উদ্দাম স্টোয়িনিসে আগুনে অজি

ম্যাচের আলোটা একাই কাড়লেন মার্কাস স্টোয়িনিস। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একজন ব্যাটারের কাছে যেমন দাবি থাকে তাঁর পুরোটাই মিটিয়ে দিলেন তিনি। আর তাঁর দাপুটে ব্যাটিংয়ে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফিরল ফরম্যাটটির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।

গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে আসা শ্রীলঙ্কা নিজেদের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে মূল পর্ব শুরু করলেও অস্ট্রেলিয়া হেরে যায় নিউজিল্যান্ডের কাছে। বিশ্বকাপে নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে পরাজিত করল অ্যারন ফিঞ্চের দল। 

নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারলেও দুই রাজার লড়াইয়ে পরিষ্কার ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিলো স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। পার্থ স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।

আগের ম্যাচে নিজেদের ছায়া হয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা জ্বলে উঠেন ইনিংসের শুরুতেই। আগের দুই ম্যাচে টানা অর্ধশতক করা ওপেনার কুশাল মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরান বিশ্বকাপের ঠিক আগেই ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া প্যাট কামিন্স।

দলীয় ছয় রানে মিশেল মার্শের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই উইকেট কিপার ব্যাটার। শুরুতেই উইকেট হারানো লঙ্কানদের হাল ধরেন আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এই দুইজনে দলের সংগ্রহে ৫৮ বলে ৬৯ রান যোগ করেন।

তবে, দু’জনের শ্লথগতির ব্যাটিংয়ে লঙ্কানদের রানের গতি কমে আসে। দলীয় ৭৫ রানে কোভিডাক্রান্ত অ্যাডাম জাম্পার জায়গায় দলে সুযোগ পাওয়া অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের দারুণ ক্যাচিংয়ে ২৩ বলে ২৬ করে ফিরে যান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। এরপর লঙ্কানদের ব্যাটিং যেন পথ হারায়। ১১.৩ থেকে ১৭.৩ এই ছয় ওভারে ৪৫ রানে শ্রীলঙ্কা হারায় ৬ উইকেট।

এক প্রান্তে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিল চললেও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বিদায়ে মাঠে নামা চারিথ আসালাঙ্কা ছিলেন অবিচল। শেষ পর্যন্ত তার ২৫ বলে ৩৮ রানে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৭ রান। ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা সর্বোচ্চ ৪৪ বলে ৪০ রান করেন।

অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা পুরো ইনিংসে গতি আর স্যুইং দিয়ে শ্রীলঙ্কান ব্যাটারদের তটস্থ করে রাখলেও বলের লাইন ছিলো বেহাল। পুরো ইনিংসে ১২ টি ওয়াইড সহ অতিরিক্ত ২৩ রান বিলিয়ে দেন মিশেল স্টার্ক-প্যাট কামিন্সরা। মিশেল স্টার্ক ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নেন। 

জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কার পেসাররা যেন একেকজন ওয়াসিম আকরাম-গ্লেন ম্যাকগ্রা রূপে আবির্ভূত হন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের সামনে। দলীয় ২৬ রানে ওয়ার্নারের উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া পাওয়ারপ্লের ছয় ওভারে এক উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৩ রান তুলতে পারেন।

ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক  অ্যারন ফিঞ্চ। পাওয়ারপ্লে ছয় ওভারে ১৮ বল মুখোমুখি হয়ে মাত্র ৯ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার। আরেক ব্যাটার মিচেল মার্শের রান তখন ৮ বলে ১। ইনিংসের সপ্তম ওভারে অধিনায়ক দাসুন শানাকা মিশেল মার্শের ক্যাচ ছেড়ে দিলে দুই ব্যাটার ভয়ঙ্কর হওয়ার ইঙ্গিত দেন। অষ্টম ও নবম ওভারে ১৫ ও ১৩ রান তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় অস্ট্রেলিয়া।

তবে, অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে দলীয় ৬০ রানে  লং অফে ভানুকা রাজাপাকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন মিশেল মার্শ। এরপর উইকেটে আসেন অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ম্যাক্সওয়েল এর ১২ বলে ২৩ রানের ঝড়ে পাওয়ারপ্লেতে ধুঁকতে থাকা অজিদের ১০ ওভার শেষে দুই উইকেট হারিয়ে রান দাঁড়ায় ৮৫।

এরপর মাহিশ থিকসানা, লাহিরু কুমারা ও চামিকা করুনারত্নের তিন ওভারে ম্যাক্সওয়েলের উইকেট তুলে মাত্র ১২ রান দিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় লঙ্কান সিংহরা। তবে মার্কাস স্টোয়িনিসের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়ার টি টোয়েন্টি ইতিহাসে দ্রুততম অর্ধশতকে ভর করে ম্যাচকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে তারা। মাত্র ১৭ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন ডানহাতি ব্যাটিং অলরাউন্ডার।

স্টোয়িনিসের ছক্কা বৃষ্টিতে মাত্র ১৬.৩ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। স্টয়নিসের ১৮ বলে ৫৯ রানের ইনিংসে ৪ টি চার ও ৬ টি ছক্কা মার রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ৪২ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য ম্যাচ সেরা হন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার মার্কাস স্টোয়িনিস।ব্যাটিং ঝড়ের বেশিরভাগই প্রভাব পড়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উপর। তার করা ৩ ওভারে ৫৩ রান তোলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা। 

এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের চার নাম্বারে উঠে এল অস্ট্রেলিয়া পাশাপাশি দ্রুত জয়ে প্রথম ম্যাচের বাজে রানরেটেও কিছুটা প্রলেপ দিলো তারা। যদিও আরেকবার কাঠগড়ায় উঠল অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের ব্যাট। তিনি ৪২ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত ছিলেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link