সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তার কার্যকরিতা নিয়ে একসময় সন্দেহ ছিলো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে রান আটকে রাখার প্রধাণ কাজটা তিনিই করেন। পাশাপাশি উইকেটেও তুলে নেন। আর এসবের পুরষ্কার হিসেবে এবার আইসিসি র্যাংকিংয়ে বোলারদের তালিকায় চার নম্বরে উঠে এসেছেন।
এই সংবাদ পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে খেলা ৭১ মুখোমুখি হয়েছিলো মেহেদী হাসান মিরাজের। সেখানে এই অর্জনের বিশেষত্ব, এটা ধরে রাখার পরিকল্পনা, তাকে নিয়ে সমালোচনা এবং তার বোলিং নিয়ে কথা বলেছেন মিরাজ।
অভিনন্দন, মিরাজ।
অনেক ধন্যবাদ, ভাই। অনেক ধন্যবাদ।
একটু তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া বলেন। চার নম্বরে ওঠার অনুভূতিটা কেমন?
আলহামদুলিল্লাহ। খুব ভালো লাগছে। এটা তো অনেক বড় একটা ব্যাপার। আমি আসলে এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি কখনো কল্পনা করিনি যে, কোনো ফরম্যাটে বোলারদের মধ্যে চার নম্বরে চলে আসবো। আমি আমার মতো খেলেছি। কিন্তু এরকম টপ ফাইভের ভেতর ঢুকে যাবো, বিশ্বাস করেন, এটা আমি ভাবিনি কখনো। তাই সত্যি খুব ভালো লাগছে। খুব ভালো।
খবরটা জানলেন কী করে?
এক সাংবাদিক বড় ভাই ফোন দিয়েছিলেন। সত্যি বলি, আমি ওনার সাথে কথা বলার পরও বিশ্বাস করিনি। ভেবেছি, কোনো ভুল টুল হয়েছে। পরে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে জানালো। এখনও ঠিক হজম করে উঠতে পারিনি।
এখন তো টিম হোটেলে আছেন। টিমমেটরা কী বলছে?
ভাই, সবাই খুব প্রশংসা করছে। তামিম ভাই, সাকিব ভাই; সবাই অভিনন্দন জানালো। জুনিয়ররা, বন্ধুরা পোস্ট দিচ্ছে ফেসবুকে। সবাই খুব খুশী। এটা তো দলের একটা অর্জন, তাই না? সবাই খুশী।
বাসা থেকে কী বলছেন সবাই?
বাসায় এখনো জানাইনি তো (হাসি)। এই আপনার সাথে কথা বলার পর জানাবো। মনে হয়, এতোক্ষনে নিউজ দেখে ফেলেছে।
র্যাংকিংয়ে চার নম্বরে ওঠার অর্থ কী আপনার কাছে?
আসলে আমি এভাবে ভাবছি যে, এটা ধরে রাখতে হবে। ধরেন, চার নম্বরে তো আগেও অনেকে এসেছে। আমাদের দেশে হয়তো বেশি কেউ এতোদূর আসেনি। সাকিব ভাই এক নম্বরেও ছিলেন, রাজ ভাই ছিলেন। আমি এখন উঠলাম। আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এটা ধরে রাখা। কথায় বলে না যে, অর্জন করার চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। এটা আমি খুব ভালো বুঝি। এই ব্যাপারটা অর্জন করেছি, এখন ধরে রাখতে হবে।
আপনি টেস্টে দারুণ সাফল্য দিয়ে শুরু করলেন। তারপর ওয়ানডেতে শুরুটা অতোটা ভালো ছিলো না। অনেকেই আপনাকে শুধু লাল বলের বোলার ভাবছিলেন। এটা কী তাদের জন্য একটা জবাব?
না, আমি এরকমভাবে কিছু ভাবি না। আমি সাদা বলে ভালো করেছি। আমার চেষ্টা ছিলো দুই ফরম্যাটেই ভালো করা। আমাকে দল যেখানে খেলাবে, আমি সেখানেই সেরাটা খেলতে চাই। কখনো হয়, কখনো হয় না। কিন্তু র্যাংকিং ভালো হলে জবাব দেওয়া হবে, আমি তা ভাবি না।
আপনার বয়স কম। কিন্তু সমালোচনা কম হজম করেন না। কিভাবে নেন সমালোচনাগুলো?
(হাসি) এই সিরিজের আগেও তো অনেক সমালোচনা হলো। অনেকে অনেক কিছু বলেছেন। আমি আসলে কী বলবো… এটাকে পার্ট অব লাইফ হিসেবে মেনে নিয়েছি। এ নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। আসলে আমি ভাবি, ক্রিকেট খেলাটা তো একটা পেশা। সব পেশায় কিছু কষ্টের দিকও থাকে। এখানেও থাকবে। সেটা প্রফেশনালি নিলেই হলো। আর আমি ভাবি, আমার একার তো সমালোচনা হয় না। সবারই হয়। বড় বড় তারকাদেরও হয়। তাই এ নিয়ে নেগেটিভ ভাবার কিছু নেই। খারাপ সময়ে একটু সমালোচনা হবেই।
তাহলে যারা সমালোচনা করেন, তাঁদের ওপর রাগ রাখেন না?
না, না। কারণ, এরাই তো আবার প্রশংসা করেন। এই যে যখন খারাপ করেছি, সমালোচনা হয়েছে। এখন আমার এই যে অর্জন হয়েছে, ওনারাই কিন্তু প্রশংসা করবেন। কারো তো পারসোনাল কিছু না। সবাই ভালোর জন্য বলে। সবাই চায়, যাতে টিমের ভালো হয়।
আপনার লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে একটা রান কন্টেইন করার দায়িত্ব থাকে মাঝের ওভারগুলোতে। ফলে বেশি উইকেট নেওয়ার ডেলিভারি করতে পারেন না। উইকেট বেশি পেলে লোকে বেশি প্রশংসা করতো। এমন মনে হয়?
না, আমি এটাকে টিম রোল হিসেবে ভাবি। যখন দল বলে যে, ইকনোমিকাল বোলিং করতে হবে, তখন সেটা চেষ্টা করি। আবার চেষ্টা থাকে, একটা দুটো ব্রেক থ্রু দেওয়া যায় কি না। আর এটা তো ফিক্সড রোল না। কখনো অন্যরকম বোলিংও করতে হয়।
মুস্তাফিজও আজ র্যাংকিংয়ের ৮ নম্বরে এসেছেন। তার অর্জনটা কিভাবে দেখছেন?
ওর জন্য এটা খুব দরকার ছিলো। ও মাঝে একটু খারাপ সময় কাটাচ্ছিলো। এই সিরিজে কিন্তু দারুন বল করেছে। আমি বলবো, ও খুব ভালো ফর্মে আছে। ওর জন্য খুব ভালো হয়েছে এটা। ও এটা ডিজার্ভ করে। আরও সামনে এগোবে। আমাদের দলের জন্য খুব ভালো ব্যাপার যে, আমরা দু জন বোলার এখন টপ টেনে আছি।
সামনে তো টেস্ট সিরিজ। আপনি টেস্ট খুব এনজয় করেন। কেমন হবে সিরিজটা?
আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। ওরা পাল্টা ফিরে আসার চেষ্টা করবে। ওদের টেস্ট দলও ভালো। ফলে আমরা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্যই তৈরী হচ্ছি। আমি একা না, দলের সবাই তৈরী হচ্ছে। আমরা টেস্টেও ভালো রেজাল্ট চাই। সে জন্যই সবাই রেডি হচ্ছি।