পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) যখন তাঁকে নিয়োগ দেয় – তখন থেকেই একটা চাপা সমালোচনা ছিল। বিশ্বজুড়েই বলাবল হচ্ছিল – একটু বেশিই গুরুদায়িত্ব পেয়ে গেছেন মিসবাহ উল হক। নিন্দুকেরা এও বলছিল – এই চাপ সামলে টিকে থাকা কঠিন হবে তাঁর।
আর যত সময় এগোচ্ছে সেই নিন্দুকদের কথাই যেন সত্যি হতে চলেছে। পিসিবি যে স্বপ্ন নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছিল মিসবাহকে তার ছিটেফোঁটাও পূরণ হয়নি। সাফল্যের দেখা তো দূরের কথা তাঁর দুয়ারেও পৌঁছায়নি পাকিস্তান। আর যাবতীয় সমীকরণ বলছে – পাকিস্তান ক্রিকেটে আপাতত ইতি ঘটতে চলেছে মিসবাহ অধ্যায়ের।
এক কালের মিডল অর্ডারের এই ভরসা একটা সময় সর্বময় দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ দিয়েছিল পিসিবি। দায়িত্বটা ছিল একাধারে প্রধান কোচ ও প্রধান নির্বাচকের। তবে, নিজের দায়িত্বে প্রচণ্ডরকমের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন মিসবাহ। এর জের ধরে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বটা আগেই ছেড়ে দিয়েছেন মিসবাহ।
এখন শোনা যাচ্ছে, কোচ মিসবাহকেও বিদায় করে দিচ্ছে পিসিবি। আর শোনা যাচ্ছে, এবার আর দেশের মধ্যে কাউকে নয়। দেশের বাইরে থেকেই কোচ আনার পরিকল্পনা পিসিবির।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র তো বলেই দিলো, ‘পিসিবি মিসবাহকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। বিদেশি কোচদের মধ্যে আলোচনায় আছেন গ্যারি কার্স্টেন ও গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার।’ এর মধ্যে গ্যারি ভারতের হয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছেন। আর গ্র্যান্ট কিছুকাল আগেই পাকিস্তানের ব্যাটিং কোচ ছিলেন, এখন যে পদে আছেন ইউনুস খান। আলোচনায় আছেন গ্র্যান্টের ভাই অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। অ্যান্ডি ইংল্যান্ড দলের হয়ে জিতেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা।
মিসবাহ’র পায়ের নিচের মাটিটা ক’দিন হল নড়বড়ে ছিল। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর সেই মাটিটা সরে যেতে শুরু করেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর পাকিস্তান কোনো ফরম্যাটেই বলার মত সাফল্য পায়নি। দেশের মাটিতে টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে। দবে, থর্বে শক্তির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশে বসেই হেরে গেছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
সাম্প্রতিক সময়ে মিসবাহ উল হকের সবচেয়ে বড় সমালোচকদের একজন হলেন সাবেক পেসার আকিব জাভেদ। তিনি এই কোচকে একদম ধুয়ে দিয়ে বলেন, ‘মিসবাহকে কোচ করার পেছনে যুক্তিটা কি! অবশ্যই তাকে কোচ করার পেছনে কিছু কারণ আছে, যারা তাঁকে নিয়োগ দিয়েছে – তাঁদের জিজ্ঞেস করে দেখা যেতে পারে।’
আকিব জাভেদ মনে করেন, মিসবাহ স্কুল পর্যায়ের দলের কোচিং করানোর যোগ্যতাও নেই। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট খেলা থেকে কোচ হয়ে ওঠার পথটা অনেক লম্বা। আমি মনে করি মিসবাহ স্কুল পর্যায়ের কোনো দলের কোচিং করানোর জন্যও যোগ্য নয়।’
এই মিসবাহ অধিনায়ক থাকা অবস্থাতেই সর্বশেষ টেস্ট র্যাংকিংয়ের চূড়ায় উঠেছিল পাকিস্তান। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস – সেই মিসবাহ যখন কোচ – তখন পাকিস্তান দল একের পর এক টেস্ট হেরে চলেছে।
মিসবাহকে এখন পিসিবির ক্রিকেট কমিটির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সেটাও আগামী দিন দশেকের মধ্যেই। পিসিবির একটি সূত্র বলেছে, ‘সেলিম ইউসুফের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট কমিটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের বাজে পারফরম্যান্স নিয়ে খুব চিন্তিত। দলের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই কমিটির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের প্রতি বরাবরই আস্থা রাখে পিসিবি। তারা যে সুপারিশ করবে, সেটা পিসিবি চেয়ারম্যানের সামনে উত্থাপন করা হবে, তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। হ্যাঁ, অবশ্যই এখানে কোচদের পারফরম্যান্স বড় একটা এজেন্ডা হবে।’
সূত্রটি জানায় দলের স্বার্থেই টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে বড় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে পিসিবি। তিনি বলেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন, বিশেষ করে কোচিংয়ে পরিবর্তন – ইত্যাদির সম্ভাবনা খুবই জোড়ালো। তবে, পরবর্তী কোচ নিয়োগের আগে আমাদের পিসিবির গাইডলাইন মানতে হবে। তবে, তার আগে ক্রিকেট কমিটির সুপাশি ও পিসিবি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করতে হবে। ক্রিকেট কোচ-সহ কিছু কর্মকর্তা ও শীর্ষ ক্রিকেটারদের ডেকে পাঠাবে ক্রিকেট কমিটি। তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। সামনেই অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ফলে, দলের বৃহত্তর স্বার্থেই সব বিবেচনা তরে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’