পরাজিতদের পানশালায়

‘হার জিত নয় অংশগ্রহণই মুখ্য’ কথাটি বলেছিলেন আধুনিক অলিম্পিকের জনক ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তা। অলিম্পিকের মতো মেগা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করাই যেন বিশাল বড় এক অর্জন। হার আর জিত যেকোন খেলারই অংশ তাই বলে কি হেরে যাওয়ার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াও তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এই যে ক্রিকেটের ময়দানে হার-জিত লেগেই রয়েছে। তবুও দলগুলো খেলে চলেছে ক্রিকেট। নিজেদেরকে আরো ঝালিয়ে নিতে। একসময়ে হার গুলোকে বড় বড় সব জয়ে রুপান্তরিত করতে।

‘হার জিত নয় অংশগ্রহণই মুখ্য’ কথাটি বলেছিলেন আধুনিক অলিম্পিকের জনক ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তা। অলিম্পিকের মতো মেগা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করাই যেন বিশাল বড় এক অর্জন। হার আর জিত যেকোন খেলারই অংশ তাই বলে কি হেরে যাওয়ার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াও তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এই যে ক্রিকেটের ময়দানে হার-জিত লেগেই রয়েছে। তবুও দলগুলো খেলে চলেছে ক্রিকেট। নিজেদেরকে আরো ঝালিয়ে নিতে। একসময়ে হার গুলোকে বড় বড় সব জয়ে রুপান্তরিত করতে।

তবে এই যে হারের পরিসংখ্যানগুলো কিন্তু রয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটের ইতিহাসে। সেইখানটায় পরিবর্তন আনার তো কোন উপায় নেই। সেই পরিসংখ্যান ঘেটেই আজকে আলোচনায় থাকছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক সংখ্যক হারের পরাজয়ের হিসেব-নিকেশ।

  • ইংল্যান্ড 

হারের সংখ্যার বিচারে আজকের তালিকায় সবার আগে আসা নামটি ইংল্যান্ড। ,ক্রিকেটের প্রবর্তক হওয়ার সুবাদে দেশটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে সবচেয়ে বেশি।

সেই দিক বিবেচনায় তাঁদের হারের সংখ্যাটাও বেশ বেশি। সেই ১৯৫৩ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ হেরেছে মোট ৭১৭টি। যার মধ্যে রয়েছে ৩১৫টি টেস্ট, ৩৩৯টি ওয়ানডে ও ৬৩টি টি-টোয়েন্টি।

  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৯৭০ থেকে গোটা দুই দশক বিশ্বক্রিকেটে দাপটের সাথে খেলেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জ মিলে করা দলটি এযাবৎকালে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হেরেছে ৬৭১টি।

কিন্তু, বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বাদে আর কোন ফরম্যাটে দেখা মিলে না সেই দাপটের। দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দল টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ হেরেছে ৭৯টি। টেস্ট ও ওয়ানডেতে হেরেছে যথাক্রমে ২০৪টি ও ৩৮৮টি।

  • ভারত

হারের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এই সময়ে অন্যতম ক্রিকেটীয় পরাশক্তি ভারত। পরাশক্তি হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ লজ্জাজনক হারের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো ভারতকে। সেই সব হার মিলিয়ে তাঁদের মোট হারের সংখ্যা ৬৫৫টি। সর্বাধিক হার এসেছে ওয়ানডেতে। সংখ্যাটি ৪৩১।

অথচ ভারত দুইবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী দল। অন্যদিকে লাল বলের ক্রিকেটে তাঁরা হেরেছেন ১৭৩টি ম্যাচ এবং টি-টোয়েন্টিতে তাঁদের হার ৫১টি ম্যাচে।

  • অস্ট্রেলিয়া

ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলুড়ে দল অস্ট্রেলিয়া। একসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো ছিলো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে এখন তা সচারচরই ঘটছে ক্রিকেট ময়দানে।

পাঁচ বারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী দলটি এখন অবধি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ম্যাচ হেরেছে  ৬২৯টি। টেস্ট ও ওয়ানডেতে দলটি হেরেছে যথাক্রমে ২২৬টি ও ৩৩৪টি ম্যাচ। অন্যদিকে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘরে তোলা দলটির এই ফরম্যাটে হারের সংখ্যা ৬৯টি।

