মাশরাফি, দ্য ফ্লোটার

নাজমুল হোসেন শান্ত’র আউটটা নিয়ে তখন মাঠ গরম। রেগে যাওয়া শান্তকে তখন সামলাচ্ছেন ডোয়াইন ব্রাভো। সবার নজর সেদিকেই। এমন সময়ই ক্যামেরায় দেখা গেল ব্যাট হাতে নামছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এমন সিদ্ধান্তে অবশ্য তেমন অবাক হওয়ার কিছু নেই। আগেরদিনও পাঁচ নাম্বারে নেমেছিল। আজ তাই বলে তিনে!

গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। বলা ভালো বাঁচা-মরার ম্যাচ। জিতলেই ফাইনাল খেলার হাতছানি। এমন ম্যাচে আজও সিলেটকেভ উড়ন্ত শুরু এনে দিল তাঁদের দুই ওপেনার। নাজমুল হোসেন শান্ত তখন ৪০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ফিরে যাচ্ছেন। আরেক ওপেনার তৌহিদ হৃদয় তখনো বাইশ গজে।

নিয়ম অনুযায়ী জাকির হাসানেরই নামার কথা। তবে মাশরাফি আর নিয়মের ধাঁর ধারেন কবে। নিজেই নেমে গেলেন। লক্ষ্য বাইশ গজে ছোট খাটো একটা ঝড় তোলা। রংপুর রাইডার্সের বোলিং আক্রমণ ওলট-পালট করে দেয়া। তাঁদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য করা।

মাশরাফি তাঁর সবগুলোই ঠিকঠাক করতে পেরেছেন। ছোট্ট তবে ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন। তিনি যখন ব্যাট করছিলেন রংপুরের অধিনায়ক সোহান বারবার বোলার পরিবর্তন করছিলেন। নিজের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা মাশরাফির এমন আচমকা তিনে নেমে যাওয়া, এমন তান্ডব চালানো রংপুর আশাই করেনি।

ফলে মাঠেই পুরো দলেই একটা শক লেগেছে। এই ছোট্ট ইনিংসটা তাঁদের মনোবলে আঘাত হেনেছে। শরীরি ভাষায়ও তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। মাশরাফি যে শুধু মারতেই নেমেছিলেন তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল একেবারে প্রথম বল থেকেই। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হল, বোলিং আক্রমণ এলো মেলো হয়ে গেছে রংপুরের। এমন তিনি আগেও করেছেন, বিপিএলেই।

নিজের খেলা প্রথম বলটাতেই শেখ মেহেদীকে মারলেন বিশাল এক ছয়। মিডল অর্ডারে নেমে স্পিনারদের পেটাবেন সেটাই তাঁর পরিকল্পনা ছিল। মাশরাফি এমনটা আগেও করেছেন। তবে আজ তিনি পেসারদেরও ছাড়লেন না। নিজের খেলা দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরেছেন হাসান মাহমুদকে।

হাসান মাহমুদ, রবিউল হক কেউই রেহাই পায়নি তাঁর কাছ থেকে। এরপর যতক্ষণ বাইশ গজে ছিলেন তাঁর মোটো শুধু মেরে খেলাই ছিল। করেছেনও তাই। বাজে বল পেলেই বাউন্ডারি মারার চেষ্টা চালিয়েছেন।

আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে ১৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। এই ছোট্ট ইনিংসেও তিনটা চার ও একটা ছয় মেরেছেন। ব্যাটিং করেছেন ১৭৫ স্ট্রাইকরেটে। তবে এই ২৮ রান করাটা গুরুত্বপূর্ণ না।

গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁর সিদ্ধান্ত নেয়াটা। নিজেকে তিনে খেলানোর সাহস দেখানোটা। প্রতিপক্ষে বোলিং আক্রমণ এলেমেলো করে দেয়াটা। তাঁদেরকে নতুন করে পরিকল্পনা সাঁজাতে বাধ্য করাটা।

এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই বড় ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো জিততে সবসময় শুধু পারফর্মেন্সই যথেষ্ট হয়না। কিছু সিদ্ধান্ত, কিছু আউট অব দ্য বক্স ভাবনা, কিছু সাহস ম্যাচের চিত্র বদলে দেয়।

বড় ম্যাচ জিততে হলে কিছু জুয়া খেলতে হয়। যেমনটা আজ মাশরাফি খেললেন। তিনি ক্লিক না করলে হয়তো সিলেটের তেমন কোন ক্ষতি হত না। তবে ক্লিক করে যাওয়ায় তাঁর দল এগিয়ে গেছে অনেকটা।

হয়তো এই সিদ্ধান্তটাই বদলে দিবে ম্যাচের ফলাফল। অধিনায়ক মাশরাফি যেমন হন আর কি। ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ ম্যাচগুলোতেও জাদু দেখাচ্ছেন, মন্ত্রমুগ্ধ করছেন এমন করেই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link