সাও পাওলোর ছোট্ট শিশুটি এখন ফুটবলের রাজপুত্র। বাবা নিজেও ছিলেন একজন ফুটবলার। তিনি কিছু না করতে পারায় তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু তিনি কি জানতেন ছেলেটি এক সময় ফুটবল বিশ্ব কাঁপাবে? তাঁর দিকে যে গোটা ফুটবল বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে?
সাও পাওলোর রাজপুত্র আর কেউ নন, তিনি নেইমার জুনিয়র। ২০০৪ সালে সানতোস এ খেলাকালীন এক সাক্ষাৎকারে নেইমারকে দেখা যায়। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এত পুরস্কার দিয়ে কি করবেন? তিনি বলেন, ‘এগুলো আমার পরিবারের জন্য।’
২০১০ সালে ব্রাজিলের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই তিনি গোল দিয়ে শুরু করেন। ধারাবাহিক ভাবে তরুণ নেইমার এখনকার ফুটবল বিশ্বের তারকা। ২০১৪ সালে এই নেইমারকে কেন্দ্র করে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল ব্রাজিল। সমর্থকরা আশায় ছিলেন ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমারকে নিয়ে।
সে বার কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর পিঠের হাড় ভেঙে যায়। ব্রাজিল ওই ম্যাচে জয় লাভ করলেও সেমি-ফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। সেবার নেইমারের অনুপস্থিতিতে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় সেলেসাওরা।
এবারের কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিল দল বেশ শক্তিশালী। এবার দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় রয়েছেন। তারপরও নেইমার দলের প্রাণভোমরা । নেইমার দলে থাকলেই সবার মনোবল বেড়ে যায়। শুধুই মাঠের খেলোয়াড়দের নয়, গোটা ব্রাজিল সমর্থকদেরও।
মিশন হেক্সা নিয়ে কাতার বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন নেইমাররা। সব ঠিক-ঠাক থাকলেও নেইমারকে আবারও মোকাবেলা করতে হয় কঠিন এক ইনজুরির। সার্বিয়ার বিপক্ষে নেইমারের ডান পায়ের অ্যাংকেলের লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। নেইমার গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচগুলো থেকে বাদ পরে যায়। তবে, পরের রাউন্ডেই তকমা লেগে যায় নেইমার ব্যাক করায়।
দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দেয় ব্রাজিল। সুইজারল্যান্ড আর ক্যামেরুনের বিপক্ষে নেইমার এর অনুপস্থিতি তখনই বোধ করে সেলেসাওরা। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। এক্সট্রা টাইমে নেইমার ও পেটকোভিচ এক-এক গোলে ম্যাচে সমতা আনে। শেষ অবধি পেনাল্টিতে যায় ম্যাচটি।
পেনাল্টিতে অপ্রতিরোধ্য ক্রোশিয়ার কাছে হেরে যায় নেইমারের ব্রাজিল। সেলেসাওদের মিশন হেক্সার স্বপ্ন এখানেই ইতি ঘটে যায়। ফুটবলের রাজপুত্রের বিশ্বকাপ জয় এখানেই থেমে যায়। তবে, এটাই শেষ নয়। সেলেসাওদের এবারের লক্ষ্য ২০২৬ বিশ্বকাপ।
ম্যাচ শেষে নেইমারকে ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘এখানে এসে এটা বলা খুব তাড়াহুড়ো হবে, কিন্তু আমি কিছুর নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। আমাকে এটা নিয়ে ভাবতে একটু সময় দিতে হবে। আমি সেলেসাওর কোনো দরজা বন্ধ করছি না।’
ব্রাজিলের কোচ তিতে ক্রোশিয়ার বিপক্ষ ম্যাচ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘নেইমার পঞ্চম পেনাল্টি নিতেন।। এটাই সবচেয়ে বেশি চাপের। এবং সে পঞ্চম পেনাল্টি নেওয়ার জন্য সবচেয়ে যোগ্য ও মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন খেলোয়াড়।’
সব শেষে সেলেসাওরা সব ভুলে যেতে চায়। ২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২২ এর পর এবারের লক্ষ্য ২০২৬। এবার দুই যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে চায় ২০২৬ বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের স্বপ্ন যাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব চায় নেইমারের। নেইমারের যে একটা বিশ্বকাপ বড্ড প্রয়োজন। আজকের কান্নাই হোক আগামীর শক্তি।