Social Media

Light
Dark

আহারে জীবন, আহা জীবন

ভার্সিটি লাইফে প্রথম আন্তবিভাগ ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচেই গিয়ে পড়লাম যাকে বলে বাঘের সামনে। ইতিহাস বিভাগের বিপক্ষে ম্যাচ। তারা শীর্ষ দলগুলির একটা। আমাদের সেখানে একাদশ দাঁড় করানোই কঠিন। আমরা ৩-৪ জন কেবল ছিলাম যারা মোটামুটি কাজ চালানোর ক্রিকেটার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামার পর তাদের দুই ওপেনার এমন মার শুরু করলেন, আমাদের মাঠ ছেড়ে পালানোর দশা।

ads

এক পাশে মোশাররফ হোসেন রুবেল। আরেক পাশে সম্ভবত উনার নাম ছিল ফরিদ। বেদম মারলেন দুজন। আমি বল ফেলার জায়গা পাচ্ছিলাম না। যেখান বল ফেলি, সেখান থেকেই পিটুনি। জগন্নাথ হলের মন্দিরের ওপারে গিয়ে পড়ল কিছু বল, কিছু বল আরেক পাশে দেয়ালের ওপর দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে আরও দূরে।

এক পর্যায়ে মোশাররফ রুবেল ডাউন দ্য উইকেটে এসে সোজা ব্যাটে মারলেন একটি শট। গুলির বেগে আসা বল থেকে নিজেকে বাঁচাতে চোখ বন্ধ করে হাত রাখলাম মুখের সামনে। বল আটকে গেল হাতে। উইকেট!

ads

ভার্সিটি লাইফে আমার প্রথম উইকেট মোশাররফ রুবেল। ২০ ওভারে সেদিন আমরা ওই একটি উইকেটই নিতে পেরেছিলাম।

রুবেল ভাই ততদিনে ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার। তার উইকেট নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আমার ভাবই বেড়ে গিয়েছিল! ব্যাটিংয়ে নেমে ১২ বা ১৩ রান করে তার বলেই স্টাম্পড হয়েছিলাম।

সেই রুবেল ভাই আস্তে আস্তে ঘরোয়া ক্রিকেটের টপ পারফরমারদের একজন হয়ে উঠলেন। নিজের সীমাবদ্ধতার ভেতর থেকেই দুর্দান্ত স্পিনার, ফ্লাইটে বৈচিত্র আর চাতুর্য তার মূল অস্ত্র। আর কার্যকর ব্যাটসম্যানও।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেশের চতুর্থ সফলতম বোলার তিনি। ৩৯২ উইকেট মানে দুর্দান্ত অর্জন এই দেশের বাস্তবতায়। তার ১০৫ রানে ৯ উইকেট দীর্ঘদিন ছিল দেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। সঙ্গে সাড়ে ৩ হাজার রান। দারুণ প্যাকেজ।

ঘরোয়া ক্রিকেটের অনেক ম্যাচের নায়ক তিনি। দলকে একা টেনেছেন বোলিংয়ে, গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ব্যাটিংয়ে। ইনিংস ওপেন করা থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার, লোয়ার মিডল, সব জায়গায় খেলেছেন।

দ্বিতীয় বিপিএলের ফাইনালে তিনিই ছিলেন ম্যান অব দা ম্যাচ। সেদিন তার তিন উইকেটের মধ্যে ছিল জেসন রয় ও রায়ান টেন ডেসকাটের উইকেট।

সেই রুবেল ভাই চলে গেলেন ৪০ বছর বয়সেই। জীবনের শেষ ম্যাচটিও তার বিপিএলেই। ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে।

ওই বিপিএলের সময়ই প্রথম তাঁর এই অসুস্থতা উঁকি দিতে থাকে। বিপিএলের পর আবার অসুস্থ হয়ে পরীক্ষায় ধরা পড়ে মস্তিষ্কে টিউমার। অপারেশন করানো হয় দ্রুতই, বছরখানেক চিকিৎসা শেষে অনেকটা সুস্থ হন। মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এরপর কোভিডের কারণে খেলা বন্ধ। পরে আবার ফিরে আসে সেই টিউমার। এবার আর তাকে রেহাই দিল না ঘাতক ব্যাধি।

যে কোনো সময় খবরটি আসতে পারে, এরকম মানসিক প্রস্তুতি ছিলই। তার পরও জানার পর থেকে খারাপ লাগছে। তার স্ত্রী গত তিন বছরে তাকে নিয়ে যে লড়াই করেছেন, সেটাও অসাধারণ এক গল্প। খারাপ লাগছে তাদের জন্যও, প্রচণ্ড।
সকালে পরপারে পাড়ি জমালেন সাবেক পেসার সামিউর রহমান, বিকেলে রুবেল ভাই – বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য দিনটি বড্ড বেদনার।

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link