  • শ্রীলঙ্কা

দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেটের এক সময়কার পরাশক্তি দল শ্রীলঙ্কা বর্তমান সময়ে পার করছে ট্রানজিশন পিরিয়ড। এই সময়ে তাঁদেরকে বরণ করে নিতে হচ্ছে হার।

এছাড়াও প্রায় ৬২২টি ম্যাচ হেরেছে লঙ্কানরা তাঁদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে। ১১৩টি টেস্ট ম্যাচ হারার পাশাপাশি ৪৩২টি ওয়ানডে ম্যাচও হেরেছে দলটি। অন্যদিকে ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলা দল ৭৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হেরেছে।

  • নিউজিল্যান্ড

টানা তিনটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের হারার থেকে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারেন বলুন! ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এর তিনটি মেগা ইভেন্টের ফাইনাল হারা দল নিউজিল্যান্ড। বর্তমান সময়ে সব ফরম্যাটে তাঁদের দাপটটা স্পষ্ট। কিন্তু সব সময়ই এমন দাপুটে দল ছিল না নিউজিল্যান্ড।

স্বাভাবিকভাবেই তাঁদেরকে হারতে হয়েছে বহু ম্যাচ। টেস্টে ১৭৭টি, ওয়ানডেতে ৩৭৪টি ও টি-টোয়েন্টিতে ৭০টি ম্যাচ হারা দলের মোট হারের সংখ্যা ৬২১।

  • পাকিস্তান

একবার করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দল পাকিস্তান। তাঁরা এযাবৎকালে ম্যাচ হেরেছে সর্বোমোট ৬১৫টি। বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে চির প্রতিদ্বন্দি ভারতকে না হারাতে পারার আফসোস ঘুচিয়েছে দলটি ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

তবে দু:খজনকভাবে এই আসরের সেমিফাইনাল থেকে দলটি বাদ হয়ে যায়। সেই পরাজয় সহ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দলটি হেরেছে ৬৪টি ম্যাচ। এছাড়া টেস্টে হেরেছে ১৩৪টি ম্যাচ। পাশাপাশি ৪১৭টি ওয়ানডে ম্যাচ হারার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁদের।

  • জিম্বাবুয়ে 

ক্রিকেট বিশ্বে প্রদীপের ন্যায় নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা এক দলের পরিণত হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দল জিম্বাবুয়ে। দারুণ শোচনীয় এক সময় পার করছে দলটি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোমোট ৫২৫টি ম্যাচ হেরেছে দলটি। যার অধিকাংশই বিগত কয়েক বছরের রেকর্ড। টেস্টে ৭৪টি ম্যাচ হারার সাথে ওয়ানডেতেও ৩৮১টি ম্যাচ হেরেছে দলটি। তাছাড়া ৭০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও হেরেছে জিম্বাবুয়ে।

  • দক্ষিণ আফ্রিকা

ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় আক্ষেপটা হয়ত বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্ট না জিততে পারা।

সেই অংশটুকু বাদ দিলে তাঁদেরকে শক্তিশালী এক দল হিসেবে বিবেচনা করার বিকল্প নেই। কেননা এখন অবধি দলটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ হেরেছে ৪৩৪টি। টেস্টে হারের সংখ্যাটি ১৫৩ ও ওয়ানডেতে ২২১। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ হেরেছে ৬০টি ম্যাচে।

  • বাংলাদেশ

হারের তালিকায় সবার নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। প্রায় দুই যুগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পার করে দেওয়া দল বাংলাদেশ বিশ্বক্রিকেটে এখনও নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে। তবে ২০১১ বিশ্বকাপের পরবর্তী সময়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে ক্রিকেট বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিয়েছে দলটি।

সর্বাধিক হারের তালিকায় দশ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের হারের সংখ্যা ৪১৮টি। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির দূর্বলতার কারণে এই দুই ফরম্যাটে দলটির হার যথাক্রমে ৯৫টি ও ৭৮টি। কিন্তু ওয়ানডেতেও হারের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। ২৪৫টি ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...