বিপিএলের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় কে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চারটা মানদণ্ড বিবেচনায় আসতে পারে; সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার, সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার, সর্বোচ্চ বার ম্যাচ সেরা আর টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। এই চার মানদণ্ডের তিনটিতেই শীর্ষে রয়েছেন সাকিব আল হাসান।
৯ আসর খেলে ৩ বার টুর্নামেন্ট সেরা, রেকর্ড ১৭ বার ম্যাচ সেরা আর ১৪৯ উইকেট। এই সংখ্যাগুলোই সাকিবের শ্রেষ্ঠত্ব দারুণভাবে প্রমাণ করে। বাকি এক মানদণ্ডে সেরা ব্যাটারের আসনটা তামিম ইকবালের। অনেকটা তর্কাতীতভাবেই তাই সাকিবের এই একাধিপত্যে তাঁকে বিপিএলের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় রায় দিয়ে দেওয়াই যায়।
সাকিব অবশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়। তবে এই শ্রেষ্ঠত্বের বিপরীতে সাকিবের ব্যর্থতার গল্প কি একটুও নেই? অবশ্যই আছে।
বিপিএলের প্রথম আসরে নকআউট পর্বে ৪১ বলে ৮৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি৷ তবে এমন দুর্দান্ত ইনিংস সে আসরে ম্লান হয়েছিল তখনকার সাকিবের দল খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হারে। এরপর সাকিব যখন বিপিএল খেলেছেন, রাউন্ড রবিন পর্ব টপকেছেন। কিন্তু সেই সাকিবকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিপিএলে সব মিলিয়ে ৫ বার ফাইনাল খেলেছেন। ৯ বার প্লে-অফে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু এলিমিনেটর, কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু মিরপুরের সেই তাণ্ডব আর ফিরে আসেনি। সাকিব এক বারের জন্যও পেরোতে পারেননি পঞ্চাশের গণ্ডি। শুধু তাই নয়, বল হাতে বিপিএল ইতিহাসের সেরা বোলার নিজেকে রাঙাতে পারেননি৷ অবশ্য এমন চিত্র দেখা গিয়েছে এবারের বিপিএলের নকআউট পর্বেও।
২ টি কোয়ালিফায়ার ম্যাচেই খেলেছেন। কিন্তু ব্যাট হাতে সাকিবের সঙ্গী কেবল ৬ রান। আর বল হাতে তো উইকেটের খাতাই খুলতে পারেননি। অথচ এ বারের আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটা তাঁরই।
বিপিএল গণ্ডি পেরিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে চোখ রাখলে ব্যাটার সাকিবের সাকিবের পরিসংখ্যান আবার আরো শোচনীয়। সর্বশেষ ১০ বছরে সব ধরনের ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট মিলিয়ে সাকিব ২৪ ম্যাচে একবারের জন্য ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলতে পারেননি। নকআউট পর্বে এ সময়কালে তাঁর সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৮ রান। যে ইনিংসটি তিনি খেলেছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ২০১৮ সালের আইপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে।
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট গুলোতে ব্যাটার সাকিবের পরিসংখ্যানই যে এমন ঠিক তা নয়। নিজের সহজাত বোলিংটাও তিনি করতে পারেননি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে। বিপিএলের নকআউট স্টেজে কখনোই ৩ উইকেট শিকার করতে পারেননি তিনি৷ এমনকি বিপিএলের বাইরের লিগগুলোতেও বোলার সাকিবের যেমন পারফরম্যান্স ছিল তাকে টেনেটুনে কোনোনতে ভদ্রস্থ বলা যায়।
বলা হয়ে থাকে, বড় ক্রিকেটাররা ‘বড়’ ম্যাচেই জ্বলে ওঠেন৷ সাকিব নিজেও বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চের স্মরণীয় পারফর্মার হয়ে রেকর্ডবন্দী হয়েছেন। কিন্তু ফরম্যাট বদলে যখন টি-টোয়েন্টি হয়, তখন বাংলাদেশের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা ‘বড়’ ম্যাচে সেভাবে নিজের ছাপ রাখতে পারেননি৷ অন্তত ‘সাকিব’ নামটার পাশে সেই সব পরিসংখ্যান বড্ড বেমানান। সাকিব নিজেও নিশ্চয়ই এমন সব পরিসংখ্যানে তৃপ্ত হতে চাইবেন না।