টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাওয়ার প্লের ব্যবহার করতে পারাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ছয় ওভার ওপেনারদের জন্য ঝড়ো ইনিংস খেলার সুযোগও থাকে। ম্যাচের শুরুতেই দলকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পারেন ওপেনাররা। তবে বাংলাদেশের চিত্রটা উলটা। স্লগ ওভার কিংবা পাওয়ার প্লে কোনটারই ব্যবহার করতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা। এমন অবস্থায় আলোর ঝলকানি দেখাচ্ছেন বাংলাদেশেরই এক ব্যাটসম্যান।
ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলা মুনিম শাহরিয়ার দেখাচ্ছেন কী করে পাওয়ার প্লের ব্যবহারটা করতে হয়। বরিশালের মাত্র ৪ ম্যাচে সুযোগ পেয়েই নিজের জাতটা চিনিয়েছেন। এরমধ্যে তিন ম্যাচেই দলকে ঝড়ো শুরু এনে দিয়েছেন। মুনিম শাহরিয়ায়ের কল্যাণে ম্যাচের শুরুতেই অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে বরিশাল। বাংলাদেশের খুব কম ব্যাটসম্যানের মধ্যেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই মেজাজটা আছে।
মুনিম শাহরিয়ারের ব্যাটিং দেখে একেবারে পরিপূর্ণ পাওয়ার হিটারই মনে হয়। পাওয়ার প্লে ব্যবহার করে বল গুলো সীমানা ছাড়া করছেন। ফুটওয়ার্কের খুব বেশি বালাই নেই। তবে নিজের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাটা খুব ভালো বোঝেন। নিজের স্লটে বল পেলে সেগুলোকে কোনভাবেই ছাড়া দেননা। অন্তত বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের মধ্যে এই পাওয়ার হিটিং অ্যাবিলিটিটা পাওয়া যায়না। মুনিমের ব্যাটিং দেখে মনে হয় যেন ক্যারিবীয় কোন ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছে।
এবার বিপিএলের ইনিংস গুলোর পর মুনিমকে নিয়ে আলোচনাটা জোর পেয়েছে। তবে মুনিম তাঁর এই যোগ্যতাটা দেখিয়েছিলেন গতবছর ডিপিএলে। সেই আসরে আবাহনীর হয়ে ওপেন করেছিলেন। ১৪ ম্যাচে ৩৫৫ রান করা মুনিম ব্যাটিং করেছিলেন ১৪৩.১৪ স্ট্রাইকরেটে।
আর বিপিএলে মুনিম যেন আরো বিধ্বংসী। এখন পর্যন্ত চার ম্যাচ খেলে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৩৪ রান। ব্যাটিং করেছেন ৩৩.৫০ গড়ে। তবে এই পরিসংখ্যান দিয়ে মুনিমের গুরত্বটা বোঝা যাচ্ছেনা। এই ১৩৪ রান মুনিম করেছেন ১৬৭.৫০ স্ট্রাইকরেটে। আজও ১৪৮.০০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করে মাত্র ২৫ বলে করেছেন ৩৭ রান।
এই বিপিএলে কমপক্ষে ১০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন মুনিম শাহরিয়ার। এই তালিকার প্রথম পাঁচ জনের মধ্যেও নেই আর কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। এখানেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুনিমের গুরুত্বটা বোঝা যায়।
অথচ বিপিএলের ড্রাফটে তাঁকে কোন দল নেয়ার আগ্রহই দেখায়নি। দল না পেয়ে মুনিম যখন হতাশার চাদরে তখন শেষে বরিশাল তাঁকে দলে ডাকে। হয়তো আবহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন তাঁর এই শিষ্যের কথা মাথায় রেখেছিলেন। তবে এতেই মুনিমের গল্পটা শেষ হয় না। বরিশালের হয়েও ম্যাচ পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রথম সুযোগ পান।
ওপেনার নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংকটটা অনেকদিনের। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এই সংকটটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করেছেন নাঈম শেখ ও সাইফ হাসান। নাঈম শেখ কিছুটা রান করেছেন বটে তবে তাঁর স্ট্রাইকরেট হতাশাজনক। আর সাইফ হাসান এই ফরম্যাটেও ব্যর্থ্য হয়েছেন।
ফলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের দুজন ওপেনারের জায়গাই খালি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে কারা ওপেন করবেন সেটি নির্বাচকদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার ব্যাপার। এমন অবস্থায় জাতীয় দলের দরজাটা বেশ ভালো ভাবেই টোকাচ্ছেন এই ব্যাটসম্যান। বলা ভালো, দরজাটা তিনি ভাঙতেই চাইছেন। ফলে মুনিমকে চাইলেই বাজিয়ে দেখতে পারে বাংলাদেশ। মুনিমকে স্বাধীনভাবে খেলতে দিলে বাংলাদেশকে অন্তত একটা ঝড়ো শুরু এনে দিতে পারেন তিনি।