ধোঁয়াশা কেটেছে, সকল জল্পন কল্পনার অবসান ঘটেছে। বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সাকিব আল হাসানের নাম। আসন্ন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে তাঁর নেতৃত্বই খেলবে টিম বাংলাদেশ। আর বিসিবির এ ঘোষণার মধ্য দিয়েই যেন মিলে গেল মাশরাফি বিন মুর্তজার করা একটি ভবিষ্যদ্বাণী। কি সেটি?
প্রায় ৪ বছর আগের কথা। ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাকিবকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। সেদিনের আইসিসির এমন ঘোষণার পর তিক্ততম একটি দিনের সাক্ষী হয়েছিল পুরো বাংলাদেশ।
আর ঐ দিনই সাকিবকে নিয়ে ফেসবুকে আবেগপ্রণ একটি পোস্ট করেছিলেন মাশরাফি। তখনকার ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন তামিম। কিন্তু মাশরাফি সেই পোস্টে সাকিবকে ২০২৩ বিশ্বকাপের সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন।
সাকিবের সাথে এটি ছবি যুক্ত করে মাশরাফি সেই পোস্টে লিখেছিলেন, ‘দীর্ঘ ১৩ বছরের সহযোদ্ধার আজকের ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই কিছু বিনিদ্র রাত কাটবে আমার। তবে কিছুদিন পর এটা ভেবেও শান্তিতে ঘুমাতে পারব যে, তাঁর নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। কারণ নামটি তো সাকিব আল হাসান।’
কাকতালীয় কিংবা বিস্ময়কর হিসেবে মাশরাফির করা সেই ভবিষ্যদ্বাণীই এবার মিলে গেল। তামিম ইকবাল ওয়ানডে নেতৃত্ব ছাড়লেন। আর তাঁর জায়গায় নেতৃত্বে আসলেন সাকিব।
অবশ্য তার জন্য কম জলঘোলা হয়নি। এ মাসের শুরুতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সবাইকে চমকে দিয়ে ওয়ানডে দলের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তামিম ইকবাল। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ খেলবেন না।
এরপর থেকেই মূলত বিসিবি নতুন অধিনায়ক খোঁজার দৌড়ে ছিল। যদিও শুরু থেকেই সবার প্রথম পছন্দ ছিলেন সাকিব। কিন্তু সাকিব সেই দায়িত্ব নেবেন কিনা, তা নিয়ে উঠেছিল কিছু প্রশ্ন। এ ছাড়া অধিনায়ক হওয়ার দৌঁড়ে মেহেদি হাসান মিরাজ, লিটন দাসকে নিয়েও গুঞ্জন উঠেছিল। তবে শেষমেশ সাকিবের উপরেই আস্থা রেখেছে বিসিবি।
সাকিবের জন্য নেতৃত্ব অবশ্য নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই তিনি অন্য দুই ফরম্যাট টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক রয়েছেন। আর ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলেছিল তাঁর অধীনেই।
নেতৃত্বে সাকিবের আগমনের সাথে অবশ্য মাশরাফির অনেক যোগসূত্রও রয়েছে। এমনিতে মাশরাফি অধিনায়ক থাকাকালে বেশির ভাগ সময়ে সাকিবই ছিলেন ডেপুটি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে যখন মাশরাফির অধিনায়কত্বের শুরু, তখন সহ-অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। আর মাশরাফি ইনজুরিতে পড়ার পর সেই দায়িত্ব যায় সাকিবের কাঁধে।
তবে দুই বছর বাংলাদেশের অধিনায়ক থাকার পরে তিনি নেতৃত্ব হারান। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়েতে দলগত ব্যর্থতার অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সাকিবকে। এর ৬ বছর পর অবশ্য আবারো নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেলে আবারো নেতৃত্বে ফেরেন সাকিব। ঐ একই বছরে লাল বলের ক্রিকেটেও অধিনায়ক হন সাকিব। তবে, ২০১৯ সালে আইসিসি কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে সব হারান তিনি। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞায় সে সময় এক বছর তো মাঠেই ফিরতে পারেননি এ অলরাউন্ডার।
তবে প্রত্যাবর্তনের কয়েক মাস পরই আবারো সব ফিরে পেতে শুরু করেন সাকিব। টেস্ট কাপ্তানি থেকে মুমিনুলের প্রস্থানের কারণে সাকিব ফিরে পান লাল বলের অধিনায়কত্ব। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যর্থ হওয়ায় সেই দায়িত্ব যায় সাকিবের কাঁধে।
এবার সেই ধারাবাহিকতায় এক দিনের ক্রিকেটেও বাংলাদেশকে সামলাবেন সাকিব। ২০১১ এর পর আবারো ২০২৩ সালে আবারো বিশ্বমঞ্চে লাল সবুজের জার্সি গায়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অপেক্ষায় থাকছেন সাকিব।
মাশরাফির করা সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলেছে। সাকিবের নেতৃত্বে ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু মাশরাফি তো ফাইনালের কথাও বলেছিলেন। সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলবে কি? আপাতত আগামী ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে। হয়তো সবার মাঝেও মাশরাফির মতো ঐ একই চাওয়া, সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলুক, আর সোনালি ট্রফিটা প্রথম বারের মতো বাংলাদেশে আসুক চ্যাম্পিয়ন তকমা নিয়ে।