শিরোপা জয়ের অবসাদ বিরতি
সেই ক্লান্তি থেকেই এবার অস্ট্রেলিয়া নারী দলের অধিনায়ক মেগ ল্যানিং যাচ্ছেন অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে। অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশই ছিলেন ল্যানিং।
একটা অদৃশ্য বোঝা। ক্রিকেট যেন অদৃশ্য এক বোঝা হয়েই ক্রমশ চেপে বসছে খেলোয়াড়দের ঘাড়ে। এখনকার ক্রিকেটের ধারা বদলে গেছে অনেকটাই। ফুরসৎই নেই একবিন্দু দম ফেলবার। খেলার উপর থাকতে হয় যেন প্রায় প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত।
খেলোয়াড়দের কি বিতৃষ্ণা এসে যাচ্ছে? না এখনও এত বড় এক প্রশ্ন করবার সময় হয়নি। সমীচীনও হবে না। তবে খেলোয়াড়দের বিশ্রামের খুব বেশিই প্রয়োজন। খেলোয়াড়রা সে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগটাও খুব একটা পাচ্ছেন না। একের পর এক খেলা লেগেই থাকে। আর যদি হয় তিন ফরম্যাট খেলোয়াড় তবে তো আর কথাই নেই। ঘুম বাদে বাকি সময়টা কাটিয়ে দিতে হয় ক্রিকেটের পেছনে ব্যয় করে।
এসব কিছু আর কিছু না হোক একটা মানসিক বিষাদ অথবা ক্লান্তির ঘনঘটা ঘটায়। সেই ক্লান্তি থেকেই এবার অস্ট্রেলিয়া নারী দলের অধিনায়ক মেগ ল্যানিং যাচ্ছেন অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে। অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশই ছিলেন ল্যানিং।
সম্প্রতি তিনি অস্ট্রেলিয়াকে কমনওয়েলথ গেমসে এনে দিয়েছেন স্বর্ণপদক। এছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়েও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তিনিই তো ছিলেন দলনেতা। তিনিই তো দিয়েছেন নেতৃত্ব। বলিষ্ঠ কাঁধটা এবার ছুটি চায়। একটু বিশ্রাম যে তাঁর বড্ড প্রয়োজন। নিজেকে একটু সময় দিতে চান মেগ ল্যানিং।
তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের ব্যস্ততা শেষে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটু দূরে সরে যাবার যেন আমি নিজেকে একটু সময় দিতে পারি। আমি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও আমার সতীর্থদের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।’ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তাঁদের এমন প্রতিভাবান একজন খেলোয়াড়ের ইচ্ছেকে যথেষ্ঠ সম্মান প্রদর্শন করেছে এবং তাঁকে ছুটি নিতেও কোনরকম বাঁধার সৃষ্টি করেনি।
উল্টো নারী দলের পারফরমেন্স হেড শন ফ্লেগলার সাধুবাদ জানিয়েছেন মেগ ল্যানিংয়ের সিদ্ধান্তকে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ গর্বিত যে সে (মেগ ল্যানিং) বুঝতে পেরেছে যে তাঁর এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। আর এই সময়টা জুড়ে আমরা তাঁকে সার্বিক সহয়তা করে যাব।’
এই মনোভাবটা এখন প্রায় প্রতিটা ক্রিকেট বোর্ডেরই থাকা বেশ প্রয়োজন। ল্যানিং অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ফ্লেগলারের প্রশংসাতেই সে কথা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘বিগত দশক থেকেই তিনি অবিশ্বাস্য অবদান রেখে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের জন্য। ব্যক্তিগত ও দলগত অর্জনের শেষ নেই তাঁর। তাছাড়া তিনি বর্তমান সময়ের শিশুকিশোরদের জন্য আদর্শ।’
দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেওয়াটাও জরুরি। একটানা যেকোন কাজই একটা অবসাদের সৃষ্টি করতে পারে। তবে খেলোয়াড়দের বিশ্রাম ছাড়াও বোর্ড থেকে শুরু আইসিসির এখনই সময় খেলোয়াড়দের চাপ কমানো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। খেলোয়াড়দের এই মানসিক অবসাদ হয়ত ভিন্ন কোন মানসিক সমস্যার প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।
শুধু ক্রিকেটের বিশ্বায়ন কিংবা মুনাফার দিকে নজর দিলেই হবে না। খেলোয়াড়রাই ক্রিকেটের প্রাণ, খেলোয়াড়রাই ক্রিকেটের মধ্যমণি। তাদেরকে এমন মানসিক যন্ত্রনায় রেখে আর যাই হোক ক্রিকেটের যাত্রা সুখকর হওয়ার সুযোগ নেই।