মেহেদী মিরাজ, দ্য মেকশিফট ম্যাজিশিয়ান

ওপেনিং তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগে মেহেদী হাসান মিরাজ এই এশিয়া কাপের মঞ্চেই ওপেন করেছিলেন লিটন দাসের সাথে, দিয়েছিলেন যোগ্য সঙ্গ। এবার সেই লিটন নেই বলেই দায়িত্বটা আবারও মিরাজের কাঁথে। একজন মেকশিফট ওপেনার খেলানো ছাড়া উপায়ও যেন নেই বাংলাদেশের সামনে। টপ অর্ডারে একজন ডানহাতি ব্যাটারকে দলের প্রয়োজন ছিল খুব। এনামুল হক বিজয় ছিলেন স্কোয়াডে। তবে বোলিং অপশন বেশি রাখতেই তাঁকে সুযোগ সম্ভবত দেয়নি টিম ম্যানেজমেন্ট।

তবে মেকশিফট ওপেনার মিরাজ হতাশ করেননি টিম ম্যানেজমেন্টকে। তার উপর অর্পিত দায়িত্বটা ঠিকঠাকই পালন করেছেন মিরাজ। একটা প্রান্ত ধরে রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই সম্ভবত তিনি নেমেছিলেন। ওয়ানডেতে মিরাজ দ্বিতীয় দফা ওপেনিং করার পাশাপাশি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি ব্যাট করেছিলেন ওপেনিংয়ে।

তবে দুই ফরম্যাটের চাহিদাটা ভিন্ন। প্রতিবারই আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন মিরাজ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচটি বাংলাদেশের ডু-অর-ডাই ম্যাচ। সেই ম্যাচে দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলার ভয় ছিল বটেই। তবে মিরাজ তেমনটি হতে দেননি।

প্রথমে নাঈম শেখ বেশ চার্জ করেই খেলার চেষ্টা করেছেন। তবে মিরাজ রয়েসয়ে খেলেছেন। তিনি বাইশ গজ কামড়ে পড়ে থাকতে চেয়েছেন। আর তেমনটি করতে গিয়ে, রানও এসেছে মিরাজের ব্যাট থেকে। প্রচুর ডট খেললেও নিজের ফুটওয়ার্কের ব্যবহারটা দূর্দান্ত ভাবেই করেছেন মিরাজ। নাঈম শেখের সাথে ৬০ রানের জুটি গড়েন।

নাঈমের পর দ্রুতই প্যাভিলনের পথে হাটা শুরু করেন তরুণ তাওহীদ হৃদয়। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার শূন্য রানে আউট হন হৃদয়। স্বাভাবিকভাবেই ভাল মোমেন্টাম আফগানিস্তানের দিকে ঝুকে যায় পরপর দুই উইকেটের পতনের পর। তবে তখনও অনড় ছিলেন মিরাজ। নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে গড়ে তোলেন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি।

এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম ছক্কাটাও এসেছে মিরাজের ব্যাট থেকে। নিজের ইনিংসের ৫৭ তম বলে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে মোহাম্মদ নবীকে ছক্কা হাকান মিরাজ। আরও আট বল পর ওপেনার মিরাজ দেখা পান ফিফটির। তবে দিনটা আরও স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন মিরাজ। সেই পথেই হেটেছেন এই অলরাউন্ডার।

১১৫ তম বলে গিয়ে মিরাজ ছুঁয়ে ফেলেন সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ইনিংসটি নিশ্চয়ই তার ক্যারিয়ারের অন্যতম হাইলাইটস হয়ে থাকবে। বাঁচা-মরার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দল। এমন সময়ে, ভিন্ন রোলে, ভিন্ন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। দল তার প্রতি আস্থা রেখেছিল। সেই আস্থার প্রতিদান যথার্থ ভঙ্গিমায়।

খাদের কিনারায় থাকা দলকে একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেলেন। চারিদিকে বাংলাদেশের সমালোচনা আর নিন্দার ঝড়। পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া নিয়ে নানা সমীকরণ ঘিরে ধরেছিল টাইগারদের। আফগান কোচের হুঙ্কার। সবার চোখে পিছিয়ে বাংলাদেশ। মূল কারণটাই ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং দূর্বলতা। তবে সেসব কিছুর একটা কড়া জবাব দিয়ে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

নিজের দ্বিতীয় শতকের পরপরই হাত খুলে ব্যাট চালাতে থাকেন মিরাজ। তবে লাহোরের তীব্র গরম শরীর থেকে সবটুকুই যেন শুষে নিয়েছে। প্রচণ্ড ক্লান্তিতে তাই হাতে ক্র্যাম্প। মাঠ ছেড়ে উঠে যেতে হয় মিরাজকে। তার ঠিক আগ মুহূর্তেই হাকিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন এক ছক্কা। মুজিব উর রহমানের বলকে লং অফ দিয়ে ছক্কা মারেন মিরাজ।

১১৯ বলে ১১২ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে প্যাভিলনে ফেরেন মিরাজ। পথিমধ্যে দলের প্রতিটা মানুষের কাছ থেকে অভিবাদন পেয়েছেন মিরাজ। দর্শকরাও দাঁড়িয়ে সম্মান জানান মিরাজকে। তিনি নিজের কাজটা করে দিয়েছেন। তিনি নিজের কাজটা দারুণভাবেই করে দিয়েছেন। সেই শুরু থেকে ৪৩ তম ওভার অবধি খেলেছেন মিরাজ।

দুইটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছেন। সেঞ্চুরি করেছেন। আর ঠিক কি করবেন তিনি! এখন স্রেফ বল হাতে মিরাজকে আটকে দিতে হবে আফগানদের। সমীকরণ তো পিছু ছাড়েনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link