সিলেটি পেস-বিপ্লবের রহস্য

নেটে তখন মুমিনুল হক ব্যাট করছেন।

তরুণ পেসার রেজাউর রহমান রেজার একটা বল তার ব্যাট ছুঁইয়ে পেছনে চলে গেলো। ম্যাচ হলে নিশ্চিত আউট। অভ্যেস বশতই চিৎকার করে উঠলেন রাজা।

পরের ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত হতে থাকা আবু জাহেদ রাহি রাজার পিঠটা চাপড়ে দিলেন। বল হাতে দাড়িয়ে থাকা সৈয়দ খালেদ আহমেদ (স্কোয়াডে না থাকলেও দলের সাথে আছেন তিনি) সিলেটি ভাষায় কী একটা বললেন যেনো। শুনে সবাই হাসিতে ফেটে পড়লেন। বিশেষ করে চার পেসার একসাথে হেসে উঠলেন নিজেদের ভাষায় কথাটা শুনে।

হ্যাঁ, বাংলাদেশ টেস্ট দলের সঙ্গে থাকা চার জন বোলারেরই ‘নিজের ভাষা’ সিলেটি।

এটা বাংলাদেশের জন্য নিশ্চয়ই বিরল একটা রেকর্ড। একসাথে কোনো একটা জেলা থেকে একই দলে চার জন পেসার সুযোগ পাওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এর সাথে যোগ করুন জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়তে থাকা বিশ্বকাপজয়ী পেসার তানজিম হাসান সাকিবকে। তিনিও সিলেটের ছেলে। মানে, দেশের শীর্ষ ৭-৮ জন পেসারের তালিকা করলে সেখানে ৫ জনই থাকবেন সিলেটের।

সিলেটে মনে হচ্ছে পেস বোলিংয়ের একটা বিপ্লব হয়ে গেছে। কিন্তু কিভাবে হলো এটা?

সিলেটের কিংবদন্তী ক্রিকেটার, সাবেক জাতীয় দল তারকা এনামুল হক জুনিয়র বলছিলেন, ‘অনেক কিছু মিলিয়ে হয়েছে। ভালো উইকেট পেয়েছে ওরা। ভালো উৎসাহ পেয়েছে। প্রতিটা ছেলের নিজের খুব ভালো চেষ্টা ছিলো। আর এদের উঠে আসার পেছনে একটা বড় অবদান আছে আমাদের পেস বোলিং কোচ নাজমুল হাসানের। বাকীদের নাজমুল দেখাশোনা করেছে। আর রাজাকে তো ওই তুলে এনেছে।’

সাবেক জাতীয় দলের তারকা নাজমুল কথাটা শুনে একটু লজ্জা পেলেন। তিনি বললেন, আসলে এই পেসাররা উইকেট ও দলের ভালো সাপোর্ট পেয়েছে।

উইকেটের কথাটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাজমুল বলছিলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমাদের এখানকার উইকেট খুব ভালো হচ্ছে। জাতীয় লিগের উইকেট তো বটেই, স্থানীয় খেলার উইকেটও খুব ভালো হয়। ছেলেরা বাউন্স পায়, গতি দিতে পারে। ফলে উৎসাহ পায়। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, এখন সিলেটের জিমসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনেক ভালো। আমরা তো এতো ভালো সুবিধা পাইনি। এরা পাচ্ছে। সেটা কাজেও লাগাচ্ছে।’

এর পাশাপাশি নাজমুল বলছিলেন, এদের সাপোর্ট করে যাওয়ার ব্যাপারটা। রাজার উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন, ‘রাজাকে প্রথম ন্যাশনাল লিগে যে ম্যাচে খেলালাম, সেই ম্যাচে প্রথম দিন লাঞ্চের আগে ও ২৭টা নো বল করেছিলো। অন্য কোনো টিম হলে ও আর বলই পেতো না। আমরা ওকে ব্যাক করেছি। ওকে নিয়ে কাজ করেছি। সারা সিজন খেলিয়েছি। সিজন শেষে সেই রাজাই ২০টা উইকেট পেয়েছে। এভাবে আসলে খেলোয়াড়দের ব্যাক করতে হয়। তাহলে আপনি বোলার পাবেন।’

নাজমুলের দলে এখন জাতীয় দলে ডাক পাওয়া চার পেসারই খেলেন। ফলে এদের নার্সিং করার দায়িত্বও থাকে তার। তিনি একটু হেসে বললেন, ‘এদের তো নতুন কিছু শেখানোর নেই। আমার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করি আর কী! এতোদিন ধরে খেলেছি। যা শিখেছি, সেটা ওদের বলার চেষ্টা করি। এরা খুব ভালো শিখতে পারে। সহজে কথা ধরতে পারে। এদের উঠে আসার এটাও একটা কারণ।’

নাজমুল বলছিলেন, এই ব্যাপারটা একটা ট্রেন্ডের মত। একবার রাহিরা সফল হয়েছেন বলে রাজারা উঠে এসেছেন। এখন আরও পেসার উঠে আসবেন বলে তার বিশ্বাস।

রাজা নিজেও একদিন আগে বলছিলেন, ‘আমরা রাহি ভাইদের দেখে উৎসাহ পেয়েছি। আমরা ভালো করলে সাকিবদের মত আরও অনেকে উঠে আসবে।’

আর এই সিলেটি পেসারদের আলাদা একটা গুনের কথা এনামুল হক জুনিয়র উল্লেখ না করে পারলেন না। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের এই ছেলেগুলোর মানসিকতাটা অসাধারণ। এরা অল্পে সন্তুষ্ট হয় না। আমাদের এখানে আরও যেসব নতুন ফাস্ট বোলার আছে, ওদের সাথে আলাপ করলে দেখবেন, লক্ষ্য হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল খেলে ভালো কিছু করা। এই বড় ইচ্ছাই ওদের এগিয়ে দিচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link