বুড়ো হাড়ের বাজিমাত। দুর্ধর্ষ বোলিং প্রদর্শন। মাশরাফি বিন মর্তুজা যেন দেখালেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। এখনও তার মধ্যে রয়েছে অনেকটা বাকি। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে অন্তত তিনি সে সাক্ষরই রাখলেন। উইকেটের ট্যালিতে নিজের নাম যুক্ত করলেন পাঁচবার।
লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জের জার্সি গায়ে এবারের ডিপিএলে প্রথমবারের মত খেলতে নামেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শুরুর দিকে তাকে নিয়ে ছিল জল্পনা-কল্পনা। সব সংশয় কাটিয়ে তিনি মাঠে ফিরেছিলেন। তবে তার সে ফেরাটা হয়েছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সেটা হওয়াও যে ছিল ভীষণরকম স্বাভাবিক। কেননা সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে পাঁচ ম্যাচে নিয়েছিলেন তিনি একটিমাত্র উইকেট। বিপিএলের মঞ্চে তিনি রীতিমত খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটেছেন। সংক্ষিপ্ত দৌড়ে প্রায় স্পিনারদের ভঙ্গিমায় বল ছুড়েছেন। তা অবশ্য দৃষ্টিকটুই ঠেকছিল। এরপর আর খেলেননি তিনি। সে বিরতি কাটিতে ফিরলেন তিনি বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে।
সেখানে ফিরেই যেন নিজের কৈশরের মাশরাফি বনে গেলেন তিনি। মাশরাফি যেন রীতিমত দুর্বোধ্য হয়ে ওঠেন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে। প্রথম প্রীতম কুমারের উইকেট শিকার দিয়ে শুরু। নিজের বলে নিজেই নিয়েছিলেন ক্যাচ। এরপর আরও চারখানা উইকেট যুক্ত হয় তার নামের পাশে।
৮ ওভার হাত ঘুরিয়ে তিনি রান খরচ করেন স্রেফ ১৯। ২.৩৮ ইকোনমি রেটে নিজের ছোড়া ৩৪টি বলেই ডট আদায় করে নিয়েছেন মাশরাফি। পাশাপাশি পাঁচটি উইকেট শিকার করে ভেঙে দিয়েছেন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের মেরুদণ্ড। মাশরাফির জন্য সফলতম দিনের একটি। কিন্তু…
মাশরাফির অন্যতম সফলতম দিন ঠিক কতটুকু বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপকারে আসল? তার যে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আর দেওয়ার কিছু বাকি নেই। সেটা ভিন্ন আলাপ অবশ্য। তবে তিনি একটা দিক থেকে উপকারই করেছেন। আরেকটিবার প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ঠিক কতটা ভঙ্গুর।
ডিপিএলে অংশ নেওয়া অধিকাংশ ক্রিকেটারেরই রয়েছে ভীষণ দূর্বলতা। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে থাকা মাশরাফিও তাদের জন্য রীতিমত যমদূত। স্রেফ অভিজ্ঞতার বলেই মাশরাফি বাগিয়ে নিতে পারেন পাঁচ-পাঁচটি উইকেট।
মাশরাফির বোলিংয়ের নিশ্চিতরুপেই আগের মত সেই ধার নেই। তিনি নিজের শতভাগ নিঙড়ে দিয়ে বোলিং করছেন- তেমনটি বলারও উপায় নেই। এদিনও তিনি চার কি পাঁচ কদমের একটা ছোট দৌড়ে বোলিং করেছেন। সেটা কোনভাবেই তার পুরোদমের বোলিং হতে পারে না। এমনকি তিনি বোলিংও করতে পারবেন কি-না তা নিয়ে ছিল সংশয়।
সে সংশয়ের সূত্রপাত অবশ্য হয়েছিল বিপিএলের মঞ্চেই। তিনি তখন হাঁটুর নতুন এক অপারেশন করাবেন বলেই খেলতে চাইছিলেন না। ফ্রাঞ্চাইজি জোর করেই তাকে দলে চেয়েছিল। এদফাও খানিকটা জোর করেই তিনি নেমেছেন মাঠে। বিপিএলে তার উইকেট খরা থাকলেও ডিপিএলে কেটেছে সে খরা। তফাৎ নিশ্চয়ই বলে দেওয়ার নেই প্রয়োজন।