যত সুন্দর গোলাপ, তত তীক্ষ্ণ কাঁটা

বিরাট কোহলি – সাফল্যের জয়গানের সাথে সাথে কঠোর সমালোচনা যার নিত্যসঙ্গী। ভারতে ক্রিকেট জনপ্রিয় বলে এবং তিনি ক্রিকেটার বলে শুধু নয়  পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারাই সফল হয় তাদেরই জয়গানের থেকেও মাঝে মধ্যেই সমালোচনা হয় বেশি যেহেতু তাদের থেকে সবসময় বেশি আশা করে থাকি, অন্যদের থেকে তো করা হয়না, বিরাট কোহলিও তাঁর ব্যাতিক্রম নয়।

যবে থেকে ক্রিকেটে পদার্পণ করেছেন তবে থেকেই নিজ পরিশ্রমে ধীরে ধীরে নিজেকে বিশ্বের সেরা করে তুলেছেন। সাফল্য, পরিসংখ্যান, রেকর্ড সমৃদ্ধ তথ্য গুলো করায়ত্ত করেছেন নিজের ঝুলিতে। এই ভাবেই শচীন রমেশ টেন্ডুলকার নামক এক অসাধারণের যোগ্য উত্তরসূরী, ব্যাটন রয়েছে সঠিক হাতেই।

যাই হোক তাঁকে নিয়ে সমালোচনা বর্তমানে হয়তো একটু বেশিই হচ্ছে, এবং সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও বেশি লাগছে কারণ এর মাধ্যমে সবার কাছে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। আমি সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না, তবে কিছু বলবার আগে আসুন কিছু তথ্যে চোখ বুলিয়ে নিই যা চলমান সিরিজে ঘটেছে বা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেছে।

আচ্ছা বিরাট কোহলির টানা দু’ইনিংসে বেল উড়ে যাচ্ছে এই জিনিস বারবার দেখা যায় কি,দেখা যায় না। যায় না কেনো বলি আগে কোনোদিন দেখাও যায়নি। অন্যদিকে অফস্পিনার মঈন আলীর বলে ‘ডাক’ আউট ছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম কোনো স্পিনারের বিরুদ্ধে ‘ডাক’।

আর ব্যাটিংয়ে অর্ধশতরান পেরোলেই যেভাবে গত দেড়-দুবছরে থমকে যাচ্ছেন সেটাই বা আমরা আগে কবে দেখেছি (এই প্রসঙ্গে পরে আসছি)। সত্যিই এতো কিছু একসাথে বিরাটের ক্রিকেটীয় জীবনে আগে কোনোদিন আসেনি, হয়তো ওর নিজের ভিতর থেকেও সেই চাপটা ক্রমবর্ধমান হচ্ছে।

আরেকটি বিষয় কেউ লক্ষ্য করেছেন কি না জানিনা, তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই স্পিনারদের বিরুদ্ধে বিরাটের দূর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে লেগ স্পিনাররা বিব্রত করলেও বড়ো ফর্মাটে অফ স্পিনারদের বিরুদ্ধে বেশি বিব্রত বোধ করেছেন এবং সেটা তথ্যেও ধরা পড়েছে।

রেকর্ড ঘাঁটতে গিয়ে দেখছিলাম অভিষেকের পর উপমহাদেশের মাটিতে বিপক্ষ দলে একাদশে অফ স্পিনার রয়েছে এমন  টেস্ট গুলির ৫০-৬০ শতাংশ ইনিংসেই অফ স্পিনারের শিকার হয়েছেন। নাথান লিঁও, গ্রায়েম সোয়ানদের কথা ছেড়েই দিলাম শ্রীলঙ্কার অনামী থারিন্দু কৌশল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেন সিলিংফোর্ড কিংবা নিউজিল্যান্ডের জিতেন প্যাটেল, ক্রেগ একাধিকবার রয়েছে এমনকি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও একটি টেস্টে মুখোমুখি হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ডেন পিয়েটও আছেন।

হ্যাঁ, তাদের বিরুদ্ধে তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডমিনেট করে খেলেছেন কিন্তু মাঝে মাঝেই আউট হওয়ার ধরনটা খারাপ লেগেছে। এইসব কাটিয়ে তিনি আবার তাদের ডমিনেট করবেন আরও বেশি করে আর সেই দিন আসতে দেরী নেই।।

যাইহোক এইসব ছাড়ুন, এবার আসি আসল কথায়- বিরাটের শেষ কয়েকটি বড়ো ইনিংসকে শতরানে পরিনত করতে না পারার ঘটনায়। লক্ষ্য করবেন ইনিংস গুলো ৬০/৭০/৮০ তে আটকে গেলেও কতটা নিখুঁত, কতটা আভিজাত্য পূর্ণ এক কথায় চোখের আরাম। এই সিরিজের বড়ো দুটো স্কোর গুলো দেখুন, একটাও চান্স দেয়নি, আগের গুলোও তেমনই।

কিন্তু, হঠাৎ কি যে হয়ে যায়, একটা অসাধারণ বল বিপক্ষের বোলারের হাত থেকে বেরিয়ে আসে, কিছুই করবার থাকে এমনকি বিরাটের কাছেও। খুব খারাপ লাগে বারবার নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে কোহলির মাথা নিচু করে প্যাভিলিয়নে ফিরতে দেখে কিন্তু এতে কি কোহলির গরিমা কিংবা মনোমুগ্ধ করার ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়, কোনমতেই যায়না।

সাধুবাদ জানানোর সাথে সাথে তার সমালোচনা করি কেউ কেউ, কেনো করি তা প্রথমেই বলেছি, তার থেকে আরও বেশি না পাওয়ার হতাশায়। আর আমাদের সমালোচনাতেই আপনার কি বা আসে যায়, যাবেও না কারণ মাঠে নেমে আপনিই আমাদের গর্বিত করেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে না হয় আমরা একটু ভাঁউ খাওয়ার চেষ্টা করলাম।

এতোদিন ভালো হয়েছে আরও ভালো হবে ভবিষ্যতে, তোমার একজন ক্ষুদ্র কট্টর তথাকথিত সমালোচকের এই কামনা। আরো বিরাট হবেন কোহলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link