সিনেম্যাটিক সৌন্দর্য্য

ইউসুফের জীবন নিয়ে চাইলে ব্লকবাস্টার সিনেমা নির্মান করা যায়। বড় হয়েছেন লাহোরে। তরুণ বয়সে পরিবারে আর্থিক স্বাচ্ছল্য ছিল না বলে, ক্রিকেট প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। বয়স তখন ২০ বছর। ভাওয়ালপুরে রিকশা চালাতেন, স্থানীয় একটা ক্লাব থেকে ডাক না আসলে হয়তো সেটাতেই থিতু হতে হত। কালক্রমে তিনি হয়ে যান, পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।

নব্বই দশকের শেষ ভাগে শুরু তাঁর। এক যুগের লম্বা ক্যারিয়ার। ধর্ম পাল্টেছেন, ইউসুফ ইয়োহানা থেকে হয়েছেন মোহাম্মদ ইউসুফ। নিষিদ্ধ ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে লিগে (আইসিএল) গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন শিকরের টানে। এত কিছু পাল্টে গেলেও তাঁর ব্যাটিংটা কখনোই পাল্টায়নি। ব্যাটটা বরাবরই এক সিনেম্যাটিক সৌন্দর্য্যের আবহ ছড়াতো, ঠিক তাঁর জীবনের মত।

বরং, সময়ের সাথে সাথে হয়েছে আরো পরিপক্ক, আরো স্টাইলিশ, আরো শান্ত-সৌম্য। ক্যারিয়ার যখন শেষ করেছেন – তখন পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের তকমা সাথে ছিল।

তিনি একাধারে যেমন পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে শুদ্ধতার প্রতীক ছিলেন, তেমনি ছিলেন ধৈর্য্যের অবতার, আবার পরিস্থিতি বুঝে দানবীয় আকার ধারণ করতেও জুড়ি ছিল না। তাই তো, নিজের সময়ে যেকোনো ফরম্যাটেই পাকিস্তান দলে তিনি ছিলেন সেরাদের কাতারে।

চাইলে ‘সেরা’ই তাঁকে বলা যেত, বলা যাচ্ছে না। কারণ, ব্যাটিং অর্ডারে তখন ইউনুস খান ও ইনজামাম উল হক নামের আরো দুই পাহাড় ছিলেন।

ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ইউসুফের ক্যারিয়ারে তিনটি ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এটা তাঁর লম্বা ক্যারিয়ারের মুকুটে একেকটা পালক হয়ে টিকে রয়েছে।

প্রথমত, তিনি ১৭ হাজারের ওপর আন্তর্জাতিক রান করেছেন। তিনি পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সামনে আছেন কেবল ইউনুস খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ ও ইনজামাম উল হক। আর ওয়ানডেতে তিনি এই তালিকায় আছেন দুই নম্বরে। ওপরে আছেন কেবল ইনজামাম উল হক। টেস্ট ওয়ানডে মিলে ইউসুফ করে গেছেন ৩৯ টি সেঞ্চুরি।

দ্বিতীয়ত, টেস্টের এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ রান করার নজীরটা এখনো ইউসুফের দখলে। সেটা ছিল ২০০৬ সাল। সেবার রীতিমত ব্র্যাডম্যানিয় গতিতে রান তোলেন ইউসুফ। ১১ টেস্টে করেন ৯৯.৩৩ গড়ে ১৭৮৮ রান। ভেঙে যায় ভিভ রিচার্ডসের ৩০ বছর পুরনো রেকর্ড। সেই বছর নয়টা টেস্ট সেঞ্চুরি করেন ইউসুফ।

তৃতীয়ত, ২০০৭ সালে আইসিসির বর্ষসের টেস্ট খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন। যদিও, সেই বছরই তিনি আইসিএলে চলে যান, লাহোর বাদশাহসের হয়ে খেলতে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চাপে ফিরে আসেন ২০০৮ সালে।

২০০৯ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে সকল সমালোচনা আর বিতর্কের আগুন নিভিয়ে দেন। ব্যাস, আবারও তিনি সবার ওপরে – ওভার দ্য টপ!

ইউসুফের জীবন নিয়ে চাইলে ব্লকবাস্টার সিনেমা নির্মান করা যায়। বড় হয়েছেন লাহোরে তরুণ বয়সে পরিবারে আর্থিক স্বাচ্ছল্য ছিল না বলে, ক্রিকেট প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। বয়স তখন ২০ বছর।

ভাওয়ালপুরে রিকশা চালাতেন, স্থানীয় একটা ক্লাব থেকে ডাক না আসলে হয়তো সেটাতেই থিতু হতে হত। কালক্রমে তিনি হয়ে যান, পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। বোঝাই যাচ্ছে জীবনটা যথেষ্ট রঙিন মসলায় ঠাসা তাঁর। পর্দা কাঁপাতে এমন একটা গল্পই যথেষ্ট। আর এ তো সত্যিকারের জীবন।

তাঁর ক্যারিয়ারের শেষটা হয়েছিল বেশ বাজে ভাবে। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে মাঠে ও মাঠের বাইরে অনেক অনিয়ম করে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। সেবার মার্চে পাঁচ ক্রিকেটারকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ ও জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হন ইউসুফও।

সেই নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেওয়া হয় সে বছরই। ফিরে, আর মাত্র ক’টা ম্যাচই খেলতে পারেন ইউসুফ। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় বলার সুযোগ পাননি তিনি। অপেক্ষায় ছিলেন ডাক আসবে, সেই ডাক আর আদৌ আসেনি। তবে, তারপরও কিংবদন্তি হিসেবে তাঁর মর্যাদা ক্রিকেটের ইতিহাসেই অনন্য। তিনি গেলেও স্মৃতি হয়ে টিকে আছেন তিনি, আছে তাঁর নান্দনিক ব্যাটিংয়ের স্মৃতিও।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...