সেই ৫, এই ৭

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন। আট বলে এক চারে করেছেন মাত্র সাত রান। মেহেদী হাসানের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর রানক্ষরা তাঁর আজো কাটলো না। যদিও, এই চার বছরে বাংলাদেশ দল যতটা না পাল্টেছে – তার চেয়েও বেশি পাল্টে গেছে মার্ক চ্যাপম্যানের জীবন।

নিউজিল্যান্ডের মার্ক চ্যাপম্যান আগে কখনো এই বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে ব্যাট করতে নামেননি। তবে, মার্ক চ্যাপম্যান ঠিকই বাংলাদেশের বিপক্ষে আগেও ব্যাটিং করেছেন, তাও নাকি বছর সাতেক আগে। কি, একটু গোলমাল মনে হচ্ছে না?

হ্যাঁ, বিষয়টা একটু গোলমেলেই বটে। মার্ক চ্যাপমান আগে যখন খেলেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে, তখন তিনি নিউজিল্যান্ডের ছিলেন না। ছিলেন হংকংয়ের। সেটাও খুব কাছাকাছি সময়ের ঘটনা নয়।

হংকংয়ের হয়ে মার্ক চ্যাপম্যানের বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা করতে ফিরে যেতে হবে সেই ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে। সেবার চট্টগ্রামে ক্যারিয়ারের অন্যতম সুখকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সেদিন স্বাগতিক বাংলাদেশকে মাটিতে নামায় হংকংয়ের মত ‘পুঁচকে’ দল। সেদিন প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে মাত্র ১০৮ রানে অলআউট করে হংকং। জবাব দিতে নেমে শেষ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় হংকং। তখনও দুই উইকেট হাতে ছিল। সেবারই যেকোনো ফরম্যাটে প্রথমবারের মত কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারালো হংকং।

তখন থেকেই সহযোগী দেশের বাঘ হিসেবে বেশ নামডাক চ্যাপম্যানের। যদিও বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের সেই ম্যাচে করেছিলেন মাত্র পাঁচ রান। মাত্র সাত বল স্থায়ী হয় তাঁর ইনিংস। এখনকার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তখন প্রায় নিয়মিতই বোলিং করতেন। মাহমুদউল্লাহর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন চ্যাপম্যান।

তবে, হংকংয়ে কি আর ভবিষ্যৎ আছে ক্রিকেটের! যতই স্বপ্ন থাকুক, বাস্তবতা আর কতটুকু! চ্যাপম্যান নিজেও জানতেন বড় ক্রিকেটার হতে চাইলে হংকংয়ের ভরসায় বেশিদিন থাকা যাবে না। তাই তিনি চলে আসলেন নিউজিল্যান্ডে।

যদিও, চ্যাপম্যানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা হংকংয়ে, তাঁর বাবার আছে নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব। আর পড়াশোনার সুবাদে চ্যাপম্যানও বড় একটা সময় কাটান নিউজিল্যান্ডে। ফলে, একটা সময় নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা শুরু করলেন। সেখানে ভাল করতে করতে একটা সময় ডাক আসলো নিউজিল্যান্ড দল থেকেই।

২০১৪ সালে যে তরুণ হংকংয়ের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন – চার বছর বাদে তিনি ডাক পেলেন নিউজিল্যান্ড দল থেকে। যদিও, এখনও নিউজিল্যান্ড দলে যাওয়া আসার মধ্যে আছেন। এখন নিউজিল্যান্ড দলে তারকার কোনা কমতি নেই, প্রতিভার অভাব নেই। আর চ্যাপম্যান নিজেও নিজেকে প্রমাণ করার মত বড় কোনো ইনিংস খেলতে পারেননি।

হয়তো, এই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও কেন উইলিয়ামসন বা রস টেইলররা থাকলে চ্যাপম্যানের ডাকও আসতো না। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে একাদশে থাকলেও ব্যাট করার সুযোগ মেলেনি।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন। আট বলে এক চারে করেছেন মাত্র সাত রান। মেহেদী হাসানের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর রানক্ষরা তাঁর আজো কাটলো না। যদিও, এই চার বছরে বাংলাদেশ দল যতটা না পাল্টেছে – তার চেয়েও বেশি পাল্টে গেছে মার্ক চ্যাপম্যানের জীবন।

নিশ্চয়ই তিনি নিজেকে আরো বেশি পাল্টে ফেলার স্বপ্ন দেখেন। শুধু নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলাই, বড় ব্যাটসম্যান হওয়ার স্বপ্ন তাঁর বুকে। স্বপ্নটা সত্যি হলে, নিউজিল্যান্ডের লাভটাই সবচেয়ে বেশি!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...