টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ থাকে দ্বিধায়। না জয় পরাজয়ের নয়, ম্যাচ বাঁচানোর দ্বিধা। সেই দ্বিধায় বাংলাদেশের ব্যাটাররা বরং খোলসবন্দী হয়ে যান। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ব্যতিক্রম মানসিকতার দেখা মিলল। লিটন দাস অন্তত প্রমাণ করতে চাইলেন ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেও জয়-পরাজয়ের হিসেব-নিকেশ করা যায়।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে। তৃতীয় দিন শেষে টাইগাররা পিছিয়ে আছে ১৩২ রানে। তবে দিনশেষে এই দূরত্ব হয়ত আরও বেশি থাকত, যদিনা লিটন নিজের স্বভাবজাত ক্রিকেটটা খেলতেন।
টেস্ট ক্রিকেট মানেই উইকেটে টিকে থাকা নয়। প্রতিপক্ষ বোলারদের ক্লান্ত শরীরে জ্বালাতনের সৃষ্টি করাই থাকে ব্যাটারদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু তার আগে দূরবর্তী লক্ষ্যটা ঠিক করে নিতে হয়। সেটা জয়, পরাজয় কিংবা ড্র যেকোন কিছুই হতে পারে। ব্যতিক্রমী কিছু ঘটে না গেলে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট ড্রয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
লিটন দাস তাইতো দলের উপর থেকে চাপ কমাতে চাইলেন। বাউন্ডারি হাকিয়ে দ্রুত কিছু রান তুলে নিতে চাইলেন। নাসিম শাহের এক ওভারে তিনি ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান। তাতে করে নিজের ব্যক্তিগত ফিফটিও তুলে নেন লিটন। এতে করে বাংলাদেশের অন্তত পরাজয়ের রাস্তাটা ক্রমশ সংকীর্ণ হচ্ছে। যদিও লিটনের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি।
লিটন দাস সাত নম্বর ব্যাটার হিসেবে ব্যাট করতে নামেন। এরপর মাত্র ৫৮ বল খেলেই নামের পাশে ৫২ রান যুক্ত করে ফেলেছেন তিনি। ৮টি চারের বিপরীতে ১টি ছক্কা হাকিয়ে অপরাজিত থেকেছেন তিনি। লিটনের রানে ফেরা আর আগ্রাসনের সাথে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করা- সবকিছুই ভীষণ স্বস্তির।
কেননা দীর্ঘদিন ধরে রান খরায় ভুগছিলেন লিটন। নিজের আত্মবিশ্বাসও যেন হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। ব্যাটে রান এলেও তা বড় হয়নি ধারাবাহিকভাবে। স্বল্প রানে লিটনের থমকে যাওয়া সমর্থকদের বেশ বিমর্ষ করে তুলেছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে লিটন যথেষ্ট ধারাবাহিক।
২০২১ সালের পর থেকে এখন অবধি, বাংলাদেশী ব্যাটারদের মধ্যে লিটন সর্বাধিক রান করেছেন সাদা পোশাকে। তিন সেঞ্চুরির বিপরীতে ১২ হাফসেঞ্চুরি করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। সাদা বলে লিটনের পারফরমেন্সকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সমীচিন, কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটে লিটন বড্ড স্বাভাবিক।
তাছাড়া রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে দায়িত্ব নিয়ে তিনি বাংলাদেশের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানোর প্রয়াশ করেছেন। সেটিও ভীষণ ইতিবাচক বিষয়। এখন দেখবার পালা পালটা আক্রমণের এই রীতি নিয়ে লিটন ঠিক কতদূর অবধি এগোতে পারেন।