অশ্বিন ও নীতি-নৈতিকতার পাঠ

ভারতের গত দশকে সেরা টেস্ট স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দিল্লী ক্যাপিটালসেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ তিনি। কিন্তু ভারতের এই অভিজ্ঞ স্পিনারের বিপক্ষে খেলাধুলার চেতনায় আঘাত হানার অভিযোগ অনেক বারই উঠেছে। ৩৫ বছর বয়সী এই স্পিনার গত সপ্তাহে আরো একটি বির্তকের জন্ম দিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন এটিকে লজ্জাজনক কাজ বলে অভিহিত করেছেন। ঘটনাটি ঘটে দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচে। উইকেটে ছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও ঋষভ পান্ত। রান তাড়া করতে নেমে ১৯ তম ওভারে পয়েন্টে খেলেছিলেন পান্ত।

দু’জন এক রান হয়ে যাওয়ার পর ফিল্ডারের থ্রো ব্যাটসম্যানের গায়ে লেগে অন্য দিকে যাওয়ার পর ওভার থ্রো থেকে আবার রান নেন অশ্বিন। এরপরই ইয়ন মরগ্যান ও টিম সাউদির সাথে বিতর্কে জড়ান এই স্পিনার। এরপরের ওভারে আউট হয়ে ফেরার পথে আবার টিম সাউদির সাথে বিতর্কে জড়ান অশ্বিন।

ম্যাচ শেষে কলকাতার উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিক জানিয়েছিলেন, রান নেওয়ার জন্য অশ্বিনই প্রথমে ডাক দিয়েছিলেন পান্তকে। তবে ঘটনা মাঠেই শেষ হয়নি। এরপরই ওয়ার্ন সহ অনেকেই টুইটারে অশ্বিনের সমালোচনা করেন। কিন্তু আইপিএলের প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, এমন ওভার থ্রো থেকে রান নিতে কোনো বাঁধা নেই।

তবে সাধারণতো রান নেন না ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু ওভারথ্রো থেকে বাউন্ডারি হয়ে গেলে তখন বাধ্য হয়েই চার রান দেন আম্পায়াররা। তাই বৈধ আইনে রান নেওয়ার পর সমালোচনা ভালো ভাবে নিতে পারেননি অশ্বিন। টুইটারে একের পর এক পোস্টে তিনি দাঁড়িয়েছেন নিজের পক্ষেই।

এক টুইটে তিনি বলেন, ‘আমি তো মারামারি করেছি না। যেটা বৈধ সেটাই করতে চেয়েছি। আমার শিক্ষক ও মা বাবা এটাই শিখিয়েছেন। আপনারাও আপনাদের সন্তানদের এমন শিক্ষা দিন। ক্রিকেটে কোনটা ভালো বা কোনটা মন্দ মরগ্যান বা সাউদি নিজেরা নিজেদের ইচ্ছা মত বিশ্বাস করতে পারে। তবে নৈতিকতায় এগিয়ে থাকার অধিকার নেই তাদের। অবমাননাকর কোনো শব্দ ব্যবহার করারও অধিকার নেই।’

নিজের পক্ষে দাঁড়িয়ে অশ্বিন বলেন, ‘এরকম রান নিতে না চাইলে সবাই আপনাকে ভালো বলবে। নন-স্ট্রাইকারকে সতর্ক না করে আউট করলে খারাপ বলবে। এসব বলে সবাইকে বিভ্রান্ত করবেন না। যারা এসব করছে তাঁরা অন্য কিছু করে আয় করে, তাঁরা অন্য কোনো জায়গায় সফল। মাঠে সব কিছু উজাড় করে দিন, আইন মেনে খেলুন। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলান। আমার কাছে ক্রিকেটের একমাত্র চেতনা এটাই।’

সেই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে অশ্বিন বলেন, ‘ফিল্ডার থ্রো করার সাথে সাথেই আমি রান নেওয়ার জন্য দৌড় দিয়েছি, বল যে পান্তের গায়ে লেগেছিল, সেটা আমি দেখিনি। তবে দেখতে পেলেও রানটা নিতাম। কারণ, এটা আমার অধিকার।’

এর আগে মানকাড বা নন-স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে রানআউট করেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন অশ্বিন। তবে ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী এমন আউট করা বৈধ। তবে অশ্বিন অবশ্য সব সময়ই বলে এসেছেন এমন রান আউট নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকা উচিত নয়। এটা সবারই করা উচিত।

দীর্ঘ দিন পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন অশ্বিন। ভারতের কিংবদন্তি স্পিনার অনিল কুম্বলে মনে করেন বিশ্বকাপে ভারতের স্পিন অস্ত্র হতে পারেন অশ্বিন। আর এই ঘটনার পর কুম্বলেও অশ্বিনকে নৈতিকতা সম্পূর্ন ক্রিকেটারই বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি অশ্বিনের ভিতর নিজেকে অনেকটাই দেখতে পাই। সে একজন অসাধারণ ক্রিকেটার এবং অনেক কাজেই নৈতিকতা সম্পূর্ন। সে আমার চেয়ে অনেক ভালো ব্যাটসম্যান। জুটি ভাঙা এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেওয়ার দক্ষতার সাথে, অশ্বিন সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্থর পিচে ভারতের স্পিন অস্ত্র হতে পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link