসেবে একাদশে আনা হয় লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডারকে। ব্যাটিংয়ে তিনি দ্রুত রান তুলতে পারেন, আজকে আউট প্রথম বলেই। তবে বল হাতে দাবি পুরোপুরি মিটিয়েছেন। শেষ দিকে তিনিই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়ে প্লেয়ার অব দা ম্যাচ।

  • রুমানা আহমেদ

ব্যাট হাতে খুব ভালো করতে পারছেন না। আজকেও শুরুটা ভালো করে শেষ করতে পারেননি। তবে লেগ স্পিন দিয়ে আজ পুষিয়ে দিয়েছেন। প্রথম ব্রেুক থ্রু তিনি এনে দিয়েছেন দলকে, পরে শেষ দিকে ফিরে আউট করেছেন বিপজ্জনক নিদা দারকে।

বিশ্বকাপের সামনের পথচলার জন্য এই জয়টা খুব দরকার ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভালো বোলিং করে হারতে হয়েছে, পরের ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ঝড়ো শুরুর পর আর কিছুই ঠিক হয়নি। আজকে ধরা দিল প্রত্যাশার জয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কঠিন চারটি প্রতিপক্ষ সামনে। ফল পক্ষে আসার বাস্তব সম্ভাবনা খুবই সামান্য। তবে উপভোগ করতে শুরু করলে কত কিছুই তো হয় ক্রিকেটে।

আজকে জয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে আমাদের মেয়েরা উপভোগের মঞ্চে উঠে গেল।

আর হ্যাঁ, এই মেয়েদের সবারই আলাদা গল্প আছে। সবাই সমাজের সেই অংশ থেকে উঠে এসেছেন, যেখান থেকে উঠে আসতে হয় অনেক লড়াই করে। কম-বেশি অনেকের জানা সেসব। আজকে আর সেসব বলা জরুরি নয়। তবে বিশ্বমঞ্চে ওদের দৃপ্ত পদচারণা, ওদের একেকটি জয় আমাদের সমাজ ব্যবস্থার প্রতি বার্তা, যারা ভ্রকুটি করেছেন বা করেন, তাদের দিকে একেকটি তীর।

– ফেসবুক থেকে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...