বিস্ময়ের পিরামিড মানবিন্দর বিসলা

মরুভূমির মাঝে পিরামিডগুলো নিশ্চয়ই বিস্ময়ের জন্ম দেয়। একজন মানুষের জীবন ঠিক যেন মরুভূমির বুকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা পিরামিডগুলোর মতই, বিস্ময়কর। আবার আরেকটা দিকে মিল রয়েছে। সমতল থেকে মানুষের জীবন একটা পর্যায় পৌঁছে যায় উন্নতির শিখরে। আবার সেখান থেকে ক্রমশ নিচের দিকে আবার সমতলে মিলিয়ে যায়।

মরুভূমির মাঝে পিরামিডগুলো নিশ্চয়ই বিস্ময়ের জন্ম দেয়। একজন মানুষের জীবন ঠিক যেন মরুভূমির বুকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা পিরামিডগুলোর মতই, বিস্ময়কর। আবার আরেকটা দিকে মিল রয়েছে। সমতল থেকে মানুষের জীবন একটা পর্যায় পৌঁছে যায় উন্নতির শিখরে। আবার সেখান থেকে ক্রমশ নিচের দিকে আবার সমতলে মিলিয়ে যায়।

ভারতের ক্রিকেটার মানবিন্দর বিসলার জীবনটা ঠিক মিলে যায় পিরামিডের সাথে। অনূর্ধ্ব ১৯ দলে তিনি খেলেছেন। ভারতের হয়ে যুব বিশ্বকাপেও অংশ নিয়েছিলেন। প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের তালিকায় নিজের নামটিও লিখিয়ে ফেলেছিলেন। বিস্ময়ের দেখা মেলে তো ক্রিকেট জীবন এগোতে থাকলে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ছিলেন রীতিমত একজন বোলার হিসেবে।

তবে নিয়তি বিস্ময়ের জন্ম দেয়। আমাদের চমকে দেওয়ার কোন সুযোগই যেন হাতছাড়া করে না। বিসলা পরবর্তী সময়ে বনে গিয়েছিলেন একজন উইকেট রক্ষক ব্যাটার। ভাবুন তবে, বোলার থেকে সোজা উইকেট রক্ষক ব্যাটার! নিজের এমন আমুল পরিবর্তন নিশ্চয়ই বিসলাকেও বিস্মিত করে। তবুও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের তকমাটা কখনো নেমে যায়নি তাঁর কাঁধ থেকে।

তিনি মূলত আলোচনায় এসেছিলেন ২০১২ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মধ্য দিয়ে। গৌতম গম্ভীরের সে দলকে প্রথম শিরোপার স্বাদটা তিনিই দিয়েছিলেন। ফাইনালে কি অনবদ্য এক ইনিংসই তিনি খেলেছিলেন! কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে মাত্র ৪৮ বলে ৮৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ধ্বংস করে দেন চেন্নাই সুপার কিংসের শিরোপা জয়ের আশা। এমন বিধ্বংসী পারফরমেন্সের পর নজর কেড়ে নিতে খুব একটা সমস্যা হয়নি মানবিন্দর বিসলার।

ধারণা করা হচ্ছিল খুব শীঘ্রই তিনি তাঁর ব্যাটিংয়ের আলো ছড়িয়ে জায়গা করে নেবেন ভারতের জাতীয় দলে। প্রত্যাশার সে মশালে তিনি যেন আরও খানিকটা জ্বালানি ঢেলে দিলেন পরের বছর কলকাতার হয়ে করেন ১৪ ম্যাচে ২৩৬ রান। ঠিক সে সময়টা পিরামিডের একেবারে চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। ধারণা ছিল এই বুঝি মিলে যাবে ভারত জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের জার্সি।

কিন্তু হুট করেই ছন্দপতন। পিরামিডের ঢাল বেয়ে সমতলে মিলিয়ে যাওয়ার শুরু। ২০১৫ সালের আইপিলের আগে তাঁকে ছেড়ে দেয় কলকাতা। এর পিছনে তাঁর বাজে পারফরমেন্সই দায়ী। সময় নিষ্ঠুর। সময়ের সাথে আমাদের এগিয়ে যেতেই হয়। স্মৃতি শুধুই স্মৃতি। অগ্যতা ২০১৫ সালে নতুন আইপিএল দল খুঁজে পান মানবিন্দর। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু তাঁকে কিনে নেয়।

তবে নতুন রঙেও বেশ মলিন ছিলেন মানবিন্দর বিসলা। ক্রমশ আইপিএলের হাজার আলোর আড়াল হতে শুরু করেন। তিনি মূলত ক্রিকেটের ক্রমবর্ধমান গতির সাথে পেরে উঠছিলেন না। আইপিএলে তাঁর ক্যারিয়ার থমকে যায়। আর কোন দিকের খোঁজ না পেয়ে তিনি মনোযোগ দেন প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট। মূলত রঞ্জি ট্রফিতে মনোনিবেশ করেন।

তবে একবার ঢাল ধরে ফেললে টিকে থাকা বড্ড কঠিন। সেটাই ঘটে মানবিন্দরের সাথে। গোয়ার রয়ে রঞ্জি ট্রফিতেও অনুজ্জ্বল তিনি। কিছুতেই যেন আর কিছু হচ্ছিল না তাঁর জীবনে। হারানোর রাস্তা ধরে তিনি ২০১৭ সালে খেলে ফেলেন নিজের ক্যারিয়ারের শেষ স্বীকৃত ম্যাচ। এরপর ক্রিকেট ময়দানে আর ফেরা হয়নি বিসলার। তবে তিনি ক্রিকেটের ফিরতে চাইছেন নতুন মোড়কে। ধারাভাষ্যকার হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।

ভারতের জাতীয় দলের জার্সিটা আর পরা হল না তাঁর। সম্ভাবনার সকল মশালের জ্বালানি তিনি আর সাপ্লাই দিয়ে যেতে পারেননি। আলো ঝলমলে দিনের শেষভাগে অন্ধকারে তলিয়ে গেলন মানবিন্দর বিসলা। পিরামিডের জীবন তাঁর!

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...