বিদায়, আধুনিক সেনসেশন

বলা হয়, পাকিস্তান হলো অকৃত্রিম প্রতিভা তৈরীর জন্য সবচেয়ে উর্বর ভূমি। বিশেষ করে নিখাত ফাস্ট বোলার তৈরীতে এই দেশটির বিকল্প নেই। আবার বিতর্ক ‍সৃষ্টিতেও পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের জুড়ি নেই।

আর এই দুইয়ের অদ্ভুত এক মিশেল ছিলেন মোহাম্মদ আমির।

একদিকে এই প্রজন্মের সবচেয়ে ঈর্ষনীয় প্রতিভা। বল হাতে যাত্রা শুরু করেছিলেন যেনো, ওয়াসিম-ওয়াকারের তালিকায় ওঠার মতো করে। তার প্রতিভায় বিস্মিত হয়েছিলো বিশ্ব। আবার সেই আমিরই কৈশোর পার হওয়ার আগে বিশ্ব কাঁপানো ফিক্সিং কেলেঙ্কারির অংশ হয়ে গেলেন। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে নিষিদ্ধ রইলেন ৫টি বছর।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্তত বর্ণিল এই অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনে ফেলছেন আমির।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। শুরুতে আমিরের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এই খবর জানায়। পরে খবরটি নিশ্চিত করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

আমিরের বরাতে সংবাদ মাধ্যমে তার অবসরের খবর প্রকাশ হওয়ার পর পিসিবি তার সাথে যোগাযোগ করেছিলো। পিসিবির প্রধাণ নির্বাহী ওয়াসিম খানকে আমির বলে দিয়েছেন, তিনি আর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলতে চান না। পিসিবি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই ফাস্ট বোলার আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট আর খেলবেন না বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধাণ নির্বাহী ওয়াসিম খান মোহাম্মদ আমিরের সাথে আজ বিকেলে কথা বলেছেন। ২৯ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার পিসিবির প্রধাণ নির্বাহীকে নিশ্চিত করেছেন যে, তার আর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলার কোনো ইচ্ছে নেই। তাকে যেনো আর আর্ন্তজাতিক ম্যাচের জন্য বিবেচনা না করা হয়।’

বিবৃতিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আমিরের সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখানোর কথা বলেছে।

আমিরের অবসরের ঘোষণা ক্রিকেট দুনিয়ার জন্যই চমক হয়ে এসেছে। হতাশা ও ক্ষোভ থেকেই আমির এমন সিদ্বান্ত নিচ্ছেন বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম গুলো। সম্প্রতি পাকিস্তান জাতীয় দলের রাডারের বাইরে রয়েছে মোঃ আমির। নিউজিল্যান্ড সফরে পাকিস্তানের ৩৫ জনের বহরে না থাকতে পেরে প্রধান নির্বাচক ও কোচ মিসবাহ-উল হকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। আমিরের অবসরের সিদ্বান্ত সেই ক্ষোভেরই বহি:প্রকাশ বলে মনে করছে সবাই।

গত বছর টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের রোষানলে পড়েছিলেন পাকিস্তানি এই পেসার। ক্রিকেটের আভিজাত্য সংস্করণ টেস্টকে বিদায় বলার শাস্তি হিসাবে আমিরকে কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে রেখেছিলো পিসিবি। এরপর আমির ধীরে ধীরে বাইরে চলে যান পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের পরিকল্পনা থেকেও।

হঠাৎ করে অবসর নিয়ে সবাইকে চমকে দেওয়া আমিরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারও ছিলো বৈচিত্র্যময়। আমিরের ক্যারিয়ারকে খুব সহজেই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ক্যারিয়ারের শুরু অর্থ্যাৎ নিষিদ্ধ হওয়ার আগে আর ফিক্সিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ হওয়ার পর। নিষিদ্ধ হওয়ার আগের আমির আর নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পরের আমিরের ভিতরেও রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

২০০৯ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক হওয়া আমির ছিলেন বল হাতে প্রতিপক্ষের ত্রাস। নিষিদ্ধ হওয়ার আগে টেস্টে ২৭ ইনিংসে ৫১ উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানি এই পেসার। ওয়ানডেতে ১৫ ইনিংসে নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট আর টি-টুয়েন্টিতে ১৮ ইনিংসে শিকার করেছিলেন ২৩ উইকেট।

২০১০ সালে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিলেন পাকিস্তানি এই পেসার। ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পরে বল হাতে ভালো করলেও দলে নিয়মিত হতে পারেননি কখনো। এই সময়ে টেস্টে ৪৭ ইনিংস বলে করে শিকার করেছেন ৬৮ উইকেট। ওয়ানডেতে ৪৫ ইনিংসে নিয়েছেন ৫৬ উইকেট আর টি-টুয়েন্টিতে ৩৩ ইনিংসে নিয়েছেন ৩৬ উইকেট।

নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর আমিরের ক্যারিয়ারে হাইলাইটস হয়ে আছে ২০১৭ সালে বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতানো। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে আমিরের হাতেই পরাস্ত হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। ফাইনালের আগে ৩ ম্যাচে ২ উইকেট পেলেও ভারতের সাথে শিরোপা জেতার লড়াইয়ে ১৬ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট, যার ভিতর রোহিত শার্মা ও বিরাট কোহলির উইকেটও ছিলো।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আমির যখন বিদায় জানাচ্ছেন তখন তার নামের পাশে টেস্টে ৬৭ ইনিংসে ১১৯ উইকেট। ওয়ানডেতে ৬০ ইনিংসে ৮১ উইকেট আর টি-টুয়েন্টিতে ৫১ ম্যাচে ৫৯ উইকেট। মাত্র ২৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় না জানালে এই পরিসংখ্যান নিশ্চিত আরো সমৃদ্ধ হতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link