ভুতুড়ে অ্যাকশনে যায় চেনা!

ক্রিকেটে প্রায়শই অদ্ভুতুড়ে বোলিং অ্যাকশনের বোলারদের দেখা যায়। এসব অপ্রচলিত অ্যাকশনে বল নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হলেও কার্যকরী এবং এ ধরনের বোলাররা একাই কোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। অপ্রচলিত অ্যাকশনের কারণে তাদের ইনজুরিপ্রবণতা তুলনামূলক বেশি এবং এজন্য তাদের ভালোভাবে পরিচর্যা করা জরুরি।

অ্যাকশন অন্যরকম হওয়ায় তাঁরা কিছু বাড়তি সুবিধাও পান। তাঁদের স্বকীয় বোলিং অ্যাকশন ব্যাটসমানদের শট খেলতে দ্বিধার মাঝে ফেলে দেয়। আসুন দেখা নেয়া যাক অপ্রচলিত অ্যাকশনে বল করা পাঁচ জনপ্রিয় ক্রিকেটারকে।

  • মুত্তিয়া মুরালিধরন (শ্রীলঙ্কা)

তর্কসাপেক্ষে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। লঙ্কান এই অফস্পিনার টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বোলার হিসেবে ৮০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন। মাত্র ১৩৩ টেস্টে ২২.৭ গড়ে এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। তার অদ্ভুত অ্যাকশনের কারণে ব্যাটসম্যান কখনোই বুঝতে পারতেন নাহ তিনি কোন ডেলিভারিটি করছেন।

মুরালিধরনের বোলিং অ্যাকশন সবসময়ই আইসিসির নজরে ছিল এবং কনুই ১৫ ডিগ্রীর বেশি বাঁকার অজুহাতে তাকে বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধও করা হয়। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটেও সমান কার্যকরী ছিলেন তিনি। ৩৫০ ম্যাচে মাত্র ২৪.১ গড়ে ৫৩৪ উইকেট শিকার করেন তিনি। বর্তমানে তিনি আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বোলিং কোচ হিসেবে নিযুক্ত আছেন।

  • পল অ্যাডামস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান চায়নাম্যান বোলার পল অ্যাডামস সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে অদ্ভুত অ্যাকশনের জনক। প্রোটিয়াদের হয়ে ৪৫ টেস্ট এবং ২৪ টি একদিনের ম্যাচ খেলে যথাক্রমে ১৩৪ এবং ২৯ উইকেট সংগ্রহ করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে তিনি অত্যন্ত কার্যকরী বোলার ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও দারুণ কার্যকরী ছিলেন পল অ্যাডামস।

ছোট রানআপে দৌড়ে এসে বল করার ঠিক আগ মুহুর্তে একটা ছোট লাফ দিয়ে শরীরকে বাঁকিয়ে ফেলতেন তিনি। বল ডেলিভারি করার ঠিক আগেও মাথাটা ঝুঁকে রাখতেন নিচের দিকে। বলা যায় ব্যাটসম্যানের অবস্থান না দেখেই বল করতেন তিনি।

  • লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)

ক্রিকেটে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গা তার স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের জন্য পরিচিত ছিলেন ‘দ্য স্লিঙ্গার’ নামে। ডেথ ওভারে দারুণ গতির ইয়র্কারের পাশাপাশি স্লোয়ারে ব্যাটসমানদের বিভ্রান্ত করতে জুড়ি নেই এই লংকান পেসারের।

ইতোমধ্যেই টেস্ট এবং ওয়ানডে থেকে অবসর নিলেও ধারণা করা হচ্ছে বছর শেষে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন তিনি। তার সাইডআর্ম অ্যাকশনে তিনি স্বাভাবিকের চাইতে কিছুটা নিচে থেকে বল ডেলিভারি করতেন, ফলে ব্যাটসম্যানরা সহজেই বিভ্রান্ত হতেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব ধরনের ফরম্যাট মিলিয়ে ৫৪৬ উইকেটে শিকার করেন মালিঙ্গা।

  • সোহেল তানভির (পাকিস্তান)

২০০৭ বিশ্বকাপে সর্বপ্রথম ক্রিকেট বিশ্বের নজরে আসেন সোহেল তানভির। কিছুটা অদ্ভুত অ্যাকশনে দারুণ গতিতে করা তার বাঁহাতি ফাস্ট বোলিংয়ে প্রলুব্ধ হয়ে ব্যাটসম্যানরা সহজেই নিজের উইকেট ছেড়ে আসেন। টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হিসেবে খ্যাত তানভির বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোর নিয়মিত মুখ।

৩৬ বছর বয়সী এক পেসারের অদ্ভুত অ্যাকশন এখনো সমান কার্যকরী। সোহেল তানভির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩০ উইকেট শিকার করেন এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

  • জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)

অভিষেকের পর থেকেই ভারতীয় পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন জাসপ্রীত বুমরাহ। বর্তমানে তিন ফরম্যাটেই বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার তিনি। বুমরাহর অদ্ভুত অ্যাকশন তাকে ছোট রানআপে ভালো জায়গায় নিয়মিত দারুণ গতিতে বল করতে সাহায্য করে।

গত কয়েকবছরে বুমরাহ নিজেকে ডেথ ওভারে নিজেকে বিশ্বের সেরা বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি তুলনামূলক উঁচু থেকে বল ডেলিভারি করে উইকেট থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link