গত মৌসুমের কথা মনে আছে? সেবার ব্যালন ডি’অরের জন্য মনোনীত ৩০ জন ফুটবলারের তালিকায় পাওয়া যায়নি পরিচিত একটা নাম। সেই জেদ থেকেই হয়তো এবারের মৌসুমে একেবারে সেরার স্বীকৃতি জিতে নিলেন, অষ্টমবারের মড উঁচিয়ে ধরলেন ব্যালন ডি’অর। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, লিওনেল মেসির কথা-ই বলা হয়েছে।
অবশ্য মেসি জেদ করেছেন কিংবা চোয়াল শক্ত করে ব্যালন ডি’অর জেতার নেশায় ছুটেছেন এমনটা বলা বাড়াবাড়ি হবে। এর আগে সাতবার এই পুরষ্কার জিততে পায়ের জাদু দেখানো ছাড়া আর কিছুই করেননি তিনি; এবারও করলেন না। শুধু মাঠে খেলে গিয়েছেন নিজের মত করে, আর তাতেই ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরষ্কার তাঁর ঝুলিতে যোগ হয়েছে।
তবে এবারের গল্পটা একটু বিশেষ; এই আর্জেন্টাইন নিজেও সেটা জানেন। অন্যান্য বার ক্লাব আর জাতীয় দলের জার্সিতে মিলিত পারফরম্যান্সের কল্যাণে সেরার স্বীকৃতি পেলেও এবার স্রেফ আকাশী-নীল জার্সিতে তাঁর ইতিহাস গড়া অর্জনের জন্যই পেয়েছেন।
লিওনেল মেসি আসলে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বরেই ব্যালন ডি’অর নিজের করে নিয়েছিলেন, বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার। কাতার বিশ্বকাপে একাই পাঁচবার ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। গোল্ডেন বলও গিয়েছে তাঁর অর্জনের ভাণ্ডারে; অল্পের জন্য পাননি গোল্ডেন বুট। একজনের পক্ষে বোধহয় একটা বিশ্বকাপ আসরে এর চেয়ে বেশি করার থাকে না।
আর্লিং হাল্যান্ড এবারের ব্যালন ডি’অর জেতার বড় দাবিদার ছিলেন। ট্রেবল জেতার পাশাপাশি প্রিমিয়ার লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি – কিন্তু দিন শেষে আর্জেন্টাইন তারকার উজ্জ্বলতার কাছে ম্লান হতে হয়েছে এই তরুণকে।
অবশ্য মেসি এবার না জিতলেও কিই-বা হতো। তিনি কি মন খারাপ করতেন? মোটেই না, আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার পর ফুটবলে তাঁর পাওয়ার কিছু বাকি নেই। ক্যারিয়ারের শেষদিনগুলো উপভোগ করতে করতেই কাটিয়ে দিতেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যদেবী আরো একবার তাঁর সবচেয়ে আদরের সন্তানকে সাফল্য এনে দিলেন, ইউরোপকে বিদায় বলার মুহুর্তকে রঙিন করে দিলেন।
আসলেই, লিওনেল মেসি এবার সত্যি সত্যি ইউরোপকে বিদায় বলেছেন। চমকপ্রদ কিছু না ঘটলে ইউরোপীয় ফুটবল কিংবা এসব লাল গালিচায় আর হয়তো আসা হবে না তাঁর। প্রায় দুই যুগ শাসন করার পর ধীর পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গিয়েছেন সাম্রাজ্য থেকে; আর শেষ সময়ে হাত তুলে নিয়েছেন নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতীক হয়ে ওঠা অষ্টম ব্যালন ডি’অর।