৩৬ বছর, যুগের হিসেবে তিন তিনটা যুগ-আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপটা দীর্ঘ একটা সময়ের জন্য অধরাই রয়ে গিয়েছে। ২০০৬ বিশ্বকাপে সদ্য কৈশোর পেরোনো আর্জেন্টাইন এক তরুণের হাত ধরে বিশ্বকাপ স্বপ্নযাত্রায় বিভোর ছিল পুরো আর্জেন্টিনা।
কিন্তু, সেই সময় থেকে চার চারটি বিশ্বকাপ পেরিয়ে গিয়েছে। আর্জেন্টিনার ঘরে বিশ্বকাপ শিরোপা আর ফেরেনি। ২০১৪ সালে খুব কাছে গিয়েও শিরোপা বঞ্চিত হয়ে ফিরতে হয়েছিল মেসিদের।
২০০৬ বিশ্বকাপের সেই তরুণ তারুণ্য ফেলে এসেছেন বেশ কিছু বছর আগেই। সেরাদের কাতারে ঠিকই আছেন। হয়ত তারুণ্যও ধরে রেখেছেন। তবে বয়সের ভার বলেও তো একটা কথা রয়েছে। তাই মেসিও বুঝে গেলেন, কাতার বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। তেমন কিছু একটার ইঙ্গিত দিয়ে জানিয়েও দিলেন সেটা।
শেষ বিশ্বকাপ। প্রত্যাশার একটা চাপ নিশ্চিতভাবেই রয়েছে। তবে গত বছরেই ব্রাজিলের মাটিতে কোপা জিতে দারুণ উজ্জীবিত মেসির দল। আর্জেন্টিনার শেষ হারটা এসেছে ৩ বছর আগে, সেই ২০১৯ সালে। টানা ৩৬ ম্যাচ ধরে তারা রয়েছে অপরাজিত। তাই আর্জেন্টিনার সমর্থক থেকে শুরু করে মেসি আর তাঁর সতীর্থরাও এবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছে।
কোপা জয়ের পর মেসিও বেশ সিরিয়াস। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পিএসজির হয়ে খেলেছেন রয়েসয়ে। ইনজুরি প্রবণতা এড়াতে কিছু ম্যাচে নিজে থেকে বিশ্রামেও থেকেছেন। তবে, সব পথ, পরিকল্পনা তো আর মসৃণ ভাবে চলে না। বিশ্বকাপে শুরুর দুই সপ্তাহ আগে গোড়ালির ইনজুরিতে পড়লেন মেসি। অবশ্য গুরুতর কিছু না বলেই সেটি উড়িয়ে দেওয়া হয়।
কাতার বিশ্বকাপের পর্দা উঠতেই চনমনে মেসি। ইনজুরির সব উড়ো খবরকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের জন্য সাম্প্রতিক একটি ছবি আতঙ্ক যোগাতেই পারে। মঙ্গলবার সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ। কিন্তু আর্জেন্টিনার এ ম্যাচের আগে শেষ অনুশীলনে মেসির একটি ছবিতে আঁতকে ওঠার মত ব্যাপারই সৃষ্টি হল।
ছবিতে দেখা গেল, মেসির ডান পায়ের গোড়ালি বেশ খানিকটা ফুলে আছে। অবস্থাদৃষ্টে যা বুঝা গেল, ফ্রোজেন জেল দিয়ে ব্যান্ডেজ করা আছে গোড়ালিটা। তাহলে কি মেসি ইনজুরি নিয়েই বিশ্বকাপ শুরু করতে যাচ্ছেন?
ব্যাপারটা আসলে তেমন না। যতটুকু জানা গিয়েছে, এটা কোনো লিগামেন্ট বা গোড়ালির ইনজুরি না। মূলত পুনরায় কোনো প্রদাহ যেন গোড়ালিতে না আক্রমণ করে এজন্য সাইরোথেরাপি দেওয়া হয়। মেসিকে সেটিই দেওয়া হয়েছে।
মেসিকে নিয়ে তাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতেই পারে আর্জেন্টিনার ভক্তরা। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, মেসি না হয় এখন ফিট আছেন সম্পূর্ণ। কিন্তু ঐ গোড়ালিতেই যদি আবার আঘাত পেয়ে বসেন তখন কী হবে? এমন শঙ্কা ঘণীভূত হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে।
কারণ মেসি নিঃসন্দেহাতীত ভাবেই এ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবলার। যেকোনো ম্যাচের মধ্যমণিও তিনি। তাই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রতিটা ম্যাচেই নিশ্চিতভাবেই প্রতিপক্ষের জন্য মূল টার্গেট হয়ে থাকবেন মেসি। সেক্ষেত্রে বড় কোনো ইনজুরি হলে আর্জেন্টিনার স্বপ্নের আকাশে মেঘ জমতেও সময় লাগবে না।
তবে এসব শঙ্কা ছাপিয়ে লুসাইল স্টেডিয়ামে সৌদি আরবের বিপক্ষে ঠিকই মাঠে দেখা যাবে মেসিকে। আর্জেন্টিনার স্বপ্নের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হচ্ছে এ ম্যাচ দিয়েই।
আপাতত আর্জেন্টিনার সব নজর এ ম্যাচকে ঘিরেই। আর মেসির জাদু দেখার অপেক্ষায় পুরো বিশ্ব। কারণ মেসিকে তো ঐ আকাশী নীল জার্সিতেই ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে চলার দৃশ্যে মানায়। কারণ সেখানে মেসির তৃষ্ণা আছে বেশি, আকাঙ্ক্ষা আছে আকাশ ছোঁয়া।