সোনালী হাঁসের রাজা

ক্রিকেট হলো রানের খেলা। এখানে সকল ক্রিকেটারই চায় রান করতে। কিন্তু সবাই কি পারে রান করতে? না, সবার জন্য রান করা সম্ভব হয়ে উঠে না। কোনো কোনো ব্যাটসম্যান দলের সংগ্রহে কোনো রান যোগ না করেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। কেউ কেউ ফিরতে বাধ্য হন প্রথম বলেই।

ক্রিকেট হলো রানের খেলা। এখানে সকল ক্রিকেটারই চায় রান করতে। কিন্তু সবাই কি পারে রান করতে? না, সবার জন্য রান করা সম্ভব হয়ে উঠে না। কোনো কোনো ব্যাটসম্যান দলের সংগ্রহে কোনো রান যোগ না করেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। কেউ কেউ ফিরতে বাধ্য হন প্রথম বলেই।

যদি ব্যাটসম্যান তাঁর প্রথম বলেই আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যায় তাহলে সেটাকে বলা হয় গোল্ডেন ডাক। প্রথাগত ব্যাটসম্যানরা ডাক মারেন না এটা ভাবা ভুল। ব্যাটিং একদমই পারেননা – এমন ব্যাটসম্যানরাই বেশি ডাক মারার শীর্ষে অবস্থান করছেন।

ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই রয়েছে এমন কিছু ব্যাটসম্যান যারা গোল্ডেন ডাক অর্থাৎ প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন। ফরম্যাট ভেদে সেই তালিকায় এবার চোখ বুলানো যাক

টেস্ট

শুরুতেই টেস্ট ক্রিকেট। টেস্ট হল ধৈর্য্যের খেলা। ইনিংসকে লম্বা করতে এখানে অনেক সময় টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানদেরও ধৈর্য্য ধরতে হয়। কিন্তু, অনেকেরই ধৈর্য্যের দৌঁড় প্রথম বল অবধিই সীমাবদ্ধ।

  • মুত্তিয়া মুরালিধরন (শ্রীলঙ্কা)

টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার হলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। টেস্টে তাঁর শিকার ৮০০ উইকেট। তিনি ছিলেন মূলত একজন স্পিনার। ব্যাত হাতে তাঁর উপর দলের কোনো প্রত্যাশা কখনই ছিলো না। তিনি ক্যারিয়ারে মোট ১৪ বার গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়েছেন।

  • রঙ্গনা হেরাথ (শ্রীলঙ্কা)

রঙ্গনা হেরাথ শ্রীলংকার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলারদের মধ্যে একজন। মুরালির ছায়ায় ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলেছেন। মুরালির বিদায়ের পর ক্যারিয়ারের পূর্নজন্ম হয় তাঁর। এরপর বল হাতে বেশ স্বর্ণালী সময় কাটিয়েছন তিনি। তাঁর উপরও দল কখনো ব্যাট হাতে ভালো কিছু করবেন এমন প্রত্যাশা করেনি। হেরাথ ক্যারিয়ারে ১১ বার প্রথম বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন।

  • কোর্টনি ওয়ালশ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলার হলেন কোর্টনি ওয়ালশ। তাঁর পেস আক্রমণ সামলানোর জন্য ভয়ে জরাজীর্ন হয়ে থাকতো ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটসম্যান হিসেবে কখনোই ভালো ছিলেন না ওয়ালশ। ক্যারিয়ারের মোট ১০ বার প্রথম বলেই আউট হয়েছেন তিনি।

  • ক্রিস মার্টিন (নিউজিল্যান্ড)

ক্রিস মার্টিন ছিলেন নিউজিল্যান্ডের পেসার। এই কিউই ব্যাটসম্যান খেলেছেন ৭১ টেস্ট। বোলার হিসেবে ছিলেন বেশ সফল। ৭১ টেস্ট ৩৬ বার শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন তিনি। এর মধ্যে ৯ বার প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।

  • স্টিভ হ্যামির্সন (ইংল্যান্ড)

ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পেসার ছিলেন স্টিভ হ্যামির্সন। তিনি টেস্ট ক্যারিয়ারে মোট ২১ বার শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন। এর মধ্যে ৯ বার প্রথম বলেই আউট হবার কীর্তি গড়েন তিনি।

ওয়ানডে

ওয়ানডে সংস্করণ হলো ক্রিকেটের সাদা বলের দীর্ঘতম সংস্করণ। এই সংস্করণেও বেশ কিছউ কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান এবং বোলারকে দেখা গেছে। ক্রিকেটের এই সংস্করণেও প্রথম বলে সাজ ঘরে ফেরা ক্রিকেটারের সংখ্যা কম নয়। এই তালিকায় উপরের দিকে অবস্থান করছেন বেশ কিছু কিংবদন্তি বোলার।

  • লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)

রঙিন পোশাকে অন্যতম সেরা বোলার ছিলেন লাসিথ মালিঙ্গা। তিনি বিখ্যাত ছিলেন তাঁর মারাত্মক সব ইয়র্কারের জন্য। এছাড়া অদ্ভূত বোলিং অ্যাকশনের জন্যও বেশ পরিচিত ছিলো তাঁর। মালিঙ্গা বোলিং এ যতটা কার্যকরী ছিলেন, ব্যাটিং ছিলো তাঁর পুরোটাই উল্টো। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মোট ১৪ বার প্রথম বলেই আউট হন তিনি।

  • শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

শহীদ আফ্রিদির ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিলো একজন ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাঁর মারমুখি ব্যাটিং এর জন্য পরিচিত ছিলেন বুম বুম আফ্রিদি নামে। ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি পরিনত হন একজন স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে। ওয়ানডে ক্রিকেটে মোট ১২ বার প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।

  • জাভাগাল শ্রীনাথ (ভারত)

জাভাগাল শ্রীনাথের কথা আসলেই মনে হবে একজন ম্যাচ রেফারির কথা।ম্যাচ রেফারির আগে তিনি ছিলেন একজন ক্রিকেটার। একসময় ভারতের বোলিং লাইন আপকে নেতৃত্ব দেয়া এই পেসার ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। এর মধ্যে প্রথম বলেই সাজ ঘরে ফেরার রেকর্ড ছিলো ১১ বার।

  • মুত্তিয়া মুরালিধরন (শ্রীলঙ্কা)

টেস্ট ক্রিকেটের মত এখানেও প্রথম বলে সাজ ঘরে ফেরার তালিকায় রয়েছেন মুরালিধরন। তিনি ওয়ানডে মোট ১১ বার প্রথম বলে শূন্য রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি।

  • মঈন খান (পাকিস্তান)

 

৯০ এর দশকে পাকিস্তানের লোয়ার মিডল অর্ডারের ভরসার নাম ছিলেন মঈন খান। পাকিস্তানের এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান অনেকবারই শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। এর মধ্যে ১১ বার প্রথম বলেই আউট হয়েছেন তিনি।

টি-টোয়েন্টি

ক্রিকেটের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম এবং নবীন সংস্করণ হলো টি-টোয়েন্টি। এই ফরম্যাটেও বেশ কিছু ক্রিকেটার অনেকবার করেই প্রথম বলেই আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন। এই তালিকার শীর্ষে বোলারের পাশাপাশি অলরাউন্ডার এবং কিছু ব্যাটসম্যানও আছে।

  • উমর আকমল (পাকিস্তান)

উমর আকমল; পাকিস্তানের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ছিলেন উমর আকমল। মাঠের বাইরের বিভিন্ন কারণ এবং ফর্মহীনতার কারণে এই মুহুর্তে জাতীয় দলের বাইরে আছেন। টি_টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি প্রথম বলে আউট হবার রেকর্ড গড়েন। ক্যারিয়ারে মোট ৬ বার প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি।

  • তিলকারত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলংকার অন্যতম সেরা ওপেনার ব্যাটসম্যান ছিলেন তিলকারত্নে দিলশান। উইকেট কিপিং, বোলিং, ফিল্ডিং এবং বোলিং সব কিছুই করতে পারতেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ৫ বার প্রথম বলেই আউট হয়েছেন তিনি।

  • শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

ওয়ানডে ক্রিকেটের মত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গোল্ডেন ডাক পাওয়া ক্রিকেটারদের শীর্ষ তালিকায় নাম আছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাঁচবার প্রথম বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি।

  • মাশরাফি বিন মুর্তজা (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পেসারদের মধ্যে অন্যতম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনিও ৫ বার প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন।

  • মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)

হাফিজ, পকিস্তানের অন্যতম সেরা ওপেনার এবং অলরাউন্ডার। সময়ের সাথে সাথে বেশ ভালো পারফর্ম করছেন তিনি। তিনিও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৪ বার প্রথম বলেই সাজ ঘরে ফিরেছেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...