১.
যে কোন কাজকে আমার বাবা ৫ টি ভাগে ভাগ করতেন ; স্বাভাবিক, ভালো, খারাপ, খুব খারাপ আর অসাধারণ।
একটু উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যাক।
ধরেন আপনার প্রতিবেশি মোটামুটি গরিব, পরিবারের তিনবেলা খাবার যোগাড় করতেই তার সমস্যা হয়ে যায়। আপনি মোটামুটি স্বচ্ছল।
এখন আপনি যদি তাকে সাহায্য করেন তাহলে সেটা স্বাভাবিক কাজ। সামর্থ্য থাকার পরেও যদি সাহায্য না করেন তাহলে খারাপ কাজ।
সামর্থ্য না থাকার পরেও যদি সাহায্য করতে চান তাহলে সাহায্য করতে না পারলেও সেটি ভালো কাজ। সামর্থ্য থাকার পরে যদি সাহায্য না করেন এবং প্রতিবেশির কষ্ট দেখে আনন্দ পান তাহলে খুবই খারাপ কাজ।
আর সামর্থ্য থাকুক কিংবা না থাকুক, প্রয়োজনে নিজের কিছু ক্ষতি করেও যদি সাহায্য করতে চান তাহলে সেই কাজটা অসাধারণ। মানুষ ছোট বেলায় তাঁর বাবা মা কিংবা পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। হয়তো সেই কারণেই আমি নিজেও বিষয়গুলো এভাবেই ভাবি।
এই কারণেই অন্যান্য অনেকের কাছে যে কাজটা ভালো মনে হয়, এমনকি যিনি কাজটা ভালো ভেবেই করেছেন সেটাও আমি স্বাভাবিক মনে করি। অনেকে যেই কাজটা অসাধারণ ভাবেন আমি সেই কাজটাকে ভাবি স্রেফ ভালো।
সত্যিকার অর্থে অসাধারণ কাজ অনেকদিন ধরে চোখের সামনে আসে না। হুট করে দুই দিন আগে একটা এমন অসাধারণ কাজ চোখের সামনে চলে আসলো। কাজটা হচ্ছে বার্সেলোনার সাথে মেসির নতুন চুক্তি।
২.
যে কোন পেশার মানুষই কাজ করে মূলত টাকার জন্য। ফুটবলাররাও সেজন্যেই খেলে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।
কিন্তু মেসি কি করলেন?
যে মুহূর্তে মেসির পক্ষে সম্ভব ছিল আরো বেশি টাকা বেতনের বিনিময়ে অন্য ক্লাবে চলে যাওয়ার, সেই মূহুর্তেই তিনি নিজের বেতন অনেকখানিই কেটে আগের ক্লাবের সাথে চুক্তি করে ফেললেন। এমনকি মেসি চাইলে বার্সাতেই তার বেতন আগের চাইতে বেশি না হোক, অন্তত আগের বেতনের সমান তো রাখাই যেত।
ক্লাবের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবেই যে মেসির এই ত্যাগ সেটা আশাকরি বলার অপেক্ষা রাখে না।
৩.
মেসিকে তাঁর ফ্যানরা অনেক সময়ই লয়্যাল বলতো। আমি কখনো বলতাম না, তবে ডিসলয়্যালও বলতাম না। বলতাম মেসি লয়্যাল কি না সেটা বলার মতো পরিস্থিতি তখনো হয় নি।
পরিস্থিতি এখন হলো, আর মেসি সুন্দরভাবেই সেটা সামলে লয়্যালিটির প্রমাণটা দিয়েই দিলেন। খেলোয়াড় মেসিকে নিয়ে কিছু সমালোচনা হয়তো করাই যায়, তবে মানুষ মেসিকে নিয়ে সমালোচনা করাটা আসলেই কষ্টকর।