বাংলাদেশ থেকে উত্থান হওয়া এক দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার ফের এসেছেন বাংলাদেশে। এবার ভিন্ন এক উত্থানের আসায়। এসেছেন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনে প্রো লাইসেন্সের ক্লাসে অংশ নিতে। গল্পটা দক্ষিণ কোরিয়ান কিংবদন্তি ফুটবলার লি চুন সোর। যার ক্যারিয়ারের উড়তে শুরু করেছিলো এই বাংলার মাঠেই। সেখান থেকে তিনি খেলেছিলেন বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল অবধি। একটু শুরু থেকেই শুরু করা যাক।
দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুল ফুটবলে নিজের প্রতিভা মেলে ধরা শুরু করেন ক্ষুদে লি চুং সো। ধীরে ধীরে গুটিগুটি পায়ে তিনি এগোতে থাকেন বড় একজন ফুটবলার হওয়ার পথে। স্বপ্নের পাখাটা তিনি মেলেন বাংলাদেশে হওয়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের দ্বিতীয় আসরে।
দক্ষিণ কোরিয়ান অনূর্ধ্ব ২০ দলের প্রতিনিধি হয়ে সেবার ঢাকায় এসেছিলেন লি চুন সো। স্বপ্ন বিভোর এক তরুণ ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলেছেন নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। তখন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামটা পুরোদস্তুর ফুটবল স্টেডিয়ামও ছিল না।
ঘটনাটা ১৯৯৯ সালের। গোল্ড কাপের দ্বিতীয় আসরে গ্রুপ বি এর প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে খেলেন সো। সেই ম্যাচে একাই করেছিলেন চার চারটি গোল। থাইল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২৩ দল পাত্তাই পায়নি। একা সো পুরো দুমড়ে মুছড়ে দিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের রক্ষণ। সেই ম্যাচে কোরিয়ান যুবারা সাতবার জালে বল জড়িয়েছিলেন। সেই থেকেই উত্থানের শুরু লি চুন সোর। ২০০১ সাল পর্যন্ত কলেজ দলে খেলে ২০০২ সালে যোগ দিয়েছিলেন কোরিয়ান এক ক্লাবে।
২০০২ বিশ্বকাপটা আয়োজিত হয়েছিলো সোর দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায়। গোল্ড কাপে অসাধারণ পারফর্ম করে সাত গোল করা লি চুন সো জায়গা পেয়ে গেলেন বিশ্বকাপ দলে। আহা স্বপ্ন! স্বপ্ন আর বাস্তবের ফারাক তখন ঠিক হইয়ত আন্দাজ করতে পারেননি সো।
তার থেকেও হয়ত তিনি বিশ্বাস করতে পারেছিলেন না বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলার সেই মূহূর্ত। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে সবাইকে রীতিমত অবাক করে দক্ষিণ কোরিয়া পৌঁছে গিয়েছিলো সেমিফাইনালে। গ্রুপ-ডি চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট কেটেছিলো কোরিয়া। শক্তিশালী পর্তুগালের বিপক্ষেও জয় পেয়েছিলো তাঁরা।
সেমিফাইনালে যাওয়ার আগে দক্ষিণ কোরিয়া সেবার হারিয়েছিলো ফুটবলের দুই পরাশক্তি দল ইতালি ও স্পেনকে। স্পেনকে যদিও তাঁরা হারিয়েছিলো টাইব্রেকারে। তারপর তাঁদের মুখোমুখি হয় জায়েন্ট দল জার্মানি।
রুপকথার গল্পে সেদিন বাঁধ সেঁধেছিলেন জার্মানির গোলকিপার অলিভার কান। তাঁর অসাধারণ এক সেভ দক্ষিণ কোরিয়ার রুপকথার গল্পটার ইতি ঘটায়। সেই টুর্নামেন্টের সবগুলো ম্যাচ খেলেছিলেন লি চুং সো। যদিও তিনি গোলের দেখা পাননি। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের উড়ন্ত পাখায় যুক্ত হয় আরো একটি পালক।
এরপর ডাক এসে যায় স্প্যানিশ লিগে। সেখানকার ক্লাব রিয়াল সোসিয়াদাদের হয়ে দুইটি মৌসুম কাটিয়ে আবার ফিরেছিলেন ঘরোয়া লিগে। সেখানে নিয়মিত খেলে আবার সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্বকাপ দলে।
২০০৬ বিশ্বকাপে একটি গোল করেছিলেন টোগোর বিপক্ষে। সেই ম্যাচটা ১-০ ব্যাবধানে জিতেছিলো দক্ষিণ কোরিয়া। দূর্ভাগ্যবশত সেবার গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি লি চুং সোর দক্ষিণ কোরিয়া।
খেলোয়াড়ী ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নিয়েছেন সো ২০১৫ সালে। এরপর থেকে হয়ত পরিকল্পনা করছিলেন কি করে যুক্ত হওয়া যায় ফুটবলের সাথে। সেই পরিকল্পনা থেকেই হয়ত তিনি সিদ্ধান্ত নেন হবেন কোচ। সেই পরিকল্পনা থেকেই তিনি এখন বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত হওয়া এএফসি আয়োজিত প্রো লাইসেন্সের ক্লাসে মনোযোগ দিচ্ছেন লি চুন সো। তিনি বেশ অবাক ২২ বছর আগে দেখে যাওয়া বাংলাদেশের সাথে এবারের বাংলাদেশের তফাৎ দেখে।
আগামী দিনে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছেও রয়েছে তাঁর। এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন দুইবার বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড় লি চুন সো। তিনি তাঁর সকল অভিজ্ঞতা নিঙড়ে দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সো। সুযোগ পেলে এই বাংলার মাটিতে তাঁর হওয়া উত্থানের প্রতিদান হয়ত দিতে চান সো।