লং অন দিয়ে ছক্কা হাকিয়ে মোহাম্মদ আমিরকে আমন্ত্রণ জানান টিম সেইফার্ট। দিনটা সম্ভবত বাজে কাটবে সে আভাসই যেন মিলছিল। দিনশেষে হয়েছেও তাই। পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আমির ছিলেন উইকেট শূন্য, প্রায় ১২ ইকোনমিতে রান বিলিয়েছেন তিনি। তাতেই কি আমিরের প্রত্যাবর্তন অনর্থক হয়ে যায়?
সম্ভবত না। কেননা যেকোন ক্রিকেটারেরই যেকোন একটি দিন যেতে পারে খারাপ। তেমনই একটি খারাপ দিন কেটেছে মোহাম্মদ আমিরের। তিনি ৪২ রান দিয়েছেন নিজের কোটার চার ওভারে। যদিও ওভার পূর্ণ করার আগেই শেষ হয়েছে ম্যাচ। আমির উইকেট শিকার করতে না পারলেও ম্যাচ হারতে হয়নি পাকিস্তানকে।
সুতরাং আমিরের কারণে ম্যাচ হেরেছে সেই সোরগোল শুরু হয়নি। এখনও আমিরের কাছে পর্যাপ্ত সময় রয়েছে নিজেকে প্রমাণ করবার। সামনেই যে পাকিস্তানের রয়েছে আরও বেশকিছু টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সেখানে নিশ্চিতরুপেই আমিরকে বাজিয়ে দেখতে চাইবে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট। তাকে বাজিয়ে দেখার পেছনেও রয়েছে কারণ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমির তিনটি ইনিংসে বল করেছেন। সেই তিন ইনিংসে তার শিকার ৩ উইকেট। অতএব খুব একটা খারাপ করেছেন আমির সেটা বলবার উপায় নেই। বরং তিনি পরিকল্পনা মাফিক যথেষ্ট ভাল করেছেন তা বলা যায়।
যদি প্রথম দুই ইনিংসের দিকেই একটু দৃষ্টিপাত করা হয়, তবে দেখা যাবে সেই দুই ম্যাচে আমির খানিকটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমায় বোলিং করেছেন। তিনি উইকেট প্রাপ্তির দিকে খুব একটা নজর দেননি। চেষ্টা করেছেন রান আটকে রাখার। তার সৃষ্টি করা চাপে তিনি নিজেও উইকেট বাগিয়েছেন, সতীর্থরাও উইকেটের দেখা পেয়েছে।
অন্যদিকে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে আমির উইকেট শিকারের আশায় আক্রমণাত্মক বোলিং করেছেন। লেন্থ খাটো করে বিপাকে ফেলতে চেয়েছেন ব্যাটারকে। স্ট্যাম্পের আশেপাশের লাইন-লেন্থে বল করে সেখান থেকে মুভমেন্টের সন্ধান করেছেন। তবে দিনটি নিতান্তই খারাপ কেটেছে বিধায় তাকে থাকতে হয়েছে উইকেট শূন্য।
যদিও আমির এখনও হতে পারেন পাকিস্তানের তুরুপের তাস। সে জন্যে শিরোপা জেতার অভিজ্ঞতা অন্যতম নিয়ামক। তাছাড়া পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে ভারসাম্য এনে দিতে পারেন একমাত্র তিনিই। পাকিস্তানের বর্তমান দলে স্ট্রাইকিং বোলার হিসেবে খেলে থাকেন শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহ। এই দুই জনের মাঝে একজন একটু ডিফেন্সিভ বোলার হতে পারে আশির্বাদ।
ব্যাটারদের উপর চাপ সৃষ্টি করে শাহিন ও নাসিমদের উইকেট প্রাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন মোহাম্মদ আমির। বরাবরই বোলিংয়ে বৈচিত্র্য রয়েছে তার। প্রয়োজনের সময় পিন-পয়েন্ট ইয়োর্কার ছুড়তে পারেন। লেন্থ খাটো করে ব্যাটারকে ভরকে দিতে জানেন। গতি কমিয়ে দ্বিধায় ফেলে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। সেই সাথে বল হাতে মুভমেন্টও পান আমির।
অতএব বহুদিন বাদে জাতীয় দলে ফেরার পর স্রেফ একটি সিরিজ দিয়ে তাকে যাচাই করা সমীচিন নয়। বরং তাকে আরও খানিকটা সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তাকে আরেকটু বাজিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। নতুবা যেই অভিমান থেকে তিনি অবসর নিয়েছিলেন, সে অভিমানে হয়ত একেবারেই নির্বাসনে চলে যাবেন। তাতে করে ক্ষতি পাকিস্তান ক্রিকেটেরই।