মুশফিক হাসান, সম্ভাবনার দুয়ার খুলে চমক দেখাচ্ছেন বিপিএলে

এক বল আগেই সাকিব আল হাসান ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে একটা চার আদায় করে নিলেন। এক বল পরেই মুশফিক হাসান তুলে নিলেন সাকিবের উইকেট। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বিপক্ষে একটা মধুর প্রতিশোধ নেওয়া সুযোগ তো আর সচারচার মেলে না। তবে মুশফিক সেদিক থেকে ভাগ্যবান কিংবা প্রতিভাবান।

তবে তার থেকেও বড় বিষয়, দলের জন্যে হুমকি হয়ে ওঠা জুটির পতনও ঘটেছে তরুণ এই পেসারের হাত ধরেই। তাতে করেই ডানহাতি এই পেসারের সক্ষমতার চিত্র ফুটে ওঠে। অন্তত প্রমাণিত হয়, জাতীয় দলের আশেপাশে থাকাটা নেহায়েত অমূলক নয়।

এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মুশফিক হাসান অবশ্য খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তারকায় ঠাসা একটি দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এই দলের একাদশে সুযোগটা সহসাই মেলে না। নদীর একূল ভাঙলে নাকি ওকূল গড়ে ওঠে। ঠিক তেমনটাই ঘটেছে মুশফিকের ক্ষেত্রে।

মাথায় বল লেগে আহত দলের অন্যতম সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। তার পরিবর্তেই একাদশে সুযোগ মিলেছিল মুশফিকের। গত ম্যাচটা মোটেও ভাল কাটেনি। ৩২ রান খরচায় একটিমাত্র উইকেটই পেয়েছিলেন তরুণ এই পেসার। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে একটু ছন্দ পেতে সমস্যা হওয়ারই কথা।

দিন বদলাতেই নিজের ছন্দটা মুশফিক খুঁজে পেয়েছেন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। মাত্র ১৮ রান দিয়েছেন তিনি কোটার ৪ ওভার পূর্ণ করবার পর। তার নামের পাশে যুক্ত হয়েছে তিনটি উইকেট। এদিন অবশ্য রংপুর রাইডার্স পড়েছিল দারুণ বিপাকে। শুরুতে ৪ উইকেট হারিয়ে নড়বড়ে শুরু করে ‘টেবিল টপার’ রংপুর।

প্রাথমিক সেই ধাক্কা সামলে উঠতে শুরু করেছিল তারা জিমি নিশাম ও সাকিবের ব্যাটে ভর করেই। ২৯ রানের সেই পার্টনারশিপে চিড় ধরান মুশফিক। ফুলার লেন্থের বলটায় রুম বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে মুশফিকের ক্রস সিমের সেই বলটায় সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হন তিনি। তাতে করে মিড অফে সহজ এক ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাহাতি অলরাউন্ডার।

এরপর রংপুরের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার শামীম হোসেনকেও আউট করেন মুশফিক। অফ সাইডে সরে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে নিজের পছন্দের শট খেলার প্রস্তুতিই নিয়েছিলেন শামীম। বলটাকে সোজা স্ট্যাম্প বরাবরই রেখেছিলেন মুশফিক। তাতে করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হয়ে যান শামীম। রিভিউ নিয়েও তাতে কোন কাজের কাজ হয়নি।

এরপর আবু হায়দার রনিকে নিজের উইকেটে পরিণত করেন মুশফিক। তাতেই তিনটি উইকেট যুক্ত হয় তার নামের পাশে। তাছাড়া দারুণ লাইন লেন্থে দূর্দান্ত বল করে গেছেন তিনি পুরোটা সময় জুড়ে। দুইটি চার ছাড়া তার বলে কোন ছক্কা হাঁকাতে পারেনি রংপুরের ব্যাটাররা। সেটাই যে মুশফিকের মত তরুণ বোলারদের সার্থকতা।

দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় দলের আশেপাশে রয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের পেসারদের সংক্ষিপ্ত পাইপলাইনের অন্যতম সম্ভাবনাময় এক সদস্য তিনি। এমন পারফরমেন্স সেই সম্ভাবনার প্রদীপে বরং জ্বালানি বাড়ায়। মুশফিকদেরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link