মনে রাখবো এই অসম যুদ্ধটাই শুধু

জোসেফ মারিয়া বার্তেমেউ শ্রেণীগতভাবে মাদ্রিদের এককালের শোষক পুঁজিপতিদেরই একজন। তবে নাটের গুরু সে নয়। সাদ্রো রোসেল। এই রোসেল গং যদ্দিন ক্ষমতায়, তদ্দিন কাতালান ভাগ্যাকাশে মেঘের ঘনঘটা কমার সুযোগ নাই। কিভাবে এরা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনাকে ধ্বংস করেছে তা নিয়ে একাধিকবার বলেছি।

মহামান্য ইয়োহান ক্রুইফ মহোদয়, কাতালোনিয়া ছেড়ে গিয়েছিলেন এই সান্দ্রো রোসেলের যথেচ্ছাচারের প্রতিবাদেই। বলেছিলেন, এরা থাকতে এই ভূমিতে ফিরব না। এদের হাতে ক্লাব নিরাপদ না। ফেরেননি। ক্লাবের কিংবদন্তি রাইটব্যাক ড্যানি অ্যালভেজকে এরা অপমান করেছিল। ড্যানি চলে গিয়েছিলেন। গত তিনবছরে মাঠের খেলা এই জায়গায় না আসলে আমি নিশ্চিত লিওনেল মেসিও চুপচাপই চলে যেতেন। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় ক্লাবকে রক্ষার জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপের বিকল্প নাই। মেসি যেন সত্যিকারের মুক্তি সংগ্রামের নায়ক হয়ে উঠছেন কাতালান ফুটবলের জন্য।

কাতালান দর্শন সত্যিই অন্যদের জন্য ভয়ের। তাই দুনিয়ার তাবৎ ফিজিক্যাল আর উইংবেইসড দর্শনের সমর্থকরা এর পরাজয়ের কামনায় থাকে উন্মুখ। এই দর্শনের জন্য লড়াইটাও তাই কঠিন। কাতালোনিয়া যেন ফুটবলের দুনিয়ায় এক কিউবা। যে কোনো লড়াইই স্যাক্রিফাইস দাবি করে। লিও সেটা অনুধাবন করেছে।

হ্যাঁ, এ অনেকটা সতী হবার মতন। নিজেকে অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য বলীদান। হ্যা, বার্তো বোর্ডের প্রতি অনাস্থা তৈরির, তাদের হটানোর জন্যই লিওর চলে যাবার সিদ্ধান্ত। সে সাফল্যের সন্ধ্যানে অন্য কোথাও যাবার ছেলে না। হলে তিনবছর অপেক্ষা করত না। সিটি বসে ছিল সেই কবে থেকেই!

ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, ক্লাবের জন্য এটাও করতে পারবে লিও, ভাবিনি। তাই আজকে তার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। কাতালোনিয়ায় ওরা বলে, গড সেইভ দ্য কিং। আমরা বলি, এলিয়েন। কিন্তু গণতান্ত্রিক কোনো পদ্ধতিতে বার্তো গংকে ক্লাবছাড়া করতে সবাই যখন ব্যার্থ, তখন ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, গ্রাণ্ড এক্সিটের আকর্ষন পায়ে ঠেলে নেয়া এই সিদ্ধান্ত, সেনাপতির আত্মঘাতি হামলার মতনই। লিও চলে গেলেও ইলেকশনে এর প্রভাব পড়বেই। আর বার্তোরা এখন রিজাইন দিলে তো জয় হলোই।

তাকে সেরা ফুটবলার জানতাম। জানতাম শিল্পী মানুষ, অন্যান্য জিনিস নিয়ে একটু উদাসীন। কিন্তু সে আমায় ভুল প্রমান করলো। লা মাসিয়া শুধু ভালো আর্টিস্টই না, গোটা ক্লাবের ডিগনিটি আর মাঠের বাইরেও বিউটিফুল ফুটবলের ফিলোসফির ত্রাণকর্তা তৈরি করে, জানলাম। আজ থেকে লিও আমার কাছে অন্য উচ্চতায় পৌছে গেলেন। জিতুন বা হারুন, অর্থাৎ থাকুন বা চলে যান, এসে যায় না। মনে রাখবো এই অসম যুদ্ধটাই শুধু।

চলে গেলে জানবো, হি ইজ আওয়ার আউট ল কিং। শেরউডের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়ে নটিংহ্যামশায়ারের জন্য লড়াইরত আমাদের রবিনহুডের নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচিত্তিনি।

ফ্রম দিস ডে ফর মি, হি ইজ দ্য বেস্ট ইন হিস্ট্রি। জর্জ বেস্ট, ম্যারাডোনা বা ক্রুইফকেও ছাড়িয়ে গেলেন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। গড সেইভ দ্য কিং অ্যান্ড দ্য কিং উইল সেইভ আস; ইভেন ইফ হি ইজ নট উইথ আস ফিজিক্যালি। লং লিভ দ্য কিং। লং লিভ দ্য মায়েস্ত্রো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link