‘অটোচয়েজ’- ইংরেজি শব্দটার সাথে বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তরা বেশ পরিচিত। কেননা বাংলাদেশ জাতীয় দলে পারফরমেন্স ছাড়াও যে একটানা খেলে যাওয়ার রীতি তো আর কম নেই। এই যেমন লিটন কুমার দাসের কথাই ধরা যাক। বছর জুড়ে ওয়ানডেতে আন্ডার-পারফর্মার তিনি। তবুও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই করে যাচ্ছেন ওপেনিং।
২০২৩ সাল থেকে এখন অবধি, লিটনের কাছ থেকে মেলেনি আশানুরূপ পারফরমেন্স। এই সময়টায় ৩৩টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার ৩০টি ম্যাচেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন লিটন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এই সময়টায় কোন সেঞ্চুরির দেখা পাননি লিটন।
দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার ভাবা হয় তাকে। প্রত্যাশাও থাকে তার উপর অন্যদের চাইতে বেশি। সেই সক্ষমতাও তার রয়েছে। তবুও নিজের মিডিওকার মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছেন না তিনি। এই সময়টায় ২৫.০৩ গড়ে তিনি রান করেছেন ওয়ানডে ফরম্যাটে। ২০২৩ সালের মধ্যভাগেই তাকে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনে।
খানিকটা তীর্যকভাবেই তিনি দিয়েছিলেন সেই প্রশ্নের উত্তর। বলেছিলেন, ‘ ২৫-২৬ একদম খারাপ নয়। আপনি কত চান? ৫০ করাই লাগবে প্রতি ম্যাচে!’ এরপরই এক অবহেলার হাসি। যেন এই প্রশ্নটার কোন মানে নেই। এরপর থেকে যে তার পরিসংখ্যান কিংবা পারফরমেন্সে উন্নতি ঘটেছে তাও নয়।
বিশ্বকাপের সময়টায় যদিও একটু গড়ের সংখ্যাটা বেড়েছিল। সেই সময়টায় ৩১ এর একটু বেশি গড়ে রান করেছিলেন। সেই সময়টা মিলিয়েও তার মোট গড় ছাড়ায়নি ২৫ এর ঘর। লিটনের খেলা ৩০ ম্যাচে তিনি ব্যাটিং করেছেন ২৯ ইনিংসে। যার মধ্যে ছয়বার ফিরেছেন শূন্য রানে।
বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। তামিম ইকবালের অবর্তমানে কেউই আসলে থিতু হতে পারেননি সে জায়গাটায়। তবে লিটন অবশ্য ধারাবাহিক হয়েছেন। যার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে ২০২২ সালে তার দুর্দান্ত পারফরমেন্স।
সমস্যাটা ঠিক সেখানেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের চাইতেও অতীতের কোন এক ভাল দিন বিবেচিত হয় বেশি। লিটন ধারাবাহিকভাবেই ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কালেভদ্রে তার কাছ থেকে দারুণ কিছু ইনিংসের দেখা মেলে ঠিকই। তবে তাও অন্তত তার প্রতি থাকা প্রত্যাশা মেটায় না।
অন্তত এবার তাকে জোরপূর্বক বিশ্রামে পাঠানো উচিৎ। ৩০ ম্যাচ খেলে ৬৫১ রান তিনি করেছেন। অথচ ঠিক তার আগের বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালে তিনি ১৩ ম্যাচেই করেছিলেন ৫৭৭ রান। ভাল পারফরমেন্সের পুরষ্কার হিসেবে যেমন তিনি লম্বা সময় ধরে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তেমনি বাজে পারফরমেন্সের খেসারৎ তো তারই দেওয়া উচিত।
সেক্ষেত্রে তরুণ তানজিদ হাসান তামিমকে বাজিয়ে দেখার সুযোগ মিলবে। ডাগ আউটে থাকা এনামুল হক বিজয়কেও দেওয়া যাবে সুযোগ। নিজের জায়গা হারালে হয়ত ভুলগুলো নিয়ে ভাবার সুযোগ পাবেন লিটন। এরপর না হয় পারফর্ম করেই ফিরলেন তিনি।