মাশরাফি, ম্যাজিক নাকি মিথ?

মাশরাফি কী জাদুকর। সত্যিই কী ম্যাশ ছুলে বদলে যায় সবকিছু? নাকি মাশরাফি বিন মুর্তজা শুধুই একজন মিথ। সেসব প্রশ্ন ছোড়া থাক অনন্ত পানে। এতসব উত্তর খোঁজার সাধ্যই কজনের আছে। আমরা বরং শুনতে পারি কিছু বাইশ গজের গল্প। যেসব গল্প মাশরাফি লেখেন সবুজ গালিচায়। কখনো কলার উঁচু করে, কখনো খোঁড়াতে থাকা হাটুটা নিয়ে, কখনো আবার সতীর্থ কারো কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে।

মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে কত গল্পই তো ডালপালা মেলেছে। কত গল্পই তো লেখা হয়, শোনা যায় বাতাসের সাথে। তবে সবকিছুরই তো একটা শেষ আছে। মাশরাফিকেও তাই ফুরিয়ে যেতে হয়। প্রকৃতি সেই শূন্যস্থানও পূরণ করে দেয় হয়তো। তবুও আবার যখন তিনি বলটা হাতে তোলেন, আবার যখন অধিনায়কত্বের টুপিটা মাথায় ওঠে সবকিছু এক লহমায় পালটে যায়। এই মাশরাফির সাথে কেউ পেরে উঠে না আর।

ক্রিকেট মাঠে তাঁকে আর দেখা যায়না বললেই হয়। এক বিপিএল, ডিপিএলের মত আসরগুলোতেই তিনি মাঠে নামেন। সারাবছর ব্যস্ত থাকতে হয় রাজনীতি নিয়েই। এমনকি এই বিপিএলও খেলছেন অনেক রাজনৈতিক ব্যস্ততা নিয়েই। তবুও মাঠে যখন প্রবেশ করেন মাশরাফি হয়ে উঠেন অন্য মানুষ। যে মাশরাফি আর সবার জন্য শুধুই এক অনুপ্রেরণার নাম।

এই যেমন এবার সিলেট স্ট্রাইকার্স ভরসা রেখেছে মাশরাফির উপর। মাশরাফি নিজের মত করে দলটাকে সাজিয়েছেন। বিপিএলে টানা চার জয় পেয়েছে দলটি। সিলেট যেন অপ্রতিরোদ্ধ। মাঠে সিলেটের পারফর্মেন্স প্রশংসায় ভাসছে। তবে মাশরাফি তো তাঁর খেলাটা শুরু করেছিলেন ড্রাফটের টেবিল থেকেই।

ড্রাফটে মাশরাফিরদের প্রথম পছন্দ ছিল মুশফিকুর রহিম। অনেকদিন ধরে রানক্ষরায় ভুগতে থাকা মুশফিককেই সবার আগে দলে নেয় সিলেট। এরপর মাশরাফি দলে নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। শান্তকে দলের নেয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই অধিনায়ক। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পুরো দেশ শান্তকে নিয়ে সমালোচনা করছিল। তারপরও সেই বিশ্বকাপে গিয়ে ২০০ এর মত রান করে আসছে। যে ছেলে এত চাপ সামলে ২০০ রান করতে পারে তারমানে সে ভালো টাচে আছে।’

মাশরাফির এই ধারণা সত্যি হয়েছে। সিলেটের হয়েও নিয়মিত রান করছেন শান্ত। তবে মাশরাফি তাঁর আসল ম্যাজিকটা দেখিয়েছেন এরপর। সিলেট প্রতিবারই ড্রাফটে ডাক পেয়েছে একেবারে শেষের দিকে। তবুও বেঁছে বেঁছেই ক্রিকেটার নিয়েছে তারা।

লোকাল ক্রিকেটারদের চিনতে ভুল করেননি মাশরাফি। তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান, আকবল আলীদের একে একে দলে নেন। দলে নিয়েছেন রেজাউর রহমান রাজার মত একজন পেসারকেও। তবে এখানেই মাশরাফি ম্যাজিকের শেষ হয় না। দলের ভিতরে একটা বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে পারেন তিনি। সবার মধ্যে একটা তাড়না গেথে দিতে পারেন তিনি। যা ভর করে শান্ত, হৃদয়, জাকিরদের মাঝে।

মাঠে নামার আগে তাদের দেয়া হয় ফ্রি লাইসেন্স। সবার কাছে চাওয়া থাকে স্রেফ নিজের খেলাটা খেলার। হৃদয়ও সেই সাহসটা মাঠে দেখিয়েছেন। নির্ভয় ব্যাটিং দিয়ে দলকে জিতিয়ে চলেছেন। সব দল যখন নির্ভর করে বিদেশি ক্রিকেটারদের উপর। তখন মাশরাফি সেরাটা বের করে আনছেন এই লোকাল তরুণদের কাছ থেকে। এমনকি সিলেটের পুরো কোচিং প্যানেলেও নেই বিদেশি কেউ।

তবুও টুর্নামেন্টের প্রথম চার ম্যাচে চার জয়। দুই ম্যাচেই প্রায় ২০০ রান করে জেতা। প্রতিপক্ষকে ১০০ এর নিচে গুটিয়ে দেয়া। সবকিছুই ইতোমধ্যে দলটা করে দেখিয়েছে। এখনো অনেকটা পথ বাকি। তবে সিলেটকে একটা দল হিসেবে খেলতে দেখা যাচ্ছে। আর দলকে একটা সুতোয় গাঁথতে পারাটাই বোধহয় মাশরাফির সবচেয়ে বড় ম্যাজিক। যেমনটা একসময় তিনি বাংলাদেশ দলকে বেঁধেছিলেন। একটু কী আক্ষেপ হচ্ছে?

মাশরাফিরা কেন চিরদিন থাকেন না! জাদুকরদেরও তো মঞ্চটা ছেড়ে দিতে হয়। নক্ষত্রেরও তো একদিন মরে যেতে হয়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link