অভিজ্ঞতার কারণেই বোধ হয় বাংলাদেশের পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে লিটন দাসকে বেশি পছন্দ ছিল টিম ম্যানেজম্যান্টের। তাই তো নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্ব দিতে হয়েছিল তাঁকে। ধারণা করা হচ্ছিলো সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের পর তিনিই হবেন টাইগার দলপতি।
কিন্তু ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে হুট করে সেই ভাবনায় বদল এসেছে। সেপ্টেম্বরের নিউজিল্যান্ড সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ লিটন ক্যাপ্টেন্সি করলেও পরের ম্যাচে তিনি না থাকায় অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয় তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তর। সেদিন আসলে এক ম্যাচের জন্য নয়, লিটনের জায়গাটা পুরোপুরি নিয়ে নিয়েছিলেন শান্ত।
সেজন্য বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও সহ-অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল এই বাঁ-হাতির নাম। সেই সুবাদে বিশ্ব মঞ্চে দুইবার টস করার সৌভাগ্যও হয়েছে তাঁর।
অধিনায়কত্বের দৌড়ে মূলত দুই জায়গায় লিটন পিছিয়ে পড়েছেন। একটা হলো পারফরম্যান্স, আরেকটা তাঁর অন্তর্মুখী স্বভাব। এমনিতেই পারফর্মার হিসেবে তিনি ধারাবাহিক নন, তার উপর নেতৃত্বের চাপ – তাই তো এই ওপেনার নিজেই অনীহা প্রকাশ করেছেন দায়িত্ব নিতে। তবু দলের প্রয়োজনে নিতে হয়েছিল, ফলে আশানুরূপ পারফরম্যান্সও পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে কথা বলতেও তেমন পছন্দ করেন না এই ব্যাটার। তাই মিডিয়া হ্যান্ডেলিংয়ে সাবলীল নন তিনি, আবার মাঠে নেতৃত্ব দেয়ার কাজটা ঠিকঠাক করলেও সবসময় সক্রিয় থাকতে দেখা যায় না তাঁকে।
অথচ নাজমুল শান্ত এর উল্টো, ঘরোয়া ক্রিকেটে টুকটাক ক্যাপ্টেন্সি করার স্মৃতি থাকায় গণমাধ্যমে কথা বলতে অসুবিধেতে পড়তে হয় না তাঁকে। আবার মাঠেও দারুণ ছনমনে তিনি; এখন পর্যন্ত তিন ওয়ানডে আর এক টেস্টে নেতৃত্ব দেয়া এই তারকা ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সতীর্থদের সাথে কথা বলেছেন; পরামর্শ নিয়েছেন আবার দিয়েছেন।
আর পারফরম্যান্সের কথা বলাই বাহুল, সমালোচনার তীব্র স্রোত ঠেলে রান করতে শেখা শান্তর কাছে অধিনায়কত্বের চাপ তো নস্যি। বাইশ গজেও সেটার প্রমাণ মিলেছে; ওয়ানডে ফরম্যাটে নেতৃত্বের অভিষেকে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। লাল বলেও প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে উদ্বোধনী ম্যাচেই করেছেন সেঞ্চুরি।
ব্যাটার হিসেবে শান্ত, লিটন দুজনে প্রায় একই ধাঁচের, দুজনের ক্যারিয়ারে আছে প্রত্যাবর্তনের গল্প; দুজনের কাছে দলের চাওয়াও একটা – বড় রান। তবে প্রসঙ্গ যদি হয় নেতৃত্বগুণ তবে শান্ত এগিয়ে থাকবেন।
কিউই সফর দিয়ে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন হওয়ার স্বাদ পাবেন তিনি, আর এই জায়গা পাকা করে ফেলার ইচ্ছে নিশ্চিত আছে তাঁর মনে। অন্যদিকে লিটন সহজেই এই জায়গাটায় আসছেন না। মাঠ ও মাঠের বাইরের ইস্যুতে খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই (বিসিবি) তাঁকে আপাতত নেতৃত্ব ইউনিটের বাইরে রাখতে চায়।