যে লিটন টি-টোয়েন্টিতে রানই পেলেন না, তিনি কী করে টেস্টে এমন একটা সেঞ্চুরি করলেন?
যদিও দুই ফরম্যাটকে মিলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। এবং লিটন টেস্টে রানেই ছিলেন। তারপরও মানসিক একটা চাপ তো থাকেই। সেটাকে লিটন কিভাবে অতিক্রম করলেন? কিভাবে আবার এরকম বড় ইনিংসের জন্য নিজেকে তৈরি করলেন?
লিটন বলছেন, তিনি প্রথম কারণ দেখেন টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়ার ভেতরই। তিনি মনে করেন, তাকে টি-টোয়েন্টিতে যে বিরতিটা দেওয়া হয়েছিলো, সেটা নিজেকে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। আরেকটা ব্যাপার হলো, তিনি স্ট্যান্সে সামান্য বদল এনেছেন। রান পাওয়ার এটাও একটা কারণ বলে মনে করছেন।
আজ সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজেকে নিয়েই বেশি কথা বলতে হলো লিটনকে। সেটা বলতে গিয়ে বলছিলেন, সেঞ্চুরিটা করতে পেরে তার আসলেই ভালো লাগছে। বিশেষ করে কয়েকবার মিস করার পর এটা পেয়েছেন বলে, ‘অনুভূতি তো সব সময় ভালো। কোন ব্যাটসম্যান যদি সেঞ্চুরি করে তার থেকে বড় কিছু থাকে না পাওয়ার। গত দুই তিনটা খেলায় আমি কাছাকাছি গিয়েছিলাম, জিম্বাবুয়ের গেমটাতেও কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি এটা ক্রিকেটের অংশ। এখন সেঞ্চুরি করেছি ভাল লাগছে। কিন্তু এটা যদি আরেকটু বড় করতে পারতাম তাহলে হয়ত দলের জন্য ভাল হত।’
আর এই বড় ইনিংসের জন্য অনেকটাই কৃতিত্ব দিচ্ছেন, টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়াকে। সেটা বলতে গিয়ে লিটন বলছিলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে যে জন্য আমাকে ব্রেক দিয়েছিল হয়ত সেটাই হয়েছে মেইন রেজাল্ট। হয়ত তারা ভেবেছিল আমি টেস্ট ক্রিকেটে ভাল করি এজন্য টি-টোয়েন্টিতে ব্রেক দিয়েছিল।’
পাশাপাশি স্ট্যান্সে একটু বদলও তাকে সুবিধা দিচ্ছে বলে মনে হয় লিটনের। কিভাবে পরিবর্তনটা এলো, সেটা বলতে গিয়ে লিটন বলছিলেন, ‘ব্যাটিংয়ে জিনিসগুলো আসলে ছোট ছোট। অনেক সময় ছোট্ট একটা বদল আনলে অনেক কিছু হয়ে যায়। গ্রিপ চেঞ্জ করলেই খেলার ধরণ চেঞ্জ হয়ে যায়। যখন আমি বিকেএসপিতে ছিলাম জাতীয় লিগের ম্যাচে, তখন ফাহিম স্যার ও মন্টু স্যারের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম যে আমার সমস্যা হচ্ছিল। সেখান থেকে আসার পর চট্টগ্রামে আমাদের যে দুটো অনুশীলন সেশন করেছি তখন তার (ব্যাটিং কোচের) কাছেও মনে হচ্ছিল আমার ছোট্ট একটা জায়গাতে সমস্যা হচ্ছে। যে কারনে আমাকে স্ট্যান্সে কিছু একটা চেঞ্জ করে দিয়েছে। আমি বলব না শুধু স্ট্যান্স চেঞ্জ হওয়ার কারনে ভাল খেলেছি। আমার কষ্ট ছিল, পরিশ্রম ছিল।’
পরিশ্রম মাঠের খেলাতেও হয়েছে। লিটন বলছিলেন, কষ্ট করে ক্র্যাম্প নিয়ে ব্যাট করার সময়টাতে মুশফিক তাকে দারুন সমর্থন দিয়েছেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা দুজনেই কঠিন পরিস্থিতিতে ছিলাম, দুজনেই ওভারকাম করেছি। দুজনেই দুজনকে সমর্থন দিয়েছি। এটা সবচেয়ে বড় জিনিস। ভাইয়া যেটার কারণে বারবার আমার কাছে আসছিল কারণ আমার শরীরে প্রচুর ক্রাম্প করছিল। তো যে কারণে নতুন বল আসাতে উনি বলেছে যতটুক পারা যায় চেষ্টা কর। কারণ নতুন ব্যাটসম্যান আসলে তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’
এবার লিটনের ধারাবাহিক হওয়ার পালা। আরেকটা সেঞ্চুরির জন্য এতো অপেক্ষা নিশ্চয়ই করতে চাইবেন না তিনি। সেই ধারাবাহিক হওয়ার স্বপ্নে লিটন বলছিলেন, ‘এটা কঠিন প্রশ্ন যে ধারাবাহিকতা। সবাই চেষ্টা করেছে ধারাবাহিক হওয়ার জন্য। আমি কতটুকু দিতে পারব, রেজাল্ট কতটুকু হবে জানি না। কিন্তু আমি প্রক্রিয়া অনুসরণ করব। গত ছয়-সাত টেস্ট ধরে করে আসছি। একশো করেছি দেখে পরের দিন নামলে যে আবার একশো হবে তেমনটা না। টেস্ট ক্রিকেট অনেক টাফ ক্রিকেট। শূন্য থেকে শুরু করতে হয়, সব সময়ই চ্যালেঞ্জ। তো কঠিন এটা। আমি চেষ্টা করব যেভাবে গত ছয়-সাত টেস্টে খেলেছি সেভাবে খেলার জন্য।’