ম্যারাডোনার টটেনহ্যাম অধ্যায়

প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা হয়ে ন্যাপোলিতে থিতু হয়েছিলেন। এ কথা কম বেশি সকলেই জানেন। কিন্তু তিনি একবার ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারের হয়েও মাঠ মাতিয়েছিলেন, এ কথা কয়জন জানেন?

মাত্র একটি ম্যাচে বিখ্যাত ওল্ড হোয়াইট হার্ট লেইন স্টেডিয়ামে প্রায় ৩০ হাজার দর্শকের সামনে তিনি দেখিয়েছিলেন ফুটবল নিয়ে নান্দনিক সব কলাকৌশল। ১৯৮৬ সালের মে মাসে মেক্সিকো বিশ্বকাপ শুরু হবার মাসখানেক আগে ম্যারাডোনাকে দেখা যায় সেখানে। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ম্যারাডোনা ধার করা বুট পরে খেলেছিলেন সেদিন।

সেবার আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সতীর্থ অসভালডো সিজার আর্ডাইলস সাথে দেখা করতে এসেছিলেন ম্যারাডোনা। তাকে অজি আর্ডাইলস নামেই চিনতো সকলে। বন্ধুকে পেয়ে মাঠে নামার প্রস্তাব দিয়ে বসেন তিনি। ম্যারাডোনাকে বুট দেয়ার প্রস্তাব দেন ক্লাইভ অ্যালেন।

টকস্পোর্টে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সে সময়ের কথা তুলে ধরেন তিনি। অ্যালেন বলেন, ‘অজি (অসভালডো) জানতে চাচ্ছিলো কে সাড়ে ছয় মাপের বুট পরে। আমি বললাম, আমি পরি। আমার কাছে পুরনো এক জোড়ার পাশাপাশি নতুন এক জোড়া আছে। পুরনো জোড়া পুরো মৌসুমে পরি।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমি ডিয়েগোকে বললাম যে কোন এক জোড়া বেছে নিতে।’

ম্যারাডোনা তার সতীর্থ আর্ডাইলসের মাধ্যমে জানালেন পুরনো জোড়া পরতে চান তিনি। অ্যালেন তাকে নতুন জোড়া পরতে রাজি করালেন একটি উপায়ে। খেলা শেষে নতুন বুট জোড়ায় অটোগ্রাফ দিতে হবে তার জন্য। অবশেষে অ্যালেনের নতুন বুট পরে মাঠে নামেন ম্যারাডোনা। সে ম্যাচে মধ্যমাঠে ম্যারাডোনার সাথে ছিলেন গ্লেন হডল, ক্রিস ওয়াডল ও আর্ডাইলস।

ইন্টার মিলানকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ম্যারাডোনার উপস্থিতিকে স্মরণীয় করে রাখে টটেনহাম। অ্যালেন একটি গোল করেন। অন্যটি করেন মার্ক ফালকো।

‘আমি এমন ম্যাচ কখনও খেলিনি। যেন আমি দর্শক। ডিয়েগো ও গ্লেনকে মনে হচ্ছিলো অন্য গ্রহের ফুটবলার,’ মুগ্ধ কণ্ঠে জানান দেন অ্যালেন। ‘বল তাদের পায়েই দেখতে চাচ্ছিলাম সবসময়। তাদের ফ্লিক ও স্কিল ছিলো অবিশ্বাস্য,’ যোগ করেন অ্যালেন।

ম্যারাডোনার উপস্থিতিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন ওয়াডলও। তিনি সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমরা যখন ম্যারাডোনাকে নিয়ে আলোচনা করছিলাম তখন তিনি ড্রেসিং রুমে আসেন। আমার সাথে হাত মিলিয়ে বলেন, তুমি খুব ভালো খেলোয়াড়। তোমার ইতালিতে খেলা উচিৎ।’

এর পেছনের ঘটনাটা মজার। আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। তারা তখন নরওয়েতে একটি ম্যাচ খেলেছে। এরপরই ম্যারাডোনা ম্যানেজার কার্লোস বিলার্ডোকে জানান, ‘আমি লন্ডন যাচ্ছি অসির জন্য।’ জবাবে বিলার্ডো না করে দেন। ম্যারাডোনার উত্তর যেন প্রস্তুত ছিলো, ‘না, আমি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আমি যাচ্ছি।’

এজন্য অসির হৃদয়ে বন্ধুর জন্য বিশেষ জায়গা বরাদ্দ রয়েছে, ‘সে আমার জন্য এসে টটেনহামের হয়ে খেলেছে, যা আমার জন্য ছিলো বিশেষ কিছু।’

সর্বশেষ ২০১৭ সালে বন্ধু অজির সাথে দেখা করতে আসেন ম্যারাডোনা। সেদিন ওয়েম্বলিতে ম্যারাডোনার আরেক সতীর্থ পচেত্তিনোর টটেনহাম হটস্পার ৪ – ১ গোলে লিভারপুলকে হারায়। এ জয়ের মাধ্যমে কিংবদন্তি এ ফুটবলারকে সম্মান জানাতে সক্ষম হয় টটেনহামের নতুন প্রজন্ম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link