২০২২ মৌসুমে এর আগে ওপেনিং এ নামা হয়নি মেহেদী হাসানের। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ। বাঁচা-মরার সমীকরণ। খুলনা টাইগার্স জিতলে যাবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের কোয়ালিফায়ারে। আর হারলে টুর্নামেন্ট শেষ লিগ পর্বেই। এই যখন সমীকরণ তখন নিয়মিত ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারের সাথে ওপেনিং এ এলেন মেহেদি। একদিকে সমীকরণের মারপ্যাঁচ অন্যদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ১৮৩ রানের বিশাল টার্গেট। বিশাল চাপের মুখে নেমেই মেহেদি করলেন অসাধারণ এক হাফ সেঞ্চুরি।
পিঞ্চ হিটার হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ একটা সুনাম রয়েছে মেহেদি হাসানের। তাছাড়া বল হাতেও তিনি বেশ কার্যকরী একজন স্পিনার। তাঁর প্রমাণ তো কুমিল্লার বিপক্ষে খেলা ম্যাচটাতে দিলেন। ইনিংসের শেষ ওভারে মাত্র তিন রান দিয়ে তুলে নিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। সে গল্প তোলা থাক। আজকে শুধু হবে মেহেদির ব্যাটিং বন্দনা।
১৮৩ রানের বিশাল টার্গেট, সাথে বাদ পড়ে যাওয়ার সমীকরণে ব্যাট হাতে অধিনায়ক পাঠিয়ে দিলো পিঞ্চ হিটার মেহেদিকে ওপেনিং করতে। এবারের বিপিএলে তাঁর ওপেনিং এর অভিজ্ঞতা না থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ওপেনিং করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। মূলত একটা ভাল শুরু এনে দেওয়াই ছিলো তাঁর দায়িত্ব। কিন্তু খুলনার ইনিংসের শুরু থেকেই কুমিল্লার বোলারদের মেরে তুলোধুনো করতে শুরু করেন আন্দ্রে ফ্লেচার।
মেহেদি প্রথম দিকে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করলেন ফ্লেচারকে। তিনি যেন শুধু অপেক্ষা করছিলেন নিজের সুযোগের। যখন তিনি দেখলেন ফ্লেচারের বেধম পিটুনিতে ভাল একটা পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে তখন তিনিও হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। একদিকে ফ্লেচার, অন্যদিকে মেহেদি। কুমিল্লার বোলারদের যেন কোন প্রতিরোধের ভাষাই জানা ছিলো না এদিন।
কুমিল্লার বোলারদের উপর চড়াও হয়ে যখন ফ্লেচার করে ফেলেছে ৮৯। ঠিক তখন ৩১ বলে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মেহেদি। এ সময়ে তাঁর ব্যাট থেকে তিন চার ও সমান সংখ্যক দৃষ্টিনন্দন ছক্কা আসে। প্রায় ১৬০ এর কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে এদিন ব্যাট করে নিজের ব্যাটার সত্ত্বাকে আবারো জাগিয়ে তোলার মেহেদি। তিনি যে একজন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার তাঁর প্রমাণই রাখলেন তিনি।
শুধু রানের বিচারে আসলে মেহেদির এই ইনিংস বর্ণনা করাটা যথার্থ হয় না। এমন কঠিন সমীকরণের মাঝে তিনি যে তাঁর মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যাট করেছেন শুরু থেকে একেবারে শেষ অবধি। এর আগে অবশ্য বল হাতেও দূর্দান্ত সময় পার করেছেন। ফাফ ডু প্লেসিসের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দিনে মেহেদি পূর্ণ চার ওভার বল করে দিয়েছেন কেবল মাত্র ২৯টি রান। শেষ ওভারে তিন রানের বিনিময়ে এক উইকেট নেওয়ার পাশপাশি নিয়েছেন আরো একটি উইকেট।
চাপের মুখে ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট-বল হাতে সমানতালে পারফর্ম করাই মনে করিয়ে দেয় যে ঠিক কতটা পরিপক্কতা ইতোমধ্যেই অর্জন করে ফেলেছেন তরুণ এই ক্রিকেটার। দলের প্রয়োজনে যেকোন পজিশনে, যে কোন পরিস্থিতিতে তিনি যে কার্যক্যর ভূমিকা রাখতে পারেন সেটাই যেন আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মেহেদি। তাঁর সতীর্থ যখন একপ্রান্তে মারকুটে ব্যাটিং করছেন তখন তাঁর ঠিক কি করতে হবে তিনি সেটা জানেন।
এছাড়াও ঠিক কখন তাঁর ব্যাট হাতে এক্সেলারেট করে খেলতে হবে সেটাও যেন তাঁর মস্তিষ্কের চির জাগ্রত। এমন ক্রাইসিসের সময়ে মেহেদীদের ব্যাট জ্বলে উঠবে, বল থেকে ঝড়বে আগুন এমনটাই তো প্রত্যাশা সকলের। সেই প্রত্যাশার বাহক হয়েই তিনি আবার হাজির হলেন।
খুলনার জিততে যখন কেবল মাত্র একটি রান প্রয়োজন তখন খুলনার প্রথম উইকেট হিসেবে পতন ঘটে মেহেদী হাসানের। দলকে জয়ে বন্দরে পৌঁছে দিয়েই তিনি ফিরেছেন সাজঘরে। শেষে নোঙরটা গেড়েছেন সৌম্য সরকার। ৪৯ বলের ৭৪ রানের এক দূর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন মেহেদী। প্রায় দেড়শ স্ট্রাইক রেটের এই ইনিংসটা মনে রাখার মতো এক স্মৃতি হয়ে রইলো মেহেদির জন্যে। এখান থেকেই তিনি হয়ত সেই আত্মবিশ্বাসটা পেলেন যে তিনি প্রস্তুত যেকোন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যে।
মেহেদির দূর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরি ও আন্দ্রে ফ্লেচারের অনবদ্য সেঞ্চুরির বদৌলতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ালিফায়ারে পৌঁছে গেলো খুলনা টাইগার্স। খুলনার এ জয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলো হট ফেভারিট মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। আর চতুর্থ দল হিসেবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে প্রথম এলিমিনেটরে মুখোমখি হবে খুলনা টাইগার্স।