উপমহাদেশের নামে এক নিন্দা আছে অথবা সমালোচনাও বলতে পারেন। এই উপমহাদেশের মাটি নাকি পেসারদের জন্যে না। এ মাটি অপেক্ষায় থাকে স্পিনারদেরকে দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করতে। তবে সেদিক থেকে খানিক ভিন্ন পাকিস্তান। পেসারদের এক পুন্যভুমি। সেই পুণ্যভূমিতে সর্বদা জয়গান হয়েছে তারুণ্যের।
তরুণ সব পেসাররা পাকিস্তানের হয়ে আলো কেড়েছেন, রেকর্ড গড়েছেন, গতির হুংকার করেছেন বাইশ গজে। বেশ কিছু রেকর্ডে একচ্ছত্র আধিপত্য পাকিস্তানি বোলারদের। আরেকটু বিশেষ করে যদি বলতে হয় তবে পাকিস্তানি পেসারদের। তিন ভিন্ন ফরম্যাটে কনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করা তিনজন বোলারই পাকিস্তানের। আর তাঁরা তিনজনই পেসার।
প্রথম কনিষ্ঠ বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করেছিলেন আকিব জাভেদ। মাত্র ১৯ বছর ৮১ দিন বয়সে আকিভ জাভেদ ওয়ানডে ক্রিকেটে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে ম্যাচে তিনি করেছিলেন রেকর্ড। পরপর তিন বলে তুলে নিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ ভারতের তিন ব্যাটারকে।
ব্যাস, এরপর থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের নামটি চিরকালের জন্য যুক্ত করে নিলেন আকিব জাভেদ। ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের মালিক তিনি। অন্যদিকে, ক্রিকেটের ক্ষুদ্র ফরম্যাটে এমন কৃতিত্ব গড়ার হাতছানি কি করে যেতে দেন পাকিস্তানের আরেক তরুণ পেসার মোহাম্মদ হাসনাইন। সাদা বলে তিনি দ্যুতি ছড়িয়েছেন বাইশ গজে।
হাসনাইন ১৯ বছর ১৮৩ দিন বয়সে বনে যান টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিক শিকারি বোলার। পাঁচ অক্টোবর ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজে এমন রেকর্ডের মালিক হন তরুণ ক্রিকেটার হাসনাইন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ডটা নিজের দখলে রেখেছেন হাসনাইন।এখানেই হয়ত থেমে যেতে পারত পাকিস্তানি পেসারদের আধিপত্য। না পাকিস্তানের বোলাররা তাতের সন্তুষ্ট নন।
ক্রিকেটের বনেদী ফরম্যাটে রেকর্ডটা তো আর বেহাত হতে দেওয়া যায় না। তাই মাত্র ১৬ বছর ৩৫৯ দিন বয়সে নাসিম শাহ তুলে নেন টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাট্রিক। যে ফরম্যাটে এক একটি উইকেটের জন্যে অপেক্ষা করতে হয় এক একটি স্পেল কিংবা একটা লম্বা সময় সে ফরম্যাটে তিন বলে তিন উইকেট নেওয়া তো আর অতি সহজ কিছু নয়।
তাও আবার একজন তরুণ ক্রিকেটারের জন্য কাজটা আরও কঠিন। তবুও নাসিম সে কঠিন কাজটি করে দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ।
এই তো বছর দুয়েক আগের কথা নয় ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে। বাংলাদেশের তিন ব্যাটারকের পরপর তিন বলে প্যাভিলিয়নে ফেরান নাসিম শাহ। তরুণ এই বোলার মুহূর্তেই হয়ে যান পাকিস্তানের হিরো। আর নিজের নামটি লিখিয়ে নেন রেকর্ড বইয়ে সবার উপরে।
এভাবেই এই উপমাদেশে বৈরিতা উপেক্ষা করে রেকর্ড বই নিজেদের দখলে করে নিচ্ছে পাকিস্তানের বোলাররা। হয়ত তাঁদের এই একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান হবে। তবে তাতে যদি এই উপমহাদেশের বোলারদের নামগুলো যুক্ত হয় তবে কিন্তু মন্দ হয় না। হয়ত এমন দিন খুব সন্নিকটে। সে দিনগুলোর প্রত্যাশা হয়ত করে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেট সমর্থকেরা।