মেহেদীর মগজ ধোলাই!

ব্যাটিং কিংবা বোলিং – দু’টো জায়গাতেই মেহেদী হাসান পারফরম করেছেন খুব বিরুদ্ধ দু’টি পরিস্থিতিতে। দু’টো জায়গাতেই তিনি সফল। কেবল টেকনিক দিয়ে নয়, তিনি খেলেছেন মনস্তাত্বিক দিক থেকেও।

ব্যাট হাতে যখন নামেন, তখন মাত্র ৬৫ রান তুলতেই পাঁচটি উইকেট হারিয়ে ফেলেছে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। সেখান থেকে নুরুল হাসান সোহানকে সাথে নিয়ে যোগ করেন ৮৯ রান। মেহেদী এর মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি পান।

৩২ বলে করে ৫০ রান। এর মধ্যে ছিল তিনটি চার ও চারটি ছক্কা। উইকেটে আসার পর ‍উইকেট ধরে রাখার সাথে সাথে রানের চাকাটা বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটাও করতে হয়েছে মেহেদীকে। বরাবরই মেহেদী সাহসী ক্রিকেটার। এবার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে সেই সাহস দেখানোর সুফলটাই পেলেন তিনি।

মেহেদীকে পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই নানা রকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তিনি ছিলেন অফ স্পিনার। ঘরোয়া ক্রিকেট যখন খেলা শুরু করেন, তখন তিনি বনে যান টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।

সেখানে ব্যাট করে ছয়টা প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরিও আছে তার। ১৭৭ রানের ইনিংসও খেলেছেন দু’বার। সে সময় খুবই মাথা ঠাণ্ডা এবং ধীরস্থির একজন ব্যাটসম্যান বলে পরিচিত ছিলেন। তবে, বিরাট বিপ্লব হল ২০১৮ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)।

খেললেন, অফস্পিনার হিসেবে। লোয়ার অর্ডারে কার্যকর সব ইনিংস খেলা শুরু করলেন। পরের বছরের বিপিএলে আবার তাকে দিয়ে ইনিংসের সূচনা করালো ঢাকা। সেখানেও তিনি সফল হলেন। কয়েকটা ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিও পেলেন।

নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেহেদী এখন লেট মিডল অর্ডারে থিতু হয়েছেন। মিরপুরে টুর্নামেন্টের ‍উদ্বোধনী ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরলেন সেই পরিচয়েই।

তাতে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী জয়ের বড় একটা ক্ষেত্র পেল।

জয়ের জন্য, বেক্সিমকো ঢাকার সামনে লক্ষ্য ১৭০ রানের। শেষ ওভারে দরকার নয় রান। তখন ফের ম্যাচ বাঁচাতে ডাক পড়লো মেহেদীর। উইকেটে মারমুখী ভূমিকায় মুক্তার আলী।

মেহেদী ঠাণ্ডা মাথায় প্রথম তিনটা বল ডট। পরের বলটায় চার, এরপরেরটায় নো। ফ্রি হিটটাও ডট। শেষ বলে চার রান লাগার সমীকরণে আর পারেননি মুক্তার। দুই রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রাজশাহী। হাফ সেঞ্চুরির পার চার ওভারে ২২ রান দিয়ে এক উইকেট পেয়ে ম্যাচ শেষ করেন মেহেদী।

নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল মুক্তারের। প্রথমে বোলিংয়ে চার ওভারে ২২ রান হজম করে পেয়েছিলেন তিন উইকেট। পরে ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে ২৭ রান করে ছিলেন অপরাজিত। কিন্তু, বুদ্ধির লড়াইয়ে হেরে গেছেন শেষ ওভারে, মেহেদীর কাছে।

শেষ ওভারের শুরু থেকেই ব্লক হোলে বোলিং করে গেছেন মেহেদী। সেখানে ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টাই করেননি মুক্তার। কিংবা সাব্বিরকে স্ট্রাইক দেওয়ার কথাই ভাবেননি। এখানেই পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছেন মেহেদী। বলা উচিৎ মেহেদী যতটা বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন, মুক্তার ততটাই বোকার মত ম্যাচটা হারিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link