কে বলে লিটন অধারাবাহিক!

ইয়ান বিশপ একবার বলেছিলেন, ‘লিটন যখন ব্যাট করে, মনে হয় মোনালিসার মত কোনো চিত্রকর্ম দেখছি।’ ইয়ান বিশপই নয় শুধু, হার্শা ভোগলে এর মত ক্রিকেট এক্সপার্টও লিটন দাসের ব্যাটিংয়ের চরমভক্ত। অনূর্ধ্ব-১৯ থেকেই দ্যূতি ছড়িয়েছে লিটনের ব্যাট থেকে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে রীতিমতো রান বন্যা বইয়ে এসেছেন জাতীয় দলে। রান সংখ্যাই নয়, তার রান সংগ্রহের নান্দনিকতাই দেশে বিদেশে লিটনের অসংখ্য ব্যাটিংভক্ত সৃষ্টি করেছে।

সামনের পায়ে ভর করে পুল, কাভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভ কিংবা স্কয়ার কাট অথবা ফ্লিক! যেই শটটার কথাই আপনার মাথায় আসবে লিটন তাই করে দেখাবে, সবচেয়ে সাবলীল আর সুন্দর উপায়ে। এই যখনই ছন্দে থাকা লিটন কোন শট খেলেন, একেবারে কপিবুক শট খেলেন, মনে হয় শটগুলো অথেনটিক। বাইশ গজে একবার সেট হয়ে যাওয়া লিটন হয়তো দর্শকের সবচেয়ে বড় বিনোদন আর প্রতিপক্ষের দুঃস্বপ্ন।

আজকের কথাই বলা যাক, শুরুতে নড়বড়ে। বার দুয়েক এলবিডব্লুর আপিলও উঠে ছিলো। সুইংয়ে পরাস্ত হয়েছেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু যখনই মানিয়ে নিলেন, সেট হয়ে উঠলেন একেবারে নিঁখুত ব্যাটিং প্রদশর্নী দেখা গেলো জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে। আফগানিস্তানের স্পিনত্রয়ী কিংবা ফাস্ট বোলার সবসময়ই দারুনভাবে সামলেছেন।

ভাল ডেলিভারিগুলোকে দিয়েছেন যথাযথ সম্মান তেমনি বাজে বলগুলোকে মাঠছাড়া করতে হাত কাঁপেনি একটুও। এরপর লিটন তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত এক শতক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি, আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মত। তামিম ইকবালের পরে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শতক তুলে নিয়েছেন। লিটন দাসের অর্ধশতককে শতকে রূপান্তরের হার ঈর্ষনীয় বটে। তৃতীয় অর্ধশতকের বিপরীতে পঞ্চম সেঞ্চুরি।

কিন্তু ক্রিকেট বিধাতা লিটনকে অনেক দিয়েছেন, দেননি ধারাবাহিকতা – এমন একটা সমালোচনা হয় প্রায়। ক্রিকেটের মাঠে যে শিল্প প্রদর্শন করেন লিটন দাস, তাই যেন অনিয়মিত – এই কথা বলার লোকের অভাব হয় না। হ্যাঁ, শুরুর দিককার লিটনকে ধরলে কথাটা ঠিক আছে। কিন্তু, বর্তমান বাস্তবতায় কথাটা ধোপে টেকে না।

৪৯ তম ওয়ানডে ইনিংসে লিটন পঞ্চম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। এত কম সময়ে আর কোনো ব্যাটসম্যানই পাঁচটি সেঞ্চুরি পাননি। এর আগে সর্বনিম্ন ইনিংসে পাঁচ ওয়ানডে সেঞ্চুরি পাওয়া বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হলেন সাকিব আল হাসান। তিনি খেলেছিলেন ৯৩ টি ইনিংস। তাহলে লিটন অধারাহিক কোথায়।

আর কনভার্সন রেটে তিনি বাংলাদেশের সেরা ওপেনার এখন লিটন। ওয়ানডেতে আটটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলে পাঁচটিতেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। সেঞ্চুরির দিক থেকে ওয়ানডেতে তাঁর চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবল তামিম ইকবাল।  ফলে, সমালোচনার জায়গাটা আর কোথায়ং

লাল বলে লিটন দাস গত দুইবছর ধরেই উড়ন্ত ফর্মে। সাদা বলে এমন ফর্ম টেনে আনতে পারাটাই লিটনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, আর সেটা তিনি পেরেছেন। বলাই যাই, পিকাসোর ব্যাট এখন আগের থেকে ধারাবাহিক ও ধারালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link