নিশ্চিত করেই একটা কথা বলা যায়, মঈন আলী ২০২১ এর শুরুটা এভাবে চাননি।
এমনিতে ১৮ মাস ধরে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারটা একরকম ঝুলে আছে। তিনি এই শ্রীলঙ্কা সফরেই সেই টেস্ট ক্যারিয়ারের নতুন শুরুর কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তাতেও হানা দিল করোনা। শ্রীলঙ্কাতে এসে কোভিড টেস্টে পজিটিভ হয়েছিলেন মঈন আলী। সেলফ-আইসোলেশন থেকে সেরে ওঠা এই ক্রিকেটার ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এরকমটা যেন কারো সাথেই না হয়, আমি এখানে পুরো আটকে গেছি।’
খুবই আনন্দের সংবাদ, মঈন আলী ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং ভারতের সাথেই সামনের টেস্টে খেলার জন্যে প্রস্তুতও। কিন্তু মঈন আলী কিভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন সেটা এই ভাইরাসের জন্মতথ্যের মতই রহস্যময় হয়ে থাকছে। বিশেষ করে, হিথ্রো বিমানবন্দরে আসার আগে ক্রিস ওকসের সাথে তিনি মিনিবাস শেয়ার করেছিলেন কিন্তু ওকস ভাইরাস পরীক্ষাতে নেগেটিভ হয়েছেন। এমনকি মঈন আলীর পরিবারের কেউই পজিটিভ নন।
মঈন আলী বলেছেন, ‘আমি খুব সম্ভবত বিমানবন্দর কিংবা প্লেনের মধ্যে থেকেই আক্রান্ত হয়েছি। আমার পরিবারের কেউই আক্রান্ত হয়নি, তো আমি মনে করছি আমি আক্রান্ত হয়েছি বিমানবন্দর বা প্লেন থেকেই।’
মঈন তার শুরুর অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করে বলেছেন, ‘ভ্রমণটাতে আমি ভালই বোধ করছিলাম। বাড়ি ছাড়ার সময়, বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় আমার কিছুই মনে হয়নি। প্লেনে আমি খুব বেশি ঘুমায়ওনি। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় নামার পর থেকে আমি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করি। আমি তখনই বুঝছিলাম, কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। এরপর সন্ধ্যায় আমার ভীষণ মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়, টেস্ট করালে ফলাফল পজিটিভ আসে।’
করোনা কাউকে ভোগায়, কাউকে সহজে ছেড়ে দেয়। মঈন কিছুটা হলেও যন্ত্রনা টের পেয়েছেন, ‘এরপর আমি স্বাদ হারিয়ে ফেলি, তিনদিন ধরে আমার ভীষণ মাথা যন্ত্রণা হতে শুরু করে। সারা শরীর ক্লান্তিতে ভরে ওঠে। আমি আমার জীবদ্দশায় কখনও এত ক্লান্তি ভোগ করিনি। তিনদিন পর অবশ্য একটু একটু ভাল বোধ করতে শুরু করি। আমি খুব করে চাইছিলাম আমি যেন জ্বরে আক্রান্ত না হই, শ্বাসকষ্ট আর কাশি যেন না হয়। ভাল ব্যাপার, আমার তা হয়নি। তবে যা হয়েছে সেটাও যথেষ্ট চিন্তার ছিল।’
আইসোলেশনে কাটানো নিজের ১৪ দিন ফিরে দেখেছেন মঈন আলী, ’১৪ দিন দুঃসহ গেছে, বিশেষ করে শেষ ৪ দিন রীতিমত অসহ্য হয়ে গেছিলাম। কারণ আমি সুস্থ বোধ করছিলাম অথচ আমাকে হোটেল রুমেই থাকতে হবে।’
আইসোলেশনে থাকার সময়টা মঈন আলীর কেটেছে বই পড়ে আর মোবাইল গেমস ‘কল অফ ডিউটি’ খেলে। মঈন আলী বলেছেন তাঁর দলের সতীর্থরা নিয়মিতই তাঁর খোঁজখবর নিচ্ছিল। মঈন আলীও দলের সাথে থাকা মনোবিদ ড জেমস বিকলির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। তবে নিজেকে বিশ্বাসী আখ্যা দিয়ে মঈন আলী বলেছেন, ‘খারাপ সময়ের পর ভাল সময় আসে। আমি সে বিশ্বাসেই দিন গুণছিলাম।’
মঈন আলী সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৯ সালে। এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজের ম্যাচে। এরপর থেকে তিনি সাদা পোশাকে ইংল্যান্ড দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন তিনি। টেস্টে সে সময়কার সেরা উইকেট-সংগ্রাহকদের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও তাকে বিবেচনায় আনেনি ইংল্যান্ড।
মঈন আলী বলেছেন এ সময় তিনি নিজেকে সময় দিয়েছেন। লম্বা ফরম্যাটের ক্রিকেটের জন্যে মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। আর এখন তিনি আবার সাদা পোশাকে ফেরার জন্যে তৈরি। অবশ্য সে সুযোগও তিনি পেয়ে যেতেন করোনার থাবা না বসালে।
সামনে ভারত সিরিজে তিনি সুযোগ পাবেন কিনা সেটা অবশ্য বলা যাচ্ছে না। মঈন আলীর ম্যাচ প্রাক্টিস নেই। লম্বা আইসোলেশনে ক্রিকেটের ধারেকাছেও ছিলেন না। মঈন আলী বলেছেন, ‘আমি যখন বাদ পড়লাম আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। বিদেশী বিভিন্ন লীগ খেলে কাটিয়েছি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটকে সবসময়ই মিস করেছি।’
তবে মঈন আলীর এই ফেরাটা কিন্তু মোটেই সহজ হবেনা। শ্রীলঙ্কাতে ডম বেস আর জ্যাক লিচ ভাল করেছেন। তবে মঈন আলীর ১৮১ টেস্ট উইকেট পাওয়ার অভিজ্ঞতাও তো ফেলনা নয়। ৩৩ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার তাই আরেকবার নিজের ফর্ম ফিরে পেয়ে থ্রি-লায়ন্স দলে জায়গা গুছিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায়।
মঈন নিজের লক্ষ্যটা নিয়ে বলছিলেন, ‘আমার ছোট ছোট কিছু লক্ষ্য আছে যেগুলো আমি অর্জন করতে চাই। ২০০ টেস্ট উইকেট পাওয়া থেকে আমি খুব বেশি দূরে নেই। অনেকেই বলতে পারে এদিকে এত তাকাতে নেই, কিন্তু আমি এগুলোকেই ভালবাসি। আমি সিরিজ বাই সিরিজ চিন্তা করতে পছন্দ করি। এটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’
সবচেয়ে বড় কথা, তিনি মনে করেন, তার এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে, ‘আমি এখনও মনে করি আমার মধ্যে এখনও রান আর উইকেট আছে যেগুলো ইংল্যান্ডকে উইনিং পারফরম্যান্স হিসেবে আমি দিতে চাই।’
মঈন আলী তা দিতে পারবেন কিনা সেটা অবশ্য সময়ই বলে দেবে!