নতুন রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে লিও মেসি

লিওনেল মেসির বিস্ময়কর ক্যারিয়ারের শেষটা আরো বেশি বিস্ময়কর। নিভে যাওয়ার আগে মেসি নামক প্রদীপের উজ্জ্বলতা বেড়ে গিয়েছে আরো কয়েকগুণ। চলতি কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল মেসি আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। প্রতি ম্যাচেই দর্শকদের উপহার দিচ্ছেন রোমাঞ্চকর পারফরম্যান্স। তাঁর কাঁধে ভর করেই ফাইনালে পৌঁছেছে আর্জেন্টিনা।

কাতার বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে ছয় ম্যাচ খেলে পাঁচ গোল করেছেন লিওনেল মেসি। এছাড়া সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও তিনটি গোল। শুধু গোল বা অ্যাসিস্ট নয়; ড্রিবলিং, পাসিংয়েও নজর কেড়েছেন এই তারকা। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে নিজের আগের সাফল্যকে ছাপিয়ে গেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এবার নতুন এক রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি, যা নিঃসন্দেহে ঈর্ষান্বিত করবে পেলে, রোনালদো নাজারিও, ম্যারাডোনার মত কিংবদন্তিদের।

ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট ফিফা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। বর্তমানে পঁচিশ ম্যাচ খেলা মেসি এই তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে আছেন। জার্মানির কিংবদন্তি মিডফিল্ডার লোথার ম্যাথিউসও খেলেছিলেন সমান সংখ্যক বিশ্বকাপ ম্যাচ। তবে মেসির সামনে এখন অপেক্ষমাণ বহুল আকাঙ্খিত বিশ্বকাপ ফাইনাল। তাই তো সবকিছু ঠিক থাকলে ম্যাথিউসের রেকর্ড ভেঙে একক আধিপত্য গড়ে তোলা মেসির জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র।

১৯৯৮ সালে এই মাইলফলক গড়ার পর থেকে লোথার ম্যাথিউস ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত প্রায় দুই দশক জার্মান কিংবদন্তির রেকর্ডটি হুমকিতে ফেলতে পারেনি কেউই। কিন্তু ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি এবার হয়তো ম্যাথিউসকে টপকে যাবেন; গড়বেন নতুন রেকর্ড।

লিওনেল মেসি ছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন লোথার ম্যাথিউস, পাওলো মালদিনি ও মিরোস্লাভ ক্লোসার মত নন্দিত ফুটবলাররা। মাত্র চারটি বিশ্বকাপ আসর খেলেই যথাক্রমে ২৩টি এবং ২৪টি ম্যাচ খেলেছেন মালদিনি এবং ক্লোসা। অবশ্য বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি মিনিট মাঠে থাকার রেকর্ড দখলে রেখেছেন মালদিনি। সবমিলিয়ে, ২২১৯ মিনিট খেলেছেন ইতালিয়ান এই ডিফেন্ডার।

তবে লিওনেল মেসি খুব বেশি দূরে নয়, সাবেল বার্সা তারকা ইতোমধ্যে প্রায় ২২০০ মিনিট দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ফুটবলের বিশ্ব আসরে। অর্থাৎ ফাইনাল ম্যাচে অন্তত ২০ মিনিট খেলতে পারলেই মালদিনির গড়া রেকর্ডটি নিজের করে নিবেন মেসি।

২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপ দিয়ে বিশ্ব মঞ্চে লিওনেল মেসির অভিষেক হয়। জার্মানির বিপক্ষে হেরে বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত একটি গোল এবং একটি অ্যাসিস্ট করে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন তিনি। পরের আসরে কোন গোল করতে না পারলেও করেছিলেন একটি অ্যাসিস্ট।

২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে পূর্ণযৌবনা মেসির উত্তাপ প্রথম টের পায় ফুটবল বিশ্বকাপ। সেবার একাই চার গোল আর একটি অ্যাসিস্ট করে দলকে ফাইনালে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন এই পিএসজি ফরোয়ার্ড। বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও গোল্ডেন বল হাতে উঠেছিল তাঁর। পরের আসরে তেমন কিছু করতে না পারলেও ২০২২ সালে আবারো আলবিসেলেস্তাদের ফাইনালে নিয়ে এসেছেন ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকর।

পাঁচ গোল, তিন অ্যাসিস্ট আর চারটি প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার – যেকোনো বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্যে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আসরটি লিওনেল মেসির ক্যারিয়ার সেরা টুর্নামেন্ট। হয়তো এবারও গোল্ডেন বল জিতবেন তিনি, আর সেক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে দুইবার টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার কীর্তি যোগ হবে এই তারকার ঝুলিতে।

রেকর্ড বইতে হয়তো ঝড় তুলেছেন লিওনেল মেসি, তবে তাঁর নজর যে ওসব রেকর্ডে নয় সেটা আলাদা করে বলতে হয়। মেসির দৃষ্টি আর মনোযোগ দুই-ই এখন বিশ্বকাপের সুদৃশ্য সোনালী ট্রফিতে; নব্বই কিংবা ১২০ মিনিট বা তারো বেশি সময়ের ফুটবলীয় দ্বৈরথের পর নিজের মাথাতেই চ্যাম্পিয়নের মুকুট দেখতে চাইবেন তিনি।

লিওনেল মেসির বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে নিজেকে প্রমাণের কিংবা নতুন কিছু জয়ের প্রয়োজনটুকু নেই। শুধু বাকি একটি বিশ্বকাপ ট্রফি, আর সেই স্বপ্ন পূরণ করে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করার সম্ভাব্য শেষ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে নিশ্চিত ভাবেই সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করবেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link