ইতিহাসের লড়াইয়ে বার্সেলোনা-মাদ্রিদ

মুখোমুখি স্পেনের প্রাচীনতম দুই ক্লাব। না মাঠের লড়াইয়ে না। এবার রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার কথার লড়াই। দুই দলের খেলোয়াড়দের ছাপিয়ে এখন লড়াইটা কর্তাদের মাঝে, লড়াইটা এখন ইতিহাসের। 

উত্তাপ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সরাসরি মুখোমুখি স্পেনের প্রাচীনতম দুই ক্লাব। না মাঠের লড়াইয়ে না। এবার রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার কথার লড়াই। দুই দলের খেলোয়াড়দের ছাপিয়ে এখন লড়াইটা কর্তাদের মাঝে, লড়াইটা এখন ইতিহাসের।

সাম্প্রতিক সময়ে বার্সেলোনা ক্লাবটি রয়েছে বেশ বিপাকে। ক্লাবটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অর্থের বিনিময়ে রেফারিদের সাহায্য নেওয়ার। মূলত ‘নেগ্রেইরা কাণ্ড’ হিসেবেই সেটা চাওড় হয়েছে বিশ্ব ফুটবলে। স্পেনের রেফারিদের টেকনিক্যাল কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন হোসে মারিয়া এনরিকেস নেগ্রেইরা। ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল অবধি টানা তিনি ছিলেন এই দায়িত্বে।

তার একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। মূলত ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল এই দীর্ঘ সময় ধরে নেগ্রেইরার সেই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭৬ লাখ ইউরোর একটা লেনদেন করেছে বার্সেলোনা। ঠিক সেখান থেকেই সন্দেহের সূত্রপাত। আর তাতেই সরগরম গোটা স্পেন ফুটবল।

এবার যেন সেই উত্তপ্ত আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলে দিলেন বার্সেলোনার সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা। তিনি প্রায় দুই ঘন্টার একটি সংবাদ সম্মেলনে রিয়াল মাদ্রিদকে দোষারোপ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন রিয়াল মাদ্রিদ ‘ক্ষমতাসীনদের দল’।

অর্থাৎ রিয়াল মাদ্রিদ অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। আর তাতেই যেন চটেছে রিয়াল মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষ। রিয়াল মাদ্রিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রায় সাড়ে চার মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত রিয়াল মাদ্রিদ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে।

স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্র্যাঙ্কোর সাথে সম্পৃক্ততার তথ্যচিত্র প্রকাশ করে প্রশ্ন করা হয়, ‘শাসকের দল কোনটি?’ ভিডিওর শুরুতেই এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে সরকার দলীয় কর্তাব্যক্তিদের সাথে বার্সেলোনার ঘনিষ্ঠতার তথ্য প্রকাশ করা হয়।

ন্যু ক্যাম্পের উদ্বোধনের সময় ফ্র্যাঙ্কো সরকারের মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের উপস্থিতির ঐতিহাসিক ভিডিও চিত্রের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু তথ্যের খোলাসা করে রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে ১৯৬৫ সালে ফ্র্যাঙ্কোকে সম্মানসূচক সদস্যপদ প্রদান করেছিল বার্সেলোনা, সে তথ্যও প্রকাশ করেছে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের সে ভিডিওতে।

এছাড়াও ফ্যাঙ্কোর শাসনামলে তিন দফা বার্সেলোনা দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল। সেখান থেকেও ক্লাবটিকে উদ্ধার করেছিলেন ফ্র্যাঙ্কো। এতসব ডকুমেন্ট প্রকাশের উদ্দেশ্য স্রেফ লাপোর্তার আনা অভিযোগের একটা জবাব দেওয়া। রিয়াল মাদ্রিদ প্রমাণ করতে চেয়েছে ঐতিহাসিকভাবেই বার্সেলোনার বাড়তি সুবিধা পেয়ে আসছে। বার্সেলোনার ফুটবলে উত্থানের পেছনেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে এমন ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে সেই ভিডিওটিতে।

তাছাড়া ফ্র্যাঙ্কো স্বৈরশাসক থাকাকালীন সময়ে বার্সেলোনা আটটি লা-লিগা ও নয়টি কোপাস দেল জেনারেল (কোপা দেল রে) জিতেছিল। অথচ এই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদের লা-লিগা শিরোপা জিততে সময় লেগে যায় প্রায় ১৫ বছর। এই তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিজেদের উপর আনিত অভিযোগটা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।

তবে একটা স্মিত হুমকিও দিয়ে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। মাদ্রিদের ইতিহাস ও সম্মানহানীকর কোন মন্তব্যের জবাবে আরও নিত্যনতুন তথ্য ফাঁস করতে দ্বিধা করবে না ক্লাবটি।

এই দুই ক্লাবের কর্তা পর্যায়ের এই দ্বন্দ্বের উত্তাপ পুরো বিশ্বের ছড়িয়ে যেতে সময় লাগেনি। এই দুই ক্লাবের মাঠের লড়াইয়ে উন্মুখ হয়ে থাকে গোটা বিশ্ব। তাই এই নতুন কথার লড়াই নিশ্চয়ই নতুন আলোচনা আর সমালোচনার খোড়াক মেটাবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...