দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে ২০২২ টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের আকাঙ্ক্ষিত শুরু করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম ম্যাচের ব্যাটিংটা নিয়ে কিছুটা অতৃপ্তি থাকলেও সামান্য কিছু ভুল বাদে বোলিং-ফিল্ডিং হয়েছে প্রত্যাশা মতোই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আগের প্রেস কনফারেন্সে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সকল চাপ দক্ষিণ আফ্রিকার উপর ঠেলে দিয়ে নির্ভার ক্রিকেট খেলার ডাক দিলেন ক্রিকেটারদের।
বাংলাদেশের ঠিক বিপরীত অবস্থা দক্ষিণ আফ্রিকা দলের। প্রথম ম্যাচে জিততে জিততেও বৃষ্টির বিমাতা সুলভ আচরণে এক পয়েন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় প্রোটিয়াদের। হতাশ দক্ষিণ আফ্রিকান শিবিরের সামনে এবার টাইগাররা। সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে জয়ের বিকল্প নেই টেম্বা বাভুমার দলের। বাঁচা মরার এই লড়াইয়ে আগে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার লুঙ্গি এনগিডি রীতিমতো হুমকি দিয়ে গেলেন বাংলাদেশকে। তাদের শক্তিশালী পেস আক্রমণ দিয়ে টাইগার ব্যাটিংকে রীতিমতো উড়িয়ে দিতে চান এই প্রোটিয়া।
এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকান পেস আক্রমণ অন্যতম সেরা। লুঙ্গি এনগিডির সতীর্থ হিসেবে দলে আছেন এনরিচ নর্কিয়া, কাগিসো রাবাদা, মার্কো জ্যানসেন, ওয়েইন পার্নেলের মতো বিধ্বংসী বোলাররা। এই লাইন আপের প্রতিটা বোলারকে বিশ্বের যেকোনো দল মুখিয়ে থাকবে তাদের দলে নেওয়ার জন্য। নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হালকা একটা ট্রেইলারও দেখিয়েছেন লুঙ্গি এনগিডিরা। বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচে বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে গতি আর সুইংয়ের বিষে ১৯ রানেই চার উইকেট তুলে নেন তাঁরা। তবে এবার দ্বিতীয় ম্যাচে আরও বিধ্বংসী হওয়ার হুমকি দিয়ে রাখলেন লুঙ্গি এনগিডি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মূল শক্তি দিয়েই বাংলাদেশকে আক্রমণ করতে চাইবো। এবং আপনারা সবাই জানেন ও দেখেছেন আমাদের দলের মূল শক্তি হল আমাদের পেস বোলিং এবং আমরা সফলও। আগামীকাল ম্যাচে বাংলাদেশকে আমাদের ভয়ঙ্কর পেস বোলিংই মোকাবেলা করতে হবে এবং তাঁরা কিভাবে মোকাবেলা করবে তার উপরেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করছে। বাকিটা মাঠের খেলায়ই দেখা যাবে।’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে আর্শদ্বীপ সিংয়ের দারুণ বোলিংয়ের পর ক্রিকেট পাড়ায় আবারও আলোচনা, বাঁ-হাতি পেসাররা কি ম্যাচের ভাগ্য পাল্টে দিতে পারে কি না? এই প্রশ্নের জবাবে ডানহাতি এই পেসার বলেন, ‘আমি মনে করি বাঁ-হাতি পেসার যেকোনো দলের জন্যই সম্পদ। তাদের বোলিংয়ে নানা ভ্যারিয়েশনে ম্যাচের গতিপথ যেকোনো মুহূর্তেই পাল্টে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে তাঁরা। আমাদের দলেও দুইজন বাঁ-হাতি বোলার আছে যারা যথেষ্ট প্রতিভাবান। বাংলাদেশ দলের দুর্দান্ত কিছু বোলার রয়েছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানও দারুণ একজন বাঁ-হাতি বোলার।’
আগের ম্যাচের পূর্ন পয়েন্ট না পাওয়ায় এই ম্যাচে চাপ দক্ষিণ আফ্রিকার উপরই থাকবে সাকিব আল হাসানের এমন কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন গেলবারের মুস্তাফিজুর রহমানের আইপিএল সতীর্থ। বলেন, ‘বিশ্বকাপের মত আসরে চাপ ছাড়া ম্যাচ খেলা প্রায় অসম্ভব। দেখুন এইখানে আপনি প্রতিটা ম্যাচেই জিততে চাইবেন। আর জেতার তাড়না থেকেই আপনার উপর চাপ এসে পড়বে। আমার দৃষ্টিতে, আগামীকালের ম্যাচে চাপ দুই দলেরই সমান থাকবে।’
বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ সাদা বলের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলিং লাইনআপকে তুলোধুনো করে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। যে দলের সদস্য ছিলেন লুঙ্গি এনগিডি নিজেই। তাইতো ওই সিরিজের কথা মাথায় রেখে দ্রুতই ফেরাতে চান টাইগার টপ অর্ডারকে। এনগিডি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব তাদের টপ অর্ডারকে সাজঘরে ফেরানোর। শেষবার যখন আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম তাদের টপ অর্ডারের ব্যাটাররা ছিলো দুর্দান্ত। তাই এই ম্যাচে যদি বাংলাদেশকে অল্প রানে অলআউট করতে চাই তবে তাদের শুরুর ব্যাটারদের ফেরাতে হবে আগে ভাগেই।’
তবে সেটা ছিল ভিন্ন এক ফরম্যাট। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ বরাবরই বেশ শক্তিশালী। সে কথা মাথায় রেখেই এনগিডি বলেন, ‘তাঁরা আমাদের ওয়ানডে ফরম্যাটে সিরিজ হারিয়েছে তবে আগামীকাল নতুন দিন। পূর্বে কি হয়েছিলো তা ভুলে ম্যাচে ভাল কিছুই করার চেষ্টা থাকবে আমাদের।’
বৃষ্টি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এই বোলার বলেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলোর উপর হাত নেই তা নিয়ে আপাতত ভাবতে চাই না। মাঠে সুযোগ পেলে পারফর্ম করে দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে চাই।’ আগামীকাল সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সুপার টুয়েলভে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ সময় সকাল নয়টায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা।