কিছুই করতে হয়নি তাকে ফাইনালে। সুযোগটাই তিনি পাননি। দলের বাকি বোলাররা আসলে শিরোপা ঘরে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করে দিয়েছেন। বিশেষ করে মোহাম্মদ সিরাজ। তবুও টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কারটা পেয়েছেন কুলদ্বীপ যাদব।
তবে তিনি যা করেছেন, তাতে ভারতের ফাইনালে যাওয়ার পথটা হয়েছে মসৃণ। ঠিক স্বচ্ছ কাঁচের উপর গড়িয়ে চলা মার্বেলের মত। ৯ খানা উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে গুরুত্বপূর্ণ দুই ম্যাচেই জ্বলে উঠেছিলেন বা-হাতি এই বোলার। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটায়। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইফারের দেখা তিনি পেয়েছিলেন সেদিন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছিল ভারত। ২২৮ রানের বিশাল বড় এক জয়। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ একা হাতেই ধসিয়ে দিয়েছিলেন কুলদ্বীপ যাদব। বাবর আজমরা তার বিপক্ষে রীতিমত ছিলেন অসহায়। সুপার ফোরের সে ম্যাচটি ছিল ভারতের জন্যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিপক্ষে পারফরম করবার একটা চাপ থাকে সবসময়।
সেই চাপ সামলে তিনি দলকে এনে দিয়েছিলেন স্বস্তির জয়। মাত্র ২৫ রান খরচায় নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার ছিল না সেটি। তবে ক্যারিয়ারের অন্যতম উজ্জ্বল এক দিন ছিল নিশ্চয়ই। ফখর জামান থেকে আগা সালমান তুখোড় সব ব্যাটারদের নিজের ঝুলিতে নিয়েছিলেন কুলদ্বীপ। তবে সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি।
পরবর্তী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও তার বোলিং ভারতকে এনে দিয়েছিল জয়। সে ম্যাচে কুলদ্বীপের শিকার ৪ উইকেট। ৪৩ রান খরচ হয়েছিল সেদিন। স্বল্প রানের পুঁজি রক্ষা করতে হতো। সাদিরা সামাভিক্রামা, চারিথ আসালাঙ্কার মত ব্যাটারদের ফিরিয়ে সে কাজটা সহজই করে দিয়েছিলেন কুলদ্বীপ। শেষ দিকে জয়কে তরান্বিত করেছেন কাসুন রাজিথা ও মাথিশা পাথিরানার উইকেট তুলে নিয়ে।
মূলত এই দুই ইনিংসেই বল হাতে জয় পেতে অবদান রেখেছেন কুলদ্বীপ যাদব। স্বল্প সময়ের জন্যে বনে যান টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার। যদিও শেষ অবধি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ বোলার আর থাকা হয়নি তার। মাথিশা পাথিরানা সেই জায়গাটা দখল করে নেন।
তবে পাঁচ ম্যাচ খেলা কুলদ্বীপ চার ইনিংসে বল করবার সুযোগ পান। ফাইনালের ইনিংসে তিনি তেমন কিছু করবার সুযোগ পাননি। নিষ্প্রভ কেটেছে তার নেপালের বিপক্ষের বোলিং ইনিংসটি। তবে দলের যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, ঠিক তখনই নিজ আলোয় জ্বলে ওঠেন কুলদ্বীপ। দলকে দুই গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টাই করেন এই চায়নাম্যান।
আর ঠিক সে কারণেই টুর্নামেন্ট সেরা পুরষ্কার শোভা পেয়েছে তার হাতে। তবে এবারের এশিয়া কাপে কুলদ্বীপের এমন পারফরমেন্স বেশ আত্মবিশ্বাস জোগাবে খোদ কুলদ্বীপসহ গোটা দলকে। কেননা সামনেই তো ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেখানে আরও খানিকটা কার্য্যকর হয়ে উঠবেন কুলদ্বীপ সেটাই তো প্রত্যাশা।
বিশ্বকাপে পারফরম করতে নিশ্চয়ই মুখিয়ে আছেন কুলদ্বীপ যাদব। ঠিক সে কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর খেটেছেন এই চায়নাম্যান। ঘাম ঝড়িয়ে নিজের সেরা রুপটা নিয়েই হাজির হতে চেয়েছেন বিশ্বকাপে। ছন্দময় বোলিংটা করবার চেষ্টা করেছেন। একটানা লাইন-লেন্থ বজায় রেখে ভাল বল করে যাওয়ার অনুশীলন করেছেন।
উইকেট শিকারের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের রানের লাগাম টেনে ধরবার দক্ষতাও রপ্ত করতে চেয়েছেন। সেসবের সুফল তো এশিয়া কাপেও পেলেন তিনি। ১১.৪৪ গড়ে ৯ উইকেট। ইকোনমি রেট ছিল মাত্র ৩.৬১। বল হাতে দলের যখন যা প্রয়োজন, তা উপহার দেওয়ার জন্যেই বেশ উদগ্রীব কুলদ্বীপ। এশিয়া কাপের এই ধারা এখন স্রেফ বিশ্বকাপ অবধি নিয়ে যাওয়ার পালা